• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

১৪ দলের চার, ২০ দলের ১ জন


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৭, ১০:১৩ এএম
১৪ দলের চার, ২০ দলের ১ জন

ঢাকা : আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দেয়া তালিকা থেকেই নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ দলীয় জোটের তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তিনজন নির্বাচন কমিশনার নেয়া হয়েছে। বিশ দলীয় জোট থেকে নেয়া হয়েছে একটি নাম। ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত ১২তম নির্বাচন কমিশন ২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করবে।

সার্চ কমিটি থেকে ৩১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কাছে ইসি গঠনে পাঁচজন করে নাম চাওয়া হলে ২৬ দল ১২৮টি নাম প্রস্তাব করে। এর মধ্যে চূড়ান্ত বিচারে সরকার দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নাম থেকেই দেশের অন্যতম সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন গঠন প্রাধান্য পেয়েছে।

১৪ দলীয় জোট শরীক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ-মোজাফফর) তালিকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নাম ছিল। ন্যাপের তালিকায় নারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বেগম কবিতা খানমের নামও ছিল। ন্যাপের যুগ্মসচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে পাঁচ জনের তালিকা দেয়া হয়েছিল সেখান থেকে রাষ্ট্রপতির চূড়ান্ত বাছাইয়ে সিইসি এবং নারী কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন।

সরকার দলীয় এ জোটের অপর শরীকদল তরিকত ফেডারেশনের তালিকাতেও নতুন সিইসি’র নাম ছিল। কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরীর নামও এ দলটির তালিকায় ছিল। তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব ও সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল তাদের তালিকা থেকে উল্লিখিত তিনজনের নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমাদের তালিকায় বাকি দুজনের মধ্যে একজন সাবেক সচিব, অপরজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের নাম ছিল।

সরকারের আরেক শরীকদল বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া জানিয়েছেন, তার দলের পক্ষ থেকে দেয়া তালিকা থেকে রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম এবং শাহাদাৎ হোসেন নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, সাম্যবাদী দলের প্রস্তাবিত অপর দুটি নাম ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক  মুখ্য সচিব এম এ করিম ও সাবেক বিচারপতি এম এ রশিদ।

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র দল জাতীয় পার্টির (জেপি) তালিকায় ইসি সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রফিকুল ইসলামের নাম ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন দলটির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম। সরকারের অন্যতম শরীক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অবশ্য নিজ দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত নাম প্রকাশ করতে চাননি। তবে তিনি বলেন, এখন কমিশন হয়েছে। নিয়োগ পাওয়া সবাই আমাদেরই। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবিত নাম থেকে একজন নিয়োগ পেয়েছেন বলে জানা গেছে। এটা স্বীকার করলেও দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা সেই কমিশনারের নাম বলা উচিত হবে না বলে মত দিয়েছেন।

এদিকে গত সোমবার রাষ্ট্রপতির নির্দেশে নতুন কমিশন গঠন হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে নাম প্রকাশ করার সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, নতুন গঠিত এ নির্বাচন কমিশনে বিএনপির তালিকা থেকে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার এবং আওয়ামী লীগের তালিকা থেকে সাবেক জেলা জজ বেগম কবিতা খানমকে নেয়া হয়েছে। সে সময় অবশ্য অন্য কোন কোন দলের প্রস্তাবে বাকি তিনজনকে নেয়া হয়েছে তা প্রকাশ করেননি।

এর আগে সার্চ কমিটির সর্বশেষ বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ জানিয়েছিলেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব করা তালিকা থেকেই দশ সদস্যের চূড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। চূড়ান্ত নাম প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকটির সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে থেকে পাওয়া নামের তালিকা দিয়েই মূলত নতুন ইসি গঠন হয়েছে। তবে, সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধানসহ ৪টি পদেই সরকার সমর্থক দলগুলোর প্রস্তাবে এসেছে। বিপরীতে অন্যতম প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নেতৃত্বধীন ২০ দলের তরফ থেকে প্রস্তাব হওয়া নামের মধ্যে ১ জন নিয়োগ পেয়েছেন। 

উল্লেখ্য, আজ ৮ ফেব্রুয়ারি সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ ও অন্য তিন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে কমিশনার শাহনেওয়াজের মেয়াদ। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন গঠিত কমিশন শপথ নেয়ার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১২তম নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নির্দেশে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন হয় গত ২৫ জানুয়ারি। তাদেরকে  ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১০টি নাম প্রস্তাব করতে সময় বেঁধে দেয়া হয় প্রজ্ঞাপনে। নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগে অর্থাৎ ৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির কাছে দশটি নাম তুলে  দেয় কমিটি।  সে তালিকায় সিইসি হিসেবে সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা ও আলী ইমাম মজুমদারের নাম প্রস্তাব করা হলে রাষ্ট্রপতি প্রথমজনকে নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। 

এছাড়া কমিশনার হিসেবে মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী, আবদুল মান্নান, তোফায়েল আহমেদ, জারিনা রহমান খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ নাম প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে প্রথম চারজনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!