• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
৩দিনের লিট ফেস্ট 

সাহিত্যের শক্তি দূর করবে সব অন্ধকার


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৭, ২০১৬, ১০:০৭ পিএম
সাহিত্যের শক্তি দূর করবে সব অন্ধকার

ঢাকা: সাহিত্যের শক্তি জগতের সকল ধরনের অন্ধকারকে দূর করতে পারে। সাম্প্রতিক বিশ্বের যতো অরাজকতা অশুভ শক্তির আস্ফালন তা চিরতরে বিতাড়িত করতে সাহিত্য অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। ছড়িয়ে দিতে পারে শান্তির বাণী। আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব ঢাকা লিট ফেস্ট- এর উদ্বোধনী দিনে সাহিত্যের এই মহাশক্তির বন্দনাই ছিল আর্ন্তজাতকি অঙ্গণের সাহিত্যিক লেখক গবেষকদের মুখে মুখে। 

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বাংলা একাডেমি চত্বরে শুরু হলো ‘ঢাকা লিটারারি ফেস্টিভ্যাল ২০১৬।’ আব্দুল করিম সাহিত্য মিলনায়তনে বর্ণাঢ্য এই আয়োজনের উদ্বোধন করলেন নোবেল জয়ী লেখক ভিএস নাইপল। 

প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তব্য দেন তিন উৎসব পরিচালক- কাজী আনিস আহমেদ, আহসান আকবর ও সাদাব সায্। এ সময় হুইল চেয়ারে করে মঞ্চে উঠেন ৮৪ বছর বয়সের পৃথিবীখ্যাত লেখক ভিএস নাইপল। সঙ্গে ছিলেন তার সহধর্মিণী নাদিরা নাইপল। 

উদ্বোধন শেষে ভিএস নাইপল বলেন, ঢাকা এসে খুব ভালো লাগছে আমার। উৎসব উদ্বোধন করে আমি আনন্দিত। তিনি খানিকটা রসিকতা করে বলেন, একবার একটা অনুষ্ঠানে তাড়াতাড়ি ফিতা কেটেছিলাম। তখন পাশে থাকা আমার এক বন্ধু বলল, তাড়াতাড়ি ফিতা কাটতে নেই। আবেদনটা ধরে রাখতে ধীরে ধীরে কাটতে হয়। আমি বোধহয় এবারও তাড়াতাড়ি ফিতা কেটে ফেলেছি। ফিতা তো কাটলাম। এখন আমার হয়ে কেউ বক্তৃতাটা দিক। তার কথায় হেসে ওঠেন মিলনায়তন ভর্তি দর্শকশ্রোতারা।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সাহিত্য উৎসবটি একই সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতিকে যেমন বিশদভাবে তুলে ধরছে, ঠিক তেমন করেই আমাদের সামনে হাজির করছে বিশ্বসংস্কৃতি ও সাহিত্যকেও। আশা করি, এ উৎসবের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ হবে আমাদের অনুবাদ সাহিত্য। যার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারব আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সাহিত্যকে।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, দেশে মুক্তমনা সাহিত্যিক-ব্লগার, লেখক-প্রকাশকের ওপর হামলা হয়েছে একাধিকবার, ফলে বিদেশিদের অনেকে এ দেশে আসতে শঙ্কিত ছিলেন, কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি সব শঙ্কা দূর করতে। তাই এ উৎসবটি আমাদের জন্য বেশ স্বস্তির। এ উৎসবটি তরুণ সাহিত্যিকদের জন্য একটি দারুণ সুযোগ। কেননা এখানে এসে তারা নিজেদের অভিমত, অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারছেন।

উদ্বোধনী আয়োজনে ছিল জমকালো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পরিচালনায় একগুচ্ছ গান গেয়ে শোনান সুরের ধারার শিল্পীরা। তাদের পরিবেশিত সম্মেলক সংগীতগুলো ছিল- ‘শান্তি করো বরিষণ’, ‘ও আমার দেশের মাটি’, ‘আকাশভরা সূর্য তারা’ ও ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’। গানের সুরে পরিবেশিত হয় নৃত্য।  

