• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকতেও কেন পিছিয়ে হকি?


ক্রীড়া প্রতিবেদক অক্টোবর ৪, ২০১৭, ০৬:২৯ পিএম
প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকতেও কেন পিছিয়ে হকি?

ঢাকা: দীর্ঘ ৩২ বছরের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে শিগগিরই। আগামী ১১ অক্টোবর ঢাকার মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে পর্দা উঠছে দশম এশিয়া কাপ হকি টুর্নামেন্টের। ১৯৮৫ সালে প্রথমবার এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। সেবার ইরানকে হারিয়ে শুরু করা লাল সবুজে দল ড্র করেছিল চীন ও জাপানের সঙ্গে। এবার কেমন করবে জিমি, চয়ন আর মিমোরা? এমন প্রশ্ন সামনে রেখে ‘এশিয়া কাপ ও বাংলাদেশের হকি’ শিরোনামে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশন (বিএসজেএ)।

বুধবার (৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের ডাচ বাংলা ব্যাংক অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারের শুরুতে ১৯৮৫ সালে এশিয়া কাপ খেলা প্রয়াত তিন সদস্য আব্দুল মালেক চুন্নু, জসিমউদ্দিন কাঞ্চন, জুম্মন লুসাই ও ম্যানেজার সাব্বির ইউসুফের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এরপর সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসজেএ-এর সিনিয়র সদস্য ক্রীড়া সাংবাদিক মোতাহের হোসেন মাসুম। তিনি ভালো খেলোয়াড় তৈরি করা, সাংগঠনিক পর্যায়ে পেশাদারিত্ব আনা,  তৃণমূল পর্যায়ে হকির প্রসার, হকির সুষ্ঠ বিপণণ ও কর্মকর্তা পর্যায়ে সংঘাত দূর করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

জাতীয় হকি দলের সাবেক অধিনায়ক ও হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদেক বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের কমতি নেই। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিজ্ঞতার অভাবের জন্য দেশের হকি অনেকটা পিছিয়ে আছে। সেই সাথে আছে মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের সংকট। ’ তিনি হকির ও ফেডারেশনের অবকাঠামোগত দূর্বলতার ব্যাপারটিতেও আলোকপাত করেন।

হকি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও সাবেক জাতীয় অধিনায়ক খাজা রহমতউল্লাহ বলেন, ‘আমি হতাশ হতে রাজি নই। অতীতের দিকে না তাকিয়ে ইতিবাচক মনোভাবে সামনের দিকে তাকানো শ্রেয়। অনেক প্রতিকূলতার মাঝে হকি এগিয়ে চলেছে এবং একে আরো উচুঁতে নেয়ার দায়িত্ব হকি সংশ্লিষ্ট সবার। বর্তমান হকি হলো পাওয়ার নির্ভর হকি স্কিল নির্ভর নয়। এই ব্যাপারে আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে।’

১৯৮৫ সালে এশিয়া কাপে হকি দলের অধিনায়ক শাহাবুদ্দিন চাকলাদার বলেন, ‘আজকের খেলোয়াড়রাও খারাপ না। তারা অন্যান্য দেশের তুলনায় সুযোগ সুবিধা কম পায় বলে পিছিয়ে রয়েছে। আমি ৪-৪-২ পদ্ধতিতে জাতীয় দলকে খেলানোর পক্ষপাতী। কারণ প্রতিপক্ষ দ্রুতগতিতে কাউন্টার অ্যাটাক করে যেটি সামলানো অত্যন্ত জরুরি। আমি ৮৫ সালে জাতীয় হকি দলের টিম স্পিরিট নিয়ে গর্ব বোধ করি।’    

সিনিয়র সাংবাদিক ও চ্যানেল ২৪ এর ক্রীড়া সম্পাদক দিলু খন্দকার বলেন, ‘ফেডারেশনের সাথে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদেরও হকির উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রয়েছে যেটি তারা কখনোই করে না। ফেডারেশন এবং ক্রীড়া পরিষদ তথা সরকার মিলে সুষ্ঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন না করলে হকি এগুবে না।’

বিশিষ্ট হকি সংগঠক ইউসুফ আলী বলেন, ‘৮৫ জাতীয় হকি দলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল অনমনীয়, লড়াকু, মনোবল ও অনবদ্য দেশপ্রেম। আমি আশা করি বর্তমান জাতীয় দলও এই বৈশিষ্ট্যগুলোতে বিশেষায়িত হবে।’

৮৫ জাতীয় দলের অন্যতম খেলোয়াড় কামরুল ইসলাম কিসমত বলেন, ‘হকির উন্নয়ন বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে যথার্থ ঐক্যের অভাবে। খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, ফেডারেশন সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে হকির উন্নয়নে।’

৮৫ জাতীয় দলের আরেক খেলোয়াড় জামিল পারভেজ লুলু বলেন, ‘৮৫ তে ঢাকার মাঠে যে কোরিয়া ৯-০ গোলে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল তারাই দুই বছর পর কোরিয়াতে পাকিস্তানকে হারিয়ে হকিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। যথার্থ পরিকল্পনা নিলে অসাধ্য সাধন সম্ভব। এটি তার প্রমাণ। এবারের এশিয়া কাপ আয়োজন দেশের হকিকে এমন কিছু দেবে বলে প্রত্যাশা করি।’

সাবেক জাতীয় অধিনায়ক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘এবারের এশিয়া কাপ হকি আমাদেরকে তিনটি জিনিষ উপহার দিচ্ছে। প্রথমটি হলো সাংগঠনিক দক্ষতা দেখিয়ে বাংলাদেশের নতুন আবির্ভাব, দ্বিতীয়টি পূর্ণাঙ্গ আধুনিক ফ্লাডলাইট সহ একটি স্টেডিয়াম ও তৃতীয়ত দেশের হকির নতুন ব্র্যান্ডিং। এশিয়া কাপের পরে বাংলাদেশের পরবর্তী লক্ষ্য কি তা এখনই নির্ধারণ করা উচিত।

দেশের অন্যতম আন্তর্জাতিক আম্পায়ার সেলিম লাকী বলেন, ‘আধুনিক হকি হচ্ছে গতির হকি। অফ সাইড নেই, বদলে গেছে শ্যূট আউটের নিয়ম, বাংলাদেশকে গতিময় হকি খেলতে অভ্যস্ত হতে হবে।’

সাবেক তারকা ফরোয়ার্ড ও এশিয়া কাপ হকি দলের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম কামাল বলেন, ‘হকির উন্নয়ন যথার্থ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ছাড়া সম্ভব না। হকি এখনো আটকে আছে এক সাগর প্রতিকূলতার মাঝে। ক্লাবগুলোকে পেশাদারী মানসিকতায় অভ্যস্ত না হলে ও খেলোয়াড়দের যথাযথ জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি না করলে হকির উন্নয়ন কষ্টসাধ্য। সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসজেএ’র সদস্য মানজুর মোরশেদ। শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিএসজেএ সাধারন সম্পাদক জুনায়েদ হোসেন। বিএসজেএ সভাপতি সাইদুর রহমান শামীম ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনারের ইতি ঘোষণা করেন।     

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!