গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে খামারিরা

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২২, ০১:১১ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় গো-খাদ্যের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে । গত কয়েক মাসের ব্যবধানে ভুষি ,ভুট্টা, চালের খুদ, খৈলসহ আনুষঙ্গিক পশুখাদ্য কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ছোট-বড় খামারি ও পারিবারিকভাবে লালন পশু পালনকারিরা। সেই সঙ্গে দিন দিন গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে গরু লালন-পালন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৬শতাধিক খামারসহ পারিবারিক ভাবে লালন পালন করছেন প্রায় ২৫ হাজারের উপর গবাদিপশু । এসব গবাদিপশুর জন্য প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ গো-খাদ্য প্রয়োজন। বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে খামারিরা বিপাকে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত চার মাস আগে প্রতি কেজি ভুষি ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৫০-৫৫ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৫০ কেজি ওজনের সয়াবিন মিলের বস্তা ১৭৫০ টাকার জায়গায় এখন ৩হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৫-২৭ টাকার ভুট্টা পাউডার এখন ৪০-৪২ টাকা, ২০-২২ টাকার চালের খুদ ৩০-৩২ টাকা, মাসকলাইয়ের ভুসি ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০-৪৫ টাকা, ৪০ টাকা কেজির খৈল ৪৫-৫০ টাকা এবং ২৫ কেজি বস্তার মিক্সড ফিড ৭৮০ টাকা থেকে দাম বেড়ে ৯৮০-১হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের খামার মালিক মো: ফরিদ মিয়া জানান, পরিবারে সচ্চলতা আনতে গত ২ বছর ধরে তিনি ছোট বড় ১০টি গরু লালন পালন করছেন। কিন্তু অস্বাভাবিক ভাবে পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এইগুলোর লালন পালনে তার খরচও কয়েকগুন বেড়ে যায়। সীমিত আয়ের সংসার হওয়ায় তার পক্ষে খরচের যোগান দিতে কষ্ট হচ্ছে। তাই তিনি এরই মধ্যে দুটি ষাড় ও একটি গাভি বিক্রি করেছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে কোরবানির ঈদের বাজারে বাকী গরুগুলো বিক্রি করবেন বলে জানায়।

খামারি মো: সিরাজ মিয়া বলেন, গত ৫ বছর ধরে তিনি কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গরু লালন পালন করে বিক্রি করছেন। গত বছর ২৫টি গরু ৫ মাস লালন পালন করে বিক্রি করেছেন। এতে তার ভালো টাকা লাভ হয়। কিন্তু এবার গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি মাত্র ১০টি গরু ক্রয় করে লালন পালন করছেন। এভাবে যদি খাদ্যের দাম দিন দিন বাড়তে থাকে তাহলে এ ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না। মো: ইব্রাহিম ভূইয়া বলেন, কৃষি কাজের পাশাপাশি তিনি বাড়িতে ‘দেশি জাতের ৭ টি গরু লালন-পালন করছেন। দুর্বা ঘাস ও খড়ের পাশাপাশি অন্যান্য গো-খাদ্য গরুকে দিতে হয়। কিন্তু যেভাবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে গরু পালন করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মো: আকবর হোসেন বলেন দীর্ঘ বছর ধরেই তিনি পারিবারিক ভাবে গরু লালন পালন করছেন। ‘গরুর প্রধান খাদ্য ধানের খড়। গত তিন মাস আগে প্রতি মণ খড় বিক্রি হয়েছে ৩শ টাকায় এখন তা ক্রয় করতে হচ্ছে ৪শ টাকার উপরে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে গরু লালন পালন করা খুবই কষ্ট হবে। খামারিদের কথা চিন্তা করে সরকারকে গো-খাদ্যের ওপর নজর বাড়ানোর দাবি জানায়।

পৌর শহরের লাল বাজার এলাকার গো-খাদ্য বিক্রেতা মো: জাবেদ খান বলেন, বর্তমানে ভুসি, ফিড, খৈল, সয়াবিনসহ সব ধরনের খাবারের দাম আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৪ মাস আগেও তার দোকোনে যে হারে গো খাবার বিক্রি হতো এখন তা অনেকাংশে কমে গেছে। অতিরিক্ত দামে ক্রয় করায় বেশী দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আশা করছি গো-খাদ্যের দাম কমে আসবে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা জুয়েল মজুমদার বলেন, গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিদের দানাদার খাবারের ওপর চাপ কমিয়ে খড় ও কাঁচা ঘাসের উপর মনোযোগ দিতে হবে। তিনি আরো বলেন শুধু দুধ বিক্রি নয়, দুধ থেকে উৎপন্ন হয় এমন খাদ্য যেমন ঘি, দই, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবার তৈরি করতে পারলে খামারিরা তাদের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই