• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি খুঁজবে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ৬, ২০১৭, ১১:২৬ এএম
স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি খুঁজবে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট

ঢাকা : দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করতে তিনটি বিশেষ ইউনিট গঠন করা হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। সম্পদ ব্যবস্থাপনা, গোয়েন্দা ও এনফোর্সমেন্ট ইউনিট নামে এ তিনটি বিভাগ গঠনে ইতোমধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে দুদক।

এ তিনটি ইউনিট শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানা গেছে। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, এই তিনটি নতুন ইউনিট গঠনে আইন সংশোধনের প্রয়োজন নেই, বর্তমান বিধির মাধ্যমেই তা কার্যকর করা সম্ভব।

দুদক সূত্র জানায়, আদালতে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হলে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত তাদের সম্পদের বিষয়ে কিছু হয় না। এখন থেকে ওই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আবেদন জানানো হবে। আদালতের আদেশ অনুযায়ী দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের রিসিভার হওয়া ও ওই সম্পদ রাষ্ট্রীয় খাতে জমা দিতে কাজ করবে দুদকের সম্পদ-ব্যবস্থাপনা ইউনিট।

বর্তমানে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ বক্সে জমা পড়ে বা ডাকে পাঠানো হয় সেগুলোই যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া সংবাদপত্রে প্রকাশিত দুর্নীতির খবরও আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়।

নতুন ইউনিট গঠিত হলে দুদক কর্মকর্তারা নিজের উদ্যোগে দুর্নীতি খুঁজে বের করে কমিশনে পেশ করবেন। পরে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেবে। আর স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি খুঁজে বের করতেই নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। এ ছাড়া দুদকের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও দিন বা রাতে আসামি ধরার সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে এনফোর্সমেন্ট ইউনিট গঠন করা হচ্ছে।

এ লক্ষ্যে ৪০ সদস্যের আর্মড ফোর্স চাওয়া হবে সরকারের কাছে। পর্যায়ক্রমে এই ইউনিটে দুদকের নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা হবে। দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামিদের হেফাজতে রাখতে আগামী কিছুদিনের মধ্যে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় কম্পাউন্ডের ভেতরে নিজস্ব হাজতখানা নির্মাণ করা হবে। ওই হাজতখানার নিরাপত্তায়ও আর্মড ফোর্স মোতায়েন করা হবে।

দুদক সূত্র মতে, বিভিন্ন উৎস থেকে আসা দুর্নীতির অভিযোগ যাচাই-বাছাই করতে একটি কমিটি রয়েছে দুদকে। দুদকে এখন গড়ে প্রতিদিন ৮৫ থেকে ১০৫টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশ অভিযোগই দুদকের এখতিয়ারবহির্ভূত। বাকি ৪ শতাংশ অভিযোগের অধিকাংশই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

কারণ অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়েই দেখা যায়, এসব অভিযোগের পেছনে রয়েছে ব্যক্তিস্বার্থ, পেশাগত বিরোধসহ নানা ষড়যন্ত্র। ফলে এসব ভিত্তিহীন অভিযোগের পেছনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে অহেতুক সময় নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি অকারণে হয়রানির শিকার হতে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানকে।

আর অভিযোগ ভিত্তিহীন হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই দায়মুক্তি দেওয়া হয় সংশ্লিষ্টদের। দুদক দায়মুক্তি দিয়েছে-এমন শিরোনামে সংবাদ প্রচার হয় গণমাধ্যমে। এতে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করা হলে বিদ্যমান এসব সমস্যা অনেকাংশেই কমে আসবে বলে মনে করছেন দুদক সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই, অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলা তদন্ত করতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করতে হয় দুদককে। পাশাপাশি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, সরকারি-বেসরকারি দফতর ও বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক নিজেই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। এতে অহেতুক কালক্ষেপণসহ অনুসন্ধানের একপর্যায়ে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ে নির্ভুল অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল জানান, দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ কাজ গতিশীল করতে কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিশন স্বাবলম্বী হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কাজ করতে চায়।

দুদকের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করে জানান, নিজস্ব গোয়েন্দা পদ্ধতি না থাকায় অনেক ভালো কাজ করেও সাফল্য দৃশ্যমান হচ্ছে না। এটি দুদকের সীমাবদ্ধতা। দুদকের পঞ্চবার্ষিকী কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার খসড়ায় বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতার কথা বলা আছে।

এ-সংক্রান্ত চুক্তি প্রস্তাবিত গোয়েন্দা ইউনিটে সঙ্গে হবে। পাসপোর্টের সঙ্গে সমঝোতা থাকলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও মামলার আসামির পাসপোর্টের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া সম্ভব। এখন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে চাহিদাপত্র দিয়ে তথ্য আনতে হয়। এতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। অহেতুক বিলম্বিত হয় অনুসন্ধান-তদন্ত।

তিনি আরো জানান, দুর্নীতি মামলার আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পাসপোর্ট নম্বর, পাসপোর্টে উল্লিখিত নামের ইংরেজি বানান, ঠিকানা দিতে না পারায় নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় তারা। এ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুদকের হাতে আসামির সঠিক তথ্যসংবলিত জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় তল্লাশি করা সম্ভব হয় না। বিটিআরসির সঙ্গে কোনো চুক্তি না থাকায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিংবা আসামির মোবাইল ট্র্যাকিং সম্ভব হচ্ছে না।

পাশাপাশি অনুসরণ করা যায় না আসামির গতিবিধি। অবস্থান সম্পর্কে সোর্সের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাতে গিয়ে অধিকাংশ সময়েই আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া নানা কারণে দুদক-সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির বিষয়টিও সঠিকভাবে করা হয় না। নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করা হলে এটিও নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন দুদকের এই পরিচালক।

দুদক ১৪টি জেলায় নতুন অফিস চালু, জনবল ও অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করারও উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে ২২টি জেলায় দুদকের অফিস রয়েছে। আরো ১৪টি জেলায় নতুন অফিস চালু করা হলে মোট ৩৬ জেলায় অফিস থাকবে। দুদকে আরো এক হাজার ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে দুদকের জনবল এক হাজার ২৬৪ জন। নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে মোট জনবল হবে দুই হাজার ২৯০ জন।

অতিরিক্ত জনবল পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দও চাওয়া হবে। তা ছাড়া দুদকের তথ্যপ্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও জনসংযোগ ইউনিটকে আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দুদক আইনের বিধিমালা সংশোধনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে ক্রিমিনাল ল’ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট সংশোধনের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!