• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড়

‘স্যরি স্যার’


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৮, ২০১৬, ০১:১১ এএম
‘স্যরি স্যার’

নারায়ণগঞ্জে স্কুল শিক্ষককে পিটিয়ে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে কান ধরিয়ে উঠবস করানোর প্রতিবাদে সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। সোস্যাল মিডিয়ায় ঘটনার প্রতিবাদে অনেকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।

আবার এর প্রতিবাদে বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজ খোলা হয়েছে। অনেকেই এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। গত দুই দিনে এ রকম প্রায় অর্ধশত গ্রুপ পাওয়া গেছে─ যাতে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে নানা ধরনের স্ট্যাটাস পোস্ট করা হচ্ছে। একজন শিক্ষককে এমন ‘ঘৃণ্য’ উপায়ে অপদস্থ করার বিষয়ে পুরো জাতির দায় স্বীকার করেছেন কেউ কেউ।

‘সরি স্যার’, ‘ইউ আর স্যরি স্যার’, ‘কান ধরে হোক প্রতিবাদ’ লেখা হ্যাশট্যাগ দিয়ে এই ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী। প্রতিবাদ জানাতে কানে ধরা অবস্থায় তোলা নিজেদের ছবিও পোস্ট করেছেন অনেকে। স্যরি হ্যাশট্যাগে দেখা গেছে শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানে ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় অনেকেই কান ধরে নিজের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ক্ষমা চাচ্ছেন।

কান ধরে বসা একটি ছবি পোস্ট করেছেন নাট্য অভিনেতা ইরেশ যাকের। এই ছবিতেই হুমায়ুন কবির ইমন নামে একজন লিখেছেন, ‘একটা গোটা জাতি কান ধরে বসে পড়েছে! ডারউইনের বানর লেজ খসিয়ে মানুষ হয়েছিল, আজ বাঙালি মেরুদণ্ড খসিয়ে না-মানুষ! বিবর্তনবাদ, জিন্দাবাদ।’

আশিকুর রহমান শোভন নামে একজন লিখেছেন, ‘আজকে যদি আমরা এই শিক্ষকের পাশে এসে না দাঁড়াই, তবে কাল এই জনপ্রতিনিধিরা আমাকে আপনাকেও কানে ধরে উঠবস করাবে। হোক প্রতিবাদ।’

মোহাম্মদ শাহীন নামে একজন একটি দৈনিক পত্রিকার ফ্যান পেইজে কমেন্ট করেছেন, ‘একান্ন বছর বয়সী শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। তিনি দীর্ঘ ২২ বছর ধরে কেবল শিক্ষকতাই করেছেন। নারায়ণগঞ্জের মদনপুর ইউনিয়নের পিয়ার সাত্তার লতিফ হাই স্কুলের প্রধান এ শিক্ষককে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে কান ধরে ওঠবস করিয়ে সাজা দেওয়ার আগে উত্তেজিত একদল লোক মারধর করে। স্কুলের পরিচালনা কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার ওপর এই নির্যাতন চালানো হয়। শ্যামল কান্তির মতো শিক্ষকরা, যারা সমাজে নীরবে-নিভৃতে আলো জ্বালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের এভাবে জনসমক্ষে হেনস্তার খবর আজকাল বেশ সাধারণ ব্যাপার! আর কত নিচে নামলে আমরা সভ্য হব? একজন জনপ্রতিনিধি, যিনি কি না ওই শ্যামল কান্তি ভক্তের মতো হাজার শিক্ষকের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব করে চলেছেন। আর তার হাতেই পিতৃতুল্য এই শিক্ষককেই আবার হেনস্তার শিকার হতে হলো? শুধু তা-ই নয়, যেভাবে হেনস্তা করা হলো, সেটা একজন প্রবীণ শিক্ষকের জন্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রধান শিক্ষককে যেভাবে ছাত্রছাত্রী এবং জনসমক্ষে কান ধরে ওঠবস করানো হলো, তাতে একবার ভাবুন তো, ভদ্রলোকের কী অবস্থা? তার শত শত ছাত্র, স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কিংবা সমাজের সামনে ওনার অবস্থান আজ কোথায়? ক্লাসে গিয়ে উনি এখন শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দেবেন? এই বেঁচে থাকা তো মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর!’ ‘স্যরি স্যার’

ইফতেখার আমিন নামে আরেকজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার বাবাও প্রধান শিক্ষক ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের শিক্ষকের জায়গায় আমি যেন বাবাকেই দেখছি! যে জয় বাংলা শুনে উদ্বেলিত হয়ছি, আলোড়িত হয়ছি, চেতনায় শাণিত হয়েছি। সেই জয় বাংলা শুনে আজ প্রতিমুহূর্তে কুঁকড়ে যাচ্ছি। নাহ, একজন শিক্ষকের সন্তান হিসেব বিচার চাই না। ওটা হাস্যকর এদেশে এখন।’

সাংবাদিক ওমর ফারুকের কান ধরে পোস্ট করা ছবিতে আলী তালুকদার নামে একজন কমেন্ট করেছেন, ‘ইতিহাস সাক্ষী দেয়─ বঙ্গবন্ধু কোনো‍দিন শিক্ষকদের তুমি বলতেন না─ কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু। আর তার আদর্শের আনুপ্রেরণার আজ ২০১৬ তে দাঁড়িয়ে কি এই নমুনা! জাতি হিসেবে আমরা কিসের দাবি রাখবো? বাঙ্গালি জাতি তো সম্মান করতে জানে, আন্দোলন করতে জানে, বিশ্বের বুকে মাথা নত করে না─ তবে আজ আমরা কিসে মাথা নত করছি তা সুস্থ মস্তিস্কে কীভাবে নেব...?’

মো. সামিউল মুইদ লিখেছেন, ‘ক্ষমা করবেন, আপনি না, কানে ধরেছে বাংলাদেশ।’

‘কান ধরে হোক প্রতিবাদ’ নামের ফেসবুক গ্রুপের উদ্যোগে সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কান ধরে দাঁড়িয়ে’ প্রতিবাদ জানিয়েছে একদল শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আধা ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে হালকা বৃষ্টির মধ্যে তাদের এই অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি চলে।

প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম নোমান বলেন, একজন শিক্ষকের সঙ্গে এরকম অন্যায় আচরণ অনেক কষ্টের, অনেক অপমানের। স্যারের এত বড় আপমানে আমরা লজ্জিত, আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।

তিনি বলেন, আমরা জানি, বিচার চেয়ে কোনো লাভ নেই; আমরা বিচার পাব না। তাই কানে ধরে আমরা স্যারের কষ্টটা অনুভব করার চেষ্টা করেছি, যদিও তা সম্ভব না। স্যারের প্রতি ক্ষমা চাইতে ও সহমর্মিতা জানাতে আমাদের এই কর্মসূচি।

মঙ্গলবার বিকেলে ফেসবুক গ্রুপের ঘোষণা অনুযায়ী রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ করে ‘লেখক-শিল্পী-শিক্ষক-সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দ’। ওই ফেসবুকে গ্রুপের কভার ফটোতে লেখা হয়েছে, ‘একজন শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় বাংলাদেশকেই কান ধরে উঠবস করানো হয়েছে’। সমাবেশর ব্যানারে লেখা ছিল, 'শুধু একজন শিক্ষক নয় কান ধরে উঠবস করেছে বাংলাদেশে'।

উল্লেখ্য, স্কুল শিক্ষার্থীকে মারধর ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে। এমপির সামনেই এই ঘটনা ঘটে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!