• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাসে প্রথমবার স্থগিত অলিম্পিক, নিষিদ্ধ রাশিয়া


ক্রীড়া প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৯, ২০২০, ১২:১১ পিএম
ইতিহাসে প্রথমবার স্থগিত অলিম্পিক, নিষিদ্ধ রাশিয়া

ঢাকা : জাপানের রাজধানী টোকিও অলিম্পিক আয়োজনের ক্ষেত্রে যেন বরাবরই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়। ১৯৪০ সালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া আসরটি টোকিওতে হওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তা বাতিল হয়ে গিয়েছিল। পরে অবশ্য অলিম্পিকের আয়োজক টোকিও হতে পেরেছিল ঠিকই কিন্তু মাঝখানে পার হয়ে যায় ২৪ বছর। ১৯৬৪ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজন করে টোকিও তাদের যোগ্যতার জানান দিয়েছিল।

দীর্ঘ ৫৬ বছর পর ২০২০ সালে অনুযায়ী ২৪ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট সময়ের মধ্যেই অলিম্পিক আয়োজনের সকল প্রস্তুতই ঠিকঠাকভাবেই সেরে নিচ্ছিল টোকিও। নিয়তির নির্মম পরিহাস, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা এক বছর পিছিয়ে নিতে বাধ্য হয় আয়োজক কমিটি। একইসঙ্গে এক বছরের জন্য পিছিয়ে যায় টোকিও প্যারালিম্পিক গেমস।

ভাগ্যচক্রে আবারো নির্ধারিত সময়ে দ্য বিগেস্ট শো অন আর্থ সম্পন্ন করতে পারেনি টোকিও। যদিও অ্যাথলেটদের শারীরিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া অলিম্পিক থেকে নাম প্রত্যাহার করার পাশাপাশি অন্যান্য দেশের অলিম্পিক কমিটিরও আসরটি স্থগিত করার আবেদন ছিল। ব্রিটেনের ক্রীড়াবিদরাও অলিম্পিক স্থগিত করার অনুরোধ জানানোর পর আসর স্থগিত অনিবার্য পরিণতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ফলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন অলিম্পিক গেমস স্থগিত হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অলিম্পিক বাতিল করা হয়েছিল, কিন্তু কখনোই স্থগিত করা হয়নি। অলিম্পিক আয়োজনের জন্য ২০ মিলিয়ন পাউন্ড জাপান খরচ করেছিল। গেমস পিছিয়ে যাওয়ায় এই অর্থ রীতিমতো জলেই চলে যায়।

জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আমি এই গেমস এক বছর পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেছিলাম এবং আইওসি-র প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ এতে (স্থগিত) তার ১০০ ভাগ সম্মতি আছে বলে জানিয়েছেন।

আইওসি সভাপতি টমাস বাখ বলেন, আমি নিশ্চিত যে, টোকিও ২০২০ এর আয়োজক কমিটি, টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার, জাপান সরকার ও আমাদের সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে একত্রে কাজ করে আমরা এই অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ উতরে যাব।

আগামী বছরের ২৩ জুলাই শুরু হবে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত ক্রীড়াযজ্ঞটি। আর ৮ আগস্ট আসর শেষ হবে। টোকিও প্যারালিম্পিক গেমস শুরু হবে ২৪ আগস্ট, চলবে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এক বছর আসর পিছিয়ে গেলেও গেমস টোকিও অলিম্পিক ২০২০ নামেই থাকবে।

লম্বা সময়ের জন্য পিছিয়ে গেলেও মাঝের এ সময়ে অলিম্পিক মশাল জাপানেই রয়েছে। টোকিও অলিম্পিকে ১১ হাজার ৯১ অ্যাথলেটের অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। অলিম্পিক চলাকালীন স্টেডিয়ামে দর্শকদের উপস্থিতি থাকবে কি না; এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