নৃত্য

৯০টি অধিবেশনে সাজানো এ সাহিত্য সম্মেলনের প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হয় ২৩টি অধিবেশন। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় উৎসবের অধিবেশনগুলো। একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনে লনে মেহেদি হাসান ও তার বন্ধুরা বিভিন্ন কবির কবিতায় সুরারোপ করে সংগীত পরিবেশন করেন। একই সময় কসমিক টেন্টে প্রদর্শিত হয় জয়া আহসান অভিনীত ও ইন্দ্রনীল রয় পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসার শহর’। প্রদর্শনী শেষে চলচ্চিত্রটি নিয়ে কথা বলেন পরিচালক ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী, অভিনেত্রী জয়া আহসান এবং পশ্চিমবঙ্গের লেখিকা সংগীতা বন্দোপাধ্যায়। আলোচনা পরিচালনা করেন সাদিয়া মাহজাবিন ইমাম।

বেলা ১টায় মূল মঞ্চে বিশ্বসাহিত্য নিয়ে ‘ওয়ার্ল্ড ফিকশন: হিডেন রিয়েলিটি’ অধিবেশনে ড্যানিয়েল হানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন নিকোলাস লেজার্ড, আনজুম হাসান, নায়েল এলতোখ্রি ও এমি স্যাকভিলে। কেকে টি স্টেজে ‘ইমাজিনিং হিস্টোরি’ অধিবেশনে সাদ জেড হোসাইনের সঞ্চালনায় অংশ নেন সাজিয়া ওমর ও বাপ্পাদিত্য চক্রবর্তী। এ সময় ব্যান্ড তারকা মাকসুদুল হক ও স্টিভেন পাওলার লনে ইংরেজি কবিতাপাঠ করেন।

বেলা দুটোয় প্রধান মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘আমেরিকা: এক্সেপশনাল নো মোর’ শীর্ষক অধিবেশন। এটা সঞ্চালনা করেন শ্রীরাম কারি। আলোচনা করেন মার্কিন নির্বাচন কভার করা দুই সাংবাদিক ভারতের এনডিটিভির প্রধান সম্পাদক বারখা দত্ত ও বেন জোদাহ, মার্কিন কবি জেফরি ইয়াং ও আরব সাহিত্যের কিউরেটর মার্সিয়া লিন্যাক্স কিউলি। 

ডোনাল্প ট্রাম্পের মার্কিন রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রসঙ্গে আলোচকরা বলেন, ‘বিশ্বের একেক জায়গা একেক রকম প্রভাব পড়বে। জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলায় ভুগতে পারে বাংলাদেশ, ইউরোপীয় সামরিক জোট ন্যাটো টিকবে কিনা সেটা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে বর্তমানে যে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে তাতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।’ একই সময় বাংলাদেশের জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী ও জুহানি প্ল্যাজমা কেকে টি স্টেজে কাজী কে আশরাফের সঞ্চালনায় ‘নিওরোসায়েন্সের অ্যাসথেটিক্স’ বিষয়ে আলোচনা করেন।

এ সময় লনে ‘সাম্প্রদায়িকতার এপার ওপার’ নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবি মাসুদুজ্জামান, কবি জহর সেন মজুমদার, লেখক সেমন্তি ঘোষ ও লেখক মাসুদুল হক। সঞ্চালনা করেন আহমেদ রেজা। এতে বক্তারা বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার কোনও ভেদরেখা নেই। এটি সবখানে ছড়িয়ে আছে। দিনে দিনে মানুষেরা শ্রেণী বিভক্ত সমাজে হারানো দেশ অনুসন্ধান করে যাচ্ছি।’ এ সময় ব্র্যাক স্টেজে অনুষ্ঠিত হয় ‘ক্রাইম পেইজ দ্যা আর্ট অব সাসপেন্স’ শীর্ষক অধিবেশন।

বিকেল সাড়ে তিনটায় মূল মঞ্চে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত মীর মোশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু’র ইংরেজি অনুবাদ ‘ওশান অব সরো’র প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বইটির অনুবাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফকরুল আলম বইটি নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে।

ভিএস নাইপল

একই সময় লনে ‘সময়ের কবিতা সময়ান্তরের কবিতা’ শীর্ষক অধিবেশনে কবি আসাদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় কবিতা পাঠ করেন কাজী রোজি, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, আসাদ মান্নান, শিহাব শাহরিয়ার, কুমার চক্রবর্তী, পাবলো শাহী, মুস্তাফিজ শফি, ওবায়েদ আকাশ, হাসান মাহমুদ, জুয়েল মাজহার, মাহমুদ শাওন প্রমুখ। একই সময় ব্র্যাক স্টেজে অভিনেতা ইরেশ যাকের ভারতের প্রাবন্ধিক অন্তরা গাঙ্গুলির বই ‘তনয়া তানিয়া’ নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করেন। বটতলায় আবৃত্তি সমন্বয পরিষদের বাচিকশিল্পীরা চার কবিকে স্মরণ করে কবিতা আবৃত্তি করেন। কসমিক টেন্টে ভিএস নাইপলের ওপর নির্মিত বিবিসির বিশেষ তথ্যচিত্র ‘দ্য স্ট্রেঞ্জ লাক অব ভিএস নাইপল’ প্রদর্শিত হয়।

বিকেলে মূল মঞ্চে বারখা দত্তের সঙ্গে আলোচনায় বসেন উৎসব পরিচালক সাদাফ সায্। আলোচনার বিষয় ছিল বারখা দত্তের বিতর্কিত গ্রন্থ ‘দ্য আনকোয়াইট ল্যান্ড’। একই সময় ভ্রমণপিপাসু অস্টেলিয়ান লেখক টিম কোপ কে কে স্টেজে আলোচনায় বসেন তার লেখা ‘জার্নিস্ অ্যান্ড কোয়েস্ট ইন ট্রুথ’ বইটি নিয়ে। একই সময় পুলিৎজার বিজয়ী ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন কবি বিজয় শেষাদ্রি আমেরিকার কবিতা নিয়ে ব্র্যাক স্টেজে আলোচনা করেন আরেক কবি জেফরি ইয়াংয়ের সঙ্গে। একই সময়ে রিচার্ড বিয়ার্ড লাইভ এডিটিংয়ের ওপর কসমিক টেন্টে বিশেষ কর্মশালা পরিচালনা করেন। 

সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় মূল মঞ্চে প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন কবিপুত্র দ্বিতীয় সৈয়দ হক, কবি সাজ্জাদ শরীফ, সাহিত্যিক আহমেদ মাযহার। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন পারভেজ হোসেন। 

অধিবেশনে দ্বিতীয় সৈয়দ হক বলেন, ‘সব্যসাচী লেখকের চেয়ে কবি পরিচয় দিতে বাবা বেশি স্বাচ্ছদ্য বোধ করতেন। সব্যসাচী তার প্রকাশনীর নাম ছিলো। আদিম সমাজের ছন্দ, সুর, তাল, লয় থেকে যে ভাষার সৃষ্টি, তা নিয়ে কাব্যচর্চা করেছেন। সুতরাং তাকে সব্যসাচী না বলে কবি বললে, তার আত্মা শান্তি পাবে।’ এ সময় সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘নীল দংশন’ ইংরেজি অনুবাদ ‘ব্লু ভেনম’র অংশবিশেষ মঞ্চস্ত হয়। নায়লা আজাদের পরিচালনায় এতে অভিনয় করেন আরেফ সৈয়দ ও আরিক আনাম খান। এর পর বটতলায় বাউলিয়ানা ঘরানার সংগীত পরিবেশন করেন লোকসংগীতের শিল্পীরা। যার মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) উৎসবের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি শুরু সকাল ৯টায়। শেষ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। মূল মঞ্চে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় ‘দি রাইটার অ্যান্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড: ভি এস নাইপল’। এতে উৎসব পরিচালক আহসান আকবরের সঙ্গে নিজের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে কথোপকথনে মেতে উঠবেন সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ভিএস নাইপল। 

সোনালীনিউজ/এমএন 

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!