• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
২টি করে শিশুধর্ষণ

‘সবুজ ঘাসে রক্তের দাগ প্রতিদিন’


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৫, ২০১৭, ১০:৪৬ এএম
‘সবুজ ঘাসে রক্তের দাগ প্রতিদিন’

ঢাকা : সবুজ ঘাসে রক্তের দাগ। বিধ্বস্ত জীবন। হায়েনার অট্টহাসিতে ভীত নারী। একের পর এক ঘটছে ধর্ষণ-নির্যাতন। নতুন উপসর্গ নৃসংসতা। নারীর প্রতি মাত্রা ছাড়া নির্মমতায় হতবাক বিবেকবান মানুষ।

সিলেটের খাদিজা আক্তার নার্গিস, চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্কুলছাত্রী কনিকা ঘোষ, ঢাকার সুরাইয়া আক্তার রিশা, কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনু, মাদারীপুরের নিতু মণ্ডল, চট্টগ্রামের এসপির স্ত্রী মিতু, মিরপুরের আফসানা, দিনাজপুরের পার্বতীপুরের পূজা দাস- এরপর কে? এই প্রশ্ন আজ সবার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা, রাজনৈতিক প্রভাব ও নেতিবাচক সামাজিক মনোভাবের কারণে একের পর এক নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তবে নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক নৃশংসতার ঘটনাই আলোচিত হচ্ছে বেশি।

সংশ্লিষ্টদের অভিমত, বিচারহীনতায় দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারী ও শিশু নির্যাতন। নারী নির্যাতনের ধরন পাল্টানোর পাশাপাশি এর সহিংসতাও দিন দিন বাড়ছে। বিশেষত মেয়েশিশুর ক্ষেত্রে এর ভয়াবহতা আরও বেশি। ২০১৬ সালে মোট নারী নির্যাতনের মধ্যে মেয়েশিশু নির্যাতনের হার ২০ শতাংশ। এর মধ্যে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি (৬০ দশমিক ৬৩ শতাংশ) নির্যাতনের শিকার। ১৮ বছরের নিচে প্রতিদিন গড়ে ২ (১ দশমিক ৭) জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে ব্র্যাক সেন্টারে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি আয়োজিত ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে ডাটাবেজের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে কর্মসূচির প্রধান ফারহানা হাফিজ বলেন, দেশের ৫৫টি জেলার ১২ হাজারেরও বেশি কমিউনিটিভিত্তিক নারী উন্নয়ন সংগঠন ‘পল্লী সমাজ’ এবং ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচির বিভিন্ন প্লাটফর্মের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পাওয়া গত বছরের নারী ও শিশু নির্যাতনের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ ডাটাবেজ তৈরি করেছেন।

ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন, জেন্টার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটির পরিচালক আন্না মিনজ’র সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জের পরিচালক কেএএম মোর্শেদ।

গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা শারমীন বেনু। আলোচনায় অংশ নেন মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ গবেষক রুচিরা তাবাসসুম নভেদ, পুলিশের উপকমিশনার ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের প্রধান ফরিদা ইয়াসমিন ও একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবু। এ ছাড়া ব্র্যাকের মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিনিধি মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

ফারহানা হাফিজ বলেন, গবেষণায় গত বছরের ৫৫ জেলায় ৭ হাজার ৪৮৯ নারী ও মেয়েশিশু নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। গড়ে প্রতি মাসে ৬২৪টি, প্রতিদিন ২০ দশমিক ৫টি এবং প্রতি জেলায় মাসে ১১ দশমিক ৩৫টি নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। মোট নথিভুক্ত ঘটনার ৬৭ শতাংশ শারীরিক নির্যাতন, ১৯ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ১৪ শতাংশ মানসিক নির্যাতন হয়েছে।

৫৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে পরিবারের সদস্যরা জানিয়ে তিনি বলেন, পারিবারিক সহিংসতা ও নির্যাতন বেড়েই চলছে। নারীরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার বেশি হলেও শিশুদের নির্যাতনের মধ্যে সব থেকে বেশি ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মাহমুদা শারমীন বেনু বলেন, নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সমবেত সোচ্চার হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আইন দিয়ে কখনোই এমন বর্বর ঘটনা প্রতিরোধ করা যাবে না। দেশে নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বহু আইন রয়েছে, তার পরও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।

পারিবারিকভাবেই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এখন নারী ও শিশু নির্যাতনের ধরন পাল্টাচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, নির্যাতন প্রতিরোধ কিংবা বন্ধে সামাজিক আন্দোলন আরও জোরদার করতে হবে। আয়শা খানম বলেন, নারীর প্রতি অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই এ ধরনের আচরণ, বর্বর ঘটনা ঘটছে। নারীকে পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!