ইতোমধ্যেই অলিম্পিককে সামনে রেখে বিক্রি হয়ে যাওয়া টিকেটের ১৮ শতাংশ ফেরত দেয়া হবে বলে আয়োজক কমিটি নিশ্চিত করেছে। গেমসের জন্য প্রায় ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন আসন জাপানের নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে।  

৪ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন বিক্রিত টিকেটের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ ১০ হাজার টিকেট ফেরত দেয়া হবে। এই টিকেটগুলো পরবর্তীতে আবারো বিক্রির জন্য ছেড়ে দেয়া হবে। জাপানের নাগরিকদের জন্য বিক্রিত টিকেট ফেরতের তিন সপ্তাহের উইন্ডো গত ৩০ নভেম্বর বন্ধ হয়ে গেছে।

প্যারালিম্পিকের জন্য টিকেট ফেরতের আবেদনের উইন্ডো ১-২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। জাপানের বাইরে অন্যান্য দেশে যারা টিকেট ক্রয় করেছেন, তাদের টিকেট ফেরতের জন্য স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অলিম্পিক এক বছরের জন্য পিছিয়ে যাওয়ার কারণে জাপানকে গুনতে হচ্ছে ২.৮ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার (২,৩৭,৪১,৫৯,৭৬,০০০) বেশি। অলিম্পিক আয়োজক কমিটি এ তথ্য জানিয়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই বিশাল অঙ্কের অর্থের জোগান দিতে টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার ১২০ বিলিয়ন, আয়োজক কমিটি ১০৩ বিলিয়ন ও জাপানিজ সরকার দেবে ৭১ বিলিয়ন ইয়েন। সবমিলিয়ে যা ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।

টোকিও অলিম্পিকের আর্টিস্টিক সুইমিং, ডাইভিং ও সুইমিং ডিসিপ্লিনের জন্য নবনির্মিত টোকিও অ্যাকুয়াটিক্স সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও করোনাভাইরাসের কারণে এর উদ্বোধন পিছিয়ে গিয়েছিল।

অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে জাপানি নাগরিকদের মধ্যে বিরাজ করছে ভিন্ন ভিন্ন মত। কেউ কেউ চান নিজ দেশে হোক অলিম্পিক। আবার কারো কারো মতে, করোনাকে উপেক্ষা করে জাপানে অলিম্পিক আয়োজন করা উচিৎ নয়।

মতের পার্থক্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত আগামী এক বছরের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক না বের হলে আবারও গেমস পেছানোর শঙ্কার ইঙ্গিতও দিয়েছেন টোকিও অলিম্পিক কমিটির প্রধান ইয়োশিরো মোরি। তার ভাষ্য, অলিম্পিক হবে কি হবে না, এটা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির উপর। করোনা ভ্যাকসিনের উপর নির্ভর করছে অলিম্পিকের ভবিষ্যৎ।

চলতি বছরের শেষে সবচেয়ে আলোচিত খবর হয়ে ওঠে অলিম্পিকে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি। ডোপিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ডিসেম্বরে রাশিয়াকে চার বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সি (ডব্লিউএডিএ)। পরে সেই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ক্রীড়ার সর্বোচ্চ আদালত কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টসে (সিএএস) আপিল করে রাশিয়া।

যার প্রেক্ষিতে সিএএস রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা দুই বছর কমানোর কথা জানায়, যা শেষ হবে ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। তবে এই সময়ে মধ্যে কোনো সব ধরনের আন্তর্জাতিক ইভেন্টে রাশিয়া নিষিদ্ধ থাকবে। এমনকি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনও করতে পারবে না ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ।

তাই টোকিও অলিম্পেকে রাশিয়ার পতাকা নিয়ে কোনো অ্যাথলেটকে মার্চপাস্টে অংশ নিতে দেখা যাবে না। তবে ডোপ কেলেঙ্কারিতে জড়িত নন এমন রুশ অ্যাথলেটরা নিজেদের জড়িত না থাকার প্রমাণ দিতে পারলে নিরপেক্ষ পতাকা নিয়ে অলিম্পিকে অংশ নিতে পারবেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!