• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিসি অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে সরক


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬, ০৯:০৯ পিএম
সিপিসি অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে সরক

বিশেষ প্রতিনিধি

বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান কাস্টমস প্রসিডিউর কোড (সিপিসি) সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এভাবে গত পাঁচ বছরে ১২টি সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৫৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। তার মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ফাঁকি দেয়া ৩৮ কোটি ৩২ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হলেও বাকি ৭টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১১৫ কোটি ২১ লাখ টাকার রাজস্ব এখনো আদায় করা সম্ভব হয়নি। এমনকি রাজস্ব আদায়ে ওসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাধিকবার দাবিনামা জারি করেও কোনো সাড়া পায়নি কাস্টমস কর্মকর্তারা। কাস্টমস বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিপিসি সুবিধা অপব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকি দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-বিডিবি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রজেক্ট, বিপিডিবি রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন, ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপার্টমেন্ট, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন, ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও ঢাকা ওয়াসা। তার মধ্যে ওসব প্রতিষ্ঠান থেকে গতবছর সিপিসি সুবিধার অপব্যবহার এবং এইচএস কোড পরিবর্তন করে ফাঁকি দেয়া ১৫৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার মধ্যে ৩৮ কোটি ৩২ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করতে পেরেছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। তার মধ্যে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের ৮ কোটি ৫৪ লাখ, ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ২ কোটি ৮০ লাখ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ২৪ কোটি ৭০ লাখ, ঢাকা ওয়াসার ২ কোটি ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের ২৮ লাখ টাকা আদায় হয়েছে।

সূত্র জানায়, পিডিবি ২০১৩ সালের নভেম্বরে সিপিসি সুবিধার অপব্যবহার করে পটেনশিয়াল টান্সফর্মার (বি/ই নং-১০২৭১) আমদানির মাধ্যমে ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। আবার একই বছরের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি ভুল এইচএস কোড ব্যবহার করে সিঙ্গেল ফেইজ কারেন্ট টান্সমিটা’ আমদানির মাধ্যমে (বি/ই-১৪৭০৮) ৪ কোটি ৫ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। গত পাঁচ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠান সিপিসি ও ভুল এইচএস কোড ব্যবহার করে মোট ৯টি চালানে ১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকি দেয়া রাজস্ব পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটির কাছে গত ১০ নভেম্বরসহ মোট দু’বার দাবিনামা জারি করে চিঠি দেয় কাস্টমস বিভাগ। কিন্তু এখনো পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। একইভাবে সিপিসি সুবিধার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ ১০টি চালানে মোট ২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। ওসব চালানে প্রতিষ্ঠানটি স্টিল টাওয়ার ও স্টিল স্ট্রাকচার আমদানি করে। আমদানিকৃত ওসব পণ্য নিয়ম অনুযায়ী সিপিসি-১৭৩ থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি সিপিসি-৬০’ ঘোষণা করে ২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। ফাঁকি দেয়া রাজস্ব আদায়ে কাস্টমস বিভাগ মোট ৪ বার প্রতিষ্ঠানটি বরাবর দাবিনামা জারি করেও কোনো সাড়া পায়নি। সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর চিঠি দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। তবে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের অভিমত হচ্ছে- স্টিল টাওয়ার ও স্টিল স্টাকচার-এর ১০টি চালান আমদানি নথিতে ভুল এইচএস কোড দেয়ায় কাস্টমস মোট ২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বাড়তি শুল্ক দাবি করে। কিন্তু ইতিমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ও অর্থ শেষ হয়ে যাওয়ায় ওই প্রকল্পের জন্য নতুন করে বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না।

সূত্র আরো জানায়, সিলেটের শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রজেক্ট ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে চীন থেকে ৭৫ কোটি টাকা মূল্যের আড়াই টন কৃষিপণ্যের একটি চালান (বি/ই-১৩৫৩৫) আমদানি করে। তাতে প্রতিষ্ঠানটি পণ্যের এইচএস কোড পরিবর্তন করে ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। তিন বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ওই প্রতিষ্ঠান মোট ৪টি চালানের মাধ্যমে ৪০ কোটি ৮১ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। তাছাড়া ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভিয়েতনাম থেকে ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের মশারি আমদানি করে চট্টগ্রামের ডিরেক্টর জেনারেল সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপার্টমেন্ট। আমদানিকৃত পণ্যের এইচএস কোড পরিবর্তন করে ৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। একইভাবে সিপিসি সুবিধার অপব্যবহার করে বিপিডিবি রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড একটি চালানে (বি/ই-২৭৬৬৪) ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। তাছাড়া একইভাবে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (বি/ই-১০৭৯৯) ১ কোটি ৪৫ লাখ, বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বি/ই-১২৪৮৭৩৫) ৩ কোটি ৮ লাখ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বি/ই-৯২৩৩৮১ ও ১৩১৫৯২৮) ২০১৫ সালে পাওয়ার টান্সফর্মার ও কেবল আমদানির মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার রেজাউল হক জানান, সিপিসি সুবিধার অপব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়া প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। ফাঁকি দেয়া রাজস্ব আদায়ে কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট শাখা  থেকে বেশ কয়েকবার দাবিনামা জারি করা হয়েছে। তবে তিনবার চিঠি দেয়ার পরও সাড়া না দিলে আইন অনুযায়ী বিআইএন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) স্থগিত করার পাশাপাশি অন্যান্য শাস্তির বিধান রয়েছে। কাস্টমসের পক্ষ থেকে সব প্রতিষ্ঠানের কাছেই চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!