• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হুমা আবেদিনেই হিলারির বিপদ!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক অক্টোবর ৩১, ২০১৬, ০৮:৩৮ পিএম
হুমা আবেদিনেই হিলারির বিপদ!

হুমা আবেদিনেই এখন হিলারি ক্যাম্পের যত সঙ্কট। তীরে এসে তরী ডোবার দশায় পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।

সব সমীকরণে, সব জরিপেই ছিলেন তিনি এগিয়ে। কিন্তু ভোটের দিন ঘনিয়ে আসতে আসতেই ঘটে গেল এমন এক ঘটনা, যা তাকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে। আর তা হয়েছে হিলারির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ, সবচেয়ে কাছের আর সবচেয়ে বিশ্বস্ত হুমা আবেদিনকে ঘিরে।

হিলারির সব গোপনীয়তা, সব পরিকল্পনা তার জানা। আর সেই হুমার স্বামী অ্যান্থনি ওয়েনারের ল্যাপটপেই মিলেছে কিছু ই-মেইল, যেগুলো হিলারি ক্লিনটনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়ের। এফবিআইর পরিচালক জেমস কোমে তার রিপোর্টে একথা জানানোর পর তোলপাড় পড়ে গেছে।

মূলত অ্যান্থনির সঙ্গে হুমার বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে। ২০১৩ সালে নিউইয়র্কের মেয়র পদে এই অ্যান্থনির বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তাকে দিতে পারেনি। তার কারণ ছিল অ্যান্থনির যৌন কেলেঙ্কারি। সেবার এক ১৫ বছরের কিশোরী মেয়েকে নোংরা টেক্সট পাঠিয়ে তোপের মুখে পড়েন অ্যান্থনি। নিজের গোপনাঙ্গের ছবি একটি বাচ্চা মেয়ের কাছে পাঠিয়ে পৌরুষ জাহির করতে গিয়ে তার মাশুল ভালো করেই গুনতে হয় তাকে।

তারই ধারাবাহিকতায় হুমা আবেদিনের সঙ্গে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলছে। আর সে অবস্থায় যখন এই ই-মেইল কেলেঙ্কারি ধরা পড়ল তখন হিলারি ক্যাম্পেইন হুমার পাশেই দাঁড়িয়েছে। তারা বলছে, হুমা কোথাও যাচ্ছেন না।

গত দু’দিন ধরে যখন ভাবা হচ্ছিল এবার বুঝি হিলারি-হুমা বিচ্ছেদ হতে চলেছে, তার সব জল্পনা-কল্পনা বাতিল করে দিয়ে হিলারি ক্যাম্পেইনের এ ঘোষণা বিস্ময় জন্ম দিয়েছে বৈকি! ক্লিনটন ক্যাম্পেইনের চেয়ারম্যান জন পোডেস্টা সাংবাদিকদের বলেছেন, পুরো তদন্ত কাজে হুমা আবেদিন সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। তার কোনো কাজ নিয়েই আমাদের মনে কোনো প্রশ্ন জাগেনি। আমরা পুরোপুরি তার পাশে রয়েছি।

কিন্তু এখানে হুমা আবেদিনকে নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। পররাষ্ট্র দফতরের ই-মেইল তিনি বাড়ির কম্পিউটারে ব্যবহার করছিলেন, যাতে তার স্বামীরও অ্যাকসেস ছিল। মিডিয়াগুলো সে প্রশ্নটিই করছে। প্রশ্নই উঠেছে, নির্বাচন সামনে রেখে এই হুমা আবেদিনই কি হতে চলেছেন হিলারির সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ?
অত্যন্ত বিশ্বস্ত এই সহযোগী বছরের পর বছর ধরে হিলারির পাশে রয়েছেন সীমাহীন প্রবেশাধিকার নিয়ে।

৪০ বছর বয়সী এই হুমা আবেদিন রয়েছেন হিলারির ছায়ার মতো হয়ে, পলিটিকো নামের সংবাদপত্র একবার সেভাবেই লিখেছিল। ১৯৯৬ সালে তিনি হিলারির জন্য কাজ করতে শুরু করেন। তখন তার বয়স ছিল মোটে ১৯ বছর। জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করে বের হয়েছেন। কাজ নিয়েছেন ফার্স্ট লেডির (তৎকালীন) অফিসে। ক্রিস্টিন আমানপোরের মতো একজন সাংবাদিক হবেন এমনটাই ছিল জীবনের লক্ষ্য। আর সেই প্রত্যাশা নিয়েই হোয়াইট হাউস প্রেস অফিসে কাজ শুরু করেন। তার মা বলেছিলেন, সুযোগটা নিয়ে নাও। কখনোই প্ল্যান-এ’র প্রেমে পড়ে থাকতে নেই। হুমা সেই উপদেশ মেনেছিলেন।

২০১২ সালে এক ডিনার পার্টিতে দর্শকদের উদ্দেশে তিনি সে কথাই জানিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন, ১৬ বছর পরও আমি আমার প্রত্যাশা থেকে সরে যাইনি। ক্রিস্টিন আমানপোরের সঙ্গেও আমার দেখা হয়েছে।

এরপর গত বছরগুলোতে হুমা বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, যার একেকটি শুনতে গুরুত্বপূর্ণ পদই শোনায়। তিনি ছিলেন হিলারির ‘বডি উম্যান’, ‘ট্রাভেলিং চিফ অব স্টাফ’, ‘সিনিয়র অ্যাডভাইজর’, আর হিলারি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন তার ‘ডেপুটি চিফ অব স্টাফ’। ব্রুকলিনের বাসিন্দা এই হুমা এখন হিলারির ২০১৬ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন ক্যাম্পেইনের ভাইস চেয়ার।

তবে পদ বা পদবি যাই হোক, হিলারির জন্য বরাবরই একই ধরনের কাজ করে আসছেন এই হুমা আবেদিন। সারাক্ষণের সব গোপনীয়তা, সব সিদ্ধান্তের সঙ্গী। এটা বলাই যায়, বছরের পর বছর হুমা ও হিলারি একে অন্যের সঙ্গে যতটা সময় কাটিয়েছেন, ততটা হয়তো তারা দু’জন দু’জনের স্বামীর সঙ্গেও কাটাননি।

বিল ক্লিনটনের এক সাবেক উপদেষ্টা ‘মিনি হিলারি’ বলে ডাকতেন হুমাকে। হিলারি যেখানেই যেতেন, হুমা থাকতেন। ২০০৮ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ডাকে হিলারি যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে গেলেন, সেদিনও সঙ্গে হুমাকেই নিয়ে গিয়েছিলেন। বেনগাজী ইস্যুতে অক্টোবরে যখন হিলারিকে কংগ্রেসে টানা ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখনও হুমা আবেদিন সেখানে ছিলেন। ক্লিনটনদের কাছে হুমা দ্বিতীয় কন্যার মতো। আবার কেউ কেউ এও বলেন, হুমা-হিলারি বোন-বোন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!