• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
গতি নেই সাংগঠনিক কার্যক্রমে

হতাশার শেষ নেই বিএনপির তৃণমূলে


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬, ০৮:৫৮ পিএম
হতাশার শেষ নেই বিএনপির তৃণমূলে

জাতীয় পর্যায়ে দু-একটি সেমিনার ও প্রেস কনফারেন্স ছাড়া তেমন কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বিএনপির। তৃণমূল পর্যায়ের অবস্থা আরো শোচনীয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী কয়েক মাস দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াওকেন্দ্রিক আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে কোনো কিছুতেই সুবিধা করতে পারছে না দলটি।

ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে এত বড় ধাক্কা সামলে নিতে গিয়ে যারপর নাই হতাশাই ভর করেছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও চলছে সিদ্ধান্তহীনতা। যে কারণে রামপালসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জনস্পৃক্ততা বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও এর সঠিক ব্যবহার করতে পারছে না বিএনপি।

দলের এমন বিপর্যস্ত অবস্থায় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে একসময় তৃণমূলের নেতৃত্বে থাকা দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে অবস্থান নিয়ে। ওয়ান-ইলেভেন সরকার সময়ে দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত তারেক জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে জামিন নিয়ে লন্ডনে যান। এরপর থেকেই তিনি আর দেশে আসছেন না। আদালত থেকেও তার বিরুদ্ধে পরওয়ানা জারি করে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
 
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল পর্যায়ের অনেকেই মনে করছেন তারেক জিয়ার এমন দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকাতেই সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের এও অভিযোগ যে, সরকারই তাদের নেতাকে দেশে আসতে দিচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের এক নেতা বলেন, তারেক রহমান সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে দলের কর্মী সম্মেলন করে দলকে একটা শক্ত অবস্থান দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এখন বিএনপিতে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই। উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ জেলাতেই সাংগঠনিক দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনেও বিএনপির নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ সেভাবে থাকছে না বলেও জানান তিনি।

তৃণমূলের সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, হতাশা একসময়ে ছিল, কিন্তু বর্তমানে সেই হতাশা তৃণমূল কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। তিনি এও বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করলেও দেশের রাজনীতি সম্পর্কে সব সময় খোঁজখবর রাখছেন। এখনো পর্যন্ত তার মতামত, পরামর্শ ও সিদ্ধান্তেই বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে।

তারেক রহমানের লন্ডনে অবস্থান প্রসঙ্গে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, তিনি চিকিৎসার জন্য সেখানে রয়েছেন। আর দেশে বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে করে দেশে ফেরার মাধ্যমে তার (তারেক রহমান) আগুনের ভেতরে ঝাঁপ দেয়ার কোনো অর্থ হতে পারে না।

বর্তমান সরকার তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে বাধা দিচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দেখুন এটা আমি মনে করছি না। মূলত গণতন্ত্রহীন দেশের বর্তমান সার্বিক অবস্থা বেশি ভালো নেই। এ অবস্থা বিবেচনা করে এবং সর্বোপরি (তারেক রহমান) চিকিৎসা শেষেই তিনি দেশে ফিরবেন।  

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চেয়ারপারসনের পরে তারেক রহমান আমাদের দলের সর্বোচ্চ নেতা। তাকে নিয়ে দলের তৃণমূল পর্যায়ে আগ্রহ আগেও ছিল, এখনো আছে। তৃণমূলসহ আমরা সবাই অপেক্ষা করছি তারেক রহমান কখন দেশে ফিরে এসে দলীয় কর্মকাণ্ডে আরো বেশি সম্পৃক্ত হবেন। তৃণমূল মনে করে তিনি দেশে ফিরলে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আরো সুদৃঢ় হবে।

আর দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই নেতার দেশে ফেরা সম্পর্কে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, তারেক রহমান ইচ্ছে করে দেশের বাইরে থাকছেন না। লন্ডনে তার উন্নত চিকিৎসা চলছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যখন সময় হবে তখনই তিনি দেশে ফিরবেন।

তারেক রহমানকে তৃণমূল পর্যায়ের প্রাণপুরুষ উল্লেখ করে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তিনি (তারেক রহমান) স্বেচ্ছায় নির্বাসনের পথ বেছে নেননি। বরং পরিস্থিতি তাকে লন্ডনে থাকতে বাধ্য করছে। সুচিকিৎসার জন্যই তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। এখনো তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেননি। সুস্থ হলেই দেশে ফিরবেন। তার এই দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে তৃণমূল আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বিশেষ করে তৃণমূলের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার বলেন, রাজনৈতিক লেবাসে একটি অটোক্রেট সরকার এই মুহূর্তে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশ পরিচালনা করছে। বর্তমানে তাদের অটোক্রেসির কারণে দেশে সভা-সমাবেশ ও মিছিল মিটিংয়ের মতো স্বাভাবিক কর্মসূচি কেউ পালন করতে পারছেন না। সব কিছু সীমিত করে ফেলেছে বর্তমান সরকার।

আগামী দিনে বিএনপির মূল নেতৃত্ব তারেক রহমানই দেবেন উল্লেখ করে শাম্মী আক্তার বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে তারেক রহমানের অনেক স্বপ্ন আছে। বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা তারেক রহমান এগিয়ে নিয়ে যাবেন সামনের দিকে। দেশকে একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে তারেক রহমান এখন থেকেই কর্মপরিকল্পনা করছেন।

প্রসঙ্গত, হঠাৎ করেই ফের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে নতুন জাতীয় সংসদ নির্বচন নিয়ে। সম্প্রতি জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেয়া একটি বক্তব্যের পর থেকেই দেশের ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতির মাঠে গুজবের ডালপালা মেলেছে বেশ। কেউ বলছেন আগামী বছরের শুরুর দিকে আগাম নির্বাচন। আবার কেউ বলছেন বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষেই নির্বাচন। ঠিক এমন এক সময়ে তারেক রহমানকে নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে দলটির তৃণমূলে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!