• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়া ইস্যুতে যুদ্ধে জড়াবে শক্তিধর দেশগুলো!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৮, ০২:১৩ পিএম
সিরিয়া ইস্যুতে যুদ্ধে জড়াবে শক্তিধর দেশগুলো!

ঢাকা : সিরিয়ার পূর্ব ঘৌতায় ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। নিরপত্তা পরিষদের সব সদস্যের সম্মতিতে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়। ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো এবং অসুস্থ ও আহতদের সরিয়ে নিতে এ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। তবে প্রস্তাবের আওতায় ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী ও তাদের সিরীয় সহযোগীদের না রাখায় যুদ্ধবিরতি কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে পর্যবেক্ষকরা সন্দেহ পোষণ করছেন। খবর বিবিসি, আলজাজিরা।

স্থানীয় সময় শনিবার সুইডেন ও কুয়েতের করা খসড়া প্রস্তাবটি পাস হয়। ফলে আট দিন ধরে চলা সিরীয় ও রুশ বিমানবাহিনীর বিরামহীন বিমান হামলায় অসুস্থ ও আহতদের চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়া এবং অবরুদ্ধ ঘৌতায় খাদ্য ও ওষুধসহ জরুরি ত্রাণ পাঠানোর সুযোগ তৈরি হলো। প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর জাতিসংঘ মহাসচিব একে স্বাগত জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব এটি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত রোববার থেকে রাজধানী দামেস্কের কাছে বিদ্রোহীদের শক্তিশালী ঘাঁটি পূর্ব ঘৌতায় সরকারি বাহিনীর হামলা চলছে। নিরাপত্তা পরিষদের ভোটের পরও ওই এলাকায় বিমান হামলা অব্যাহত ছিল। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত ঘৌতা এলাকাটি সিরীয় বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সেখানে খাদ্য, পানীয় ও ওষুধ কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। বিমান হামলায় মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছে কয়েক হাজার। স্বয়ং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঘৌতাকে দুনিয়ার বুকে নরক বলে অভিহিত করেছেন।

পূর্ব ঘৌতায় যুদ্ধবিরতির জন্য বৃহস্পতিবার থেকে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব আনার চেষ্টা চললেও বিশ্বশক্তিগুলো একমত না হওয়ায় দেরি হচ্ছিল। রাশিয়া প্রস্তাবে পরিবর্তন আনার কথা বললে পশ্চিমা কূটনীতিকরা একে মস্কোর সময়ক্ষেপণের চেষ্টা অভিহিত করে তীব্র সমালোচনা করছিল। শনিবারের প্রস্তাবের প্রাথমিক খসড়ায় শুধু মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল-কায়েদা ও নুসরা ফ্রন্টকে যুদ্ধবিরতির বাইরে রাখার কথা বলা হলেও রাশিয়া জঙ্গিদের সহায়ক গোষ্ঠীগুলোকেও অন্তর্ভুক্তির দাবি জানায়।

পরে চূড়ান্ত প্রস্তাবে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সহযোগী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান ও সম্পদকে সুনির্দিষ্ট করে এসবের ওপর হামলাকেও যুদ্ধবিরতির আওতার বাইরে রাখা হয়। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি প্রস্তাবটি দ্রুত কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বাশার বাহিনী এ প্রস্তাব মানবে কি না তা নিয়ে সন্দেহের কথাও জানান তিনি। মধ্যস্থতা দীর্ঘায়িত করার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেন এই ক‚টনীতিক। হ্যালি বলেন, প্রস্তাব অনুমোদনে তিন দিন লেগেছে। এর মধ্যেই বোমা ও গুলিবর্ষণে অনেক মা সন্তান হারিয়েছেন।

জাতিসংঘে ফ্রান্সের প্রতিনিধি ফ্রাঙ্কো দেলাত্রেও সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাসে অনেক দেরি হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন। কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের ব্যর্থতারও কড়া সমালোচনা করেন তিনি। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভেসিলি নেবেনজিয়া বলেন, সবপক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা সম্ভব হবে না। পূর্ব ঘৌতার পরিস্থিতি নিয়ে অতিরঞ্জনেরও প্রতিবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, সিরিয়ার মানবিক পরিস্থিতি যে ভয়াবহ তা আমরা জানি। সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াও দরকার। শুধু পূর্ব ঘৌতাই নয়, পুরো সিরিয়াতে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

পূর্ব ঘৌতায় দীর্ঘদিন ধরে চার লাখের মতো মানুষ আটকে আছে। সেখানে ব্যারেল বোমা ও গোলা পড়ছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। গত সপ্তাহে হামলা শুরুর পর থেকে বেশ কয়েকটি হাসপাতালও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সিরিয়ার সরকারি বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের লক্ষ্য কেবল সন্ত্রাসীরা।

এদিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ এখন এমন এক জটিল অবস্থায় পৌঁছেছে যে শক্তিধর দেশগুলো সেখানকার নানা সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্য দিয়ে প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে বিবিসির সাংবাদিক সেবাস্টিয়ান আশার লিখছেন, সিরিয়ার সরকার এবং তার বিরোধীদের মধ্যে যে সংঘাত থেকে এই সঙ্কটের সূচনা তা এখন প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। দেশটি এখন পরিণত হয়েছে নানা শক্তির পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে।

বাইরের যেসব শক্তি আগে কূটনীতির পথে ছিল, তারা এখন সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের পথে নেমে পড়েছে। রাশিয়া আর ইরান এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জড়িত। আর্থিক, সামরিক, রাজনৈতিক সব দিক থেকেই সিরিয়ার সঙ্গে দেশ দুটি জড়িয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত কম জড়িত। এ কারণেই তাদের স্পষ্ট বা নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা নেই। প্রতিবেশী তুরস্ক সিরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু তারা বিদ্রোহীদের সমর্থন করলেও কুর্দিদের ঠেকাতে বেশি আগ্রহী।

লেবাননের ১৬ বছরের গৃহযুদ্ধের সময় যেমন, তেমনি সিরিয়ার ক্ষেত্রেও প্রধানত নীরব ভূমিকা রেখে চলেছে ইসরাইল। তারা সিরিয়ায় তথাকথিত ইরানি ঘাঁটি এবং হিজবুল্লাহর অস্ত্র সরবরাহের মতো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতেই আক্রমণ সীমিত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক, কুর্দি, এমনকি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার- এদের প্রত্যেকেরই স্বার্থ অপরের বিপরীত।

তবে প্রক্সি বাহিনীর মাধ্যমে তৎপরতা চালানোর কারণেই এতদিনেও সরাসরি সংঘাত হয়নি। শুধু ইসলামিক স্টেটের মোকাবেলা করার সময়ই তারা একসঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু ইসলামিক স্টেটের পরাজয়ের ভেতর দিয়ে পরিস্থিতিতে এক নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে কুর্দিরা আইএসকে তাড়ানোর সময় আরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে- আর তা তুরস্ককে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। রাশিয়া এবং ইরান সিরিয়ার গভীরে তাদের অবস্থান বেশ পোক্ত করেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!