• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের সাজা

সারাদেশে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ শনিবার


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২২, ২০১৬, ০৫:৪৯ পিএম
সারাদেশে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ শনিবার

অর্থপাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জেল-জরিমানার প্রতিবাদে শনিবার (২৩ জুলাই) রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার (২২ জুলাই) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পূর্ব নির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তবে ঢাকা মহানগরীর কোথায় এ বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে তা তাৎক্ষণিক জানাননি তিনি। এ বিষয়ে পরবর্তীতে জানানো হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কি অভিযোগে তারেক রহমানের সাজা দেয়া হয়েছে তা গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরতে আজকের এ সংবাদ সম্মেলন। ।

খন্দকার মাহবুব হোসেন জানান, তারেক রহমানকে ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেফতার করে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। তারপর তাকে সরকারের অনুমতিতে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসারত অবস্থায় ২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে এ (অর্থপাচার) মামলাটি করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় তারেক রহমানের ব্যবসায়ীক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে। তারেক রহমানকেও আসামি করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘মামলাটা কি? ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খাদিজা ইসলাম, যিনি নির্মাণ ইন্টারন্যাশনালের (কনস্ট্রাকশন) চেয়ারম্যান এবং তৎকালীন সময় টঙ্গীতে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির জন্য তিনটি চাইনিজ কোম্পানি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পিডব্লিউডির দরপত্রে। সেই দরপত্রে চাইনিজ কোম্পানি হারবাল পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। খাদিজা ইসলাম তার এজেন্ট ছিলেন। তার লোকাল এজেন্ট’র সঙ্গে গিয়াসউদ্দিন মামুন কনসালটেন্ট ছিলেন। ওনার (মামুন) কাজ ছিল কাজটি যাতে বাংলাদেশের মাটিতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।’

অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘ঘুষ দেয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়। সম্পূর্ণ কেস নির্ভর করে খাদিজা ইসলামের বক্তব্যের ওপর। তিনি আদালতে আসলেন। আমরা তখন ছিলাম। আপনারা জানেন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আমরা কেউ আইনজীবী না। উনি যখন বিদেশে ছিলেন তখন ২০০৯ সালে মামলাটি করা হয়। আইনগতভাবে তারেক রহমানের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না। গিয়াসউদ্দিনের পক্ষে আমরা জেরা করলাম। খাদিজা ইসলাম স্পষ্টভাবে বললেন আমি গিয়াসউদ্দিন মামুনকে কনসালটেন্সি ফি হিসেবে টাকা দিয়েছি। হারবাল কোম্পানি সিঙ্গাপুরে তাদের একাউন্ট থেকে আমরা একাউন্টে টাকাটা জমা দিয়েছিল। আমার একাউন্ট থেকে কনসালটেন্সি ফি হিসেবে মামুনকে টাকা দেয়া হয়। বাংলাদেশে থেকে কোন লেনদেন হয়নি। বাংলাদেশের একটি পয়সাও বিদেশে মামুন গ্রহণ করেন নাই। টাকা দিয়েছে চাইনিজ কোম্পানি, সিঙ্গাপুরে। সিঙ্গাপুরের একাউন্টে জামা হয়েছে। সেখান থেকে ট্রান্সফার হয়ে মামুনের একাউন্টে জমা হয়েছে। এই হলো মামলা।’

মাহবুব বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে একটি টাকাও পাচার হয়নি। টাকার লেনদেন হয়েছে বৈধভাবে। তারেক রহমনের বিরুদ্ধে অপরাধ তিনি রাজনৈতিক নেতা। সরকারকে বিভিন্ন সময় চমক সৃষ্টি করতে হয়। যখনই সরকার অসুবিধায় পড়ে তখন একের পর এক চমক সৃষ্টি করে। ফলে যে ইস্যুগুলো সরকারের সামনে আসে, তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে আড়ালে চলে যায়। আমরা দেখেছি ব্যাংক ডাকাতি, আমরা দেখেছি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা চুরি হওয়া।’

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান স্বীকার করেছেন মামুনের সঙ্গে তার পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। তিনি বলেছেন, আমি (তারেক) বিদেশে যখন গিয়ে ছিলাম, তখন তার একাউন্ট থেকে টাকা নিয়েছি, খরচ করেছি। আবার দেশে গিয়ে সেই টাকা পরিশোধ করা হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের অপরাধ তিনি বিএনপির অন্যতম নেতা। তাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য, জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সরকার ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের ঘটনায় ২০০৯ সালে মামলা করে, তার অনুপস্থিতে সাজা দেয়া হয়েছে। এ সাজাকে আমরা ন্যায় বিচারের পরিপন্থি বলে মনে করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্ট একতরফা ভাবে বিচার করেছে। সেখানে তারেক রহমানের পক্ষে কোন আইনজীবী বক্তব্য রাখতে পারেন নাই। একজন লোকের হাত-পা বেঁধে তাকে দুর্নীতিবাজ বলে অর্থপাচার করেছে বলে, এই যদি হয় দেশের অবস্থা, সেখানে আমরা বিচার ব্যবস্থার কোথায় যাবো। সাধারণ মানুষই বা কোথায় যাবে। এখনো সময় আছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য আদালতের স্মরণাপন্ন না হয়ে, রাজপথে আসুন রাজপথে ফয়সালা হবে।’

রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি আপিল করা হবে কি না, জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে মামলাটি করা হয়েছে এবং তার অনুপস্থিতিতে সাজা দিয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে আইনের বিধান মতে যে পর্যন্ত না তারেক রহমান দেশে আসেন এবং এখানে হাজির না হন, সে পর্যন্ত তার পক্ষে আপিল করা সম্ভব নয়।’

‘আপনারা জানেন, ফৌজদারি মামলায় সময়ের কোনো লিমিটেশন নেই। ২০-৩০ বছর পরও যেকোনো সময় ফৌজদারি মামলা করা যায়। আমরা বিশ্বাস করি, এ মামলায় একদিন সুবিচার হবে এবং দেশের মানুষ জানতে পারবে, তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য সাজা দিয়েছিল। আমরা আপিল করব এবং দেখাব এ মামলাটি সম্পূর্ণ বেআইনি হয়েছে’, বলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আ হ ম হান্নান শাহ, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!