লালমনিরহাটে মাদক চোরাচালান বেড়েছে

  • লালমনিরহাট প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২২, ০৪:৩২ পিএম

লালমনিরহাট: উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। এই জেলা বরাবরই মাদকের সয়লাব। ভারতের সীমানা রেখা পাশে হওয়ায় প্রতিনিয়তই এ জেলায় ঢুকছে মাদক। সেগুলো আবার বিভিন্ন দালাল ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে। আর এই কাজে বিশেষ কায়দায় ব্যবহার হচ্ছে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও এ্যাম্বুলেন্স।  বিশেষ করে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা হয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুর সড়ক মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে গড়াগড়ি খাচ্ছে। 

জানা যায়, গত ১ জুলাই কাকিনা ইউনিয়নের সিরাজুল মার্কেট এলাকায় একটি মাইক্রোবাসে ৩০কেজি গাঁজাসহ জাহিদ হোসেন নামের একজনকে গ্রেফতার করে লালমনিরহাট গোয়েন্দা পুলিশ। একই স্থান থেকে ২৩ জুন একটি প্রাইভেট কার তল্লাশি চালিয়ে ২৩ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে এবং গাড়ির চালক তাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। 

এদিকে গত ২৬ জুলাই লালমনিরহাট জেলা গোয়েন্দা শাখার বিশেষ অভিযানে লালমনিরহাট সরকারি কলেজ সংলগ্ন (লালমনিরহাট-বুড়িমারী) মহাসড়কে একটি প্রাইভেটকার এর তল্লাশি চালিয়ে একশত বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়। তল্লাশী চলাকালীন সময়ে কারের ভিতরে থাকা জাহাঙ্গীর আলম (৪০) সুকৌশলে পালিয়ে যায়। তবে গাড়ির চালক মিজানুর রহমানকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।  আটক মিজানুর হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব নওদাবাস গ্রামের আহম্মদ হোসেনের ছেলে, এবং গাড়িতে থাকা অপর পলাতক আসামী ওই উপজেলার বনচৌকি গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। ফেন্সিডলসহ আটকৃত প্রাইভেট কারের নম্বর ঢাকা মেট্টো খ ১৩-০৮৬৭, গাড়িটির মূল মালিক সম্পর্কে জানতে বিআরটিএর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে মালিকের নাম হারুন মাহমুদ, (ঠিকানা- বাড়ি নং ৪৩, রোড-১৬, ধানমন্ডি, ঢাকা) জানা গেছে। তবে জেলার কিছু মহলের লোকজন বলছেন, এই গাড়িটি বর্তমান মালিক সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান এমপির সহকারী সচিব এপিএস মিজানুর রহমান মিজানের স্ত্রী। এ ঘটনার পর পুরো জেলা জুড়ে চাল্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।  লালমনিরহাট গোয়েন্দা শাখার ওসি আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক ভাবে গাড়ি চালকসহ দুই জনকে আসামী করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গাড়িটির মালিকানা যাচাইয়ে বিআরটিএ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য চাওয়া হবে। এই মুহুর্তে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। 


পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনের অভিযানে জেলার হাতীবান্ধার টংভাঙ্গা ইউনিয়নে ৯ জুন রাতে মাইক্রোবাস হতে ২৫কেজি গাঁজাসহ চালক সুজন মিয়াকে গ্রেফতার করে, ২৮মে আদিতমারীর খাতাপাড়া এলাকায় ৮কেজি গাঁজাসহ আতিক হাসানকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এদিকে কালীগঞ্জের চাপারহাটে বিভিন্ন ট্রাকে করে বাঁশ লোড হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়, এই বাঁশের ভিতর বিশেষ কায়দায় মাদক পাচার হয়। সেই সাথে একই কায়দায় মাদক যায় আদিতমারীর বামোনের বাসা, আমেনা বাজার, হাজীগঞ্জ, ভেলাবাড়ি ও দূর্গাপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে। এদিকে চাপারহাট হয়ে ঢাকাগামী নাইট কোর্স বাসগুলোতে মাদক চোরাকারবারী হয় বলে জানা গেছে।  

এসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রত্নাই থিয়েটারে সাধারণ সম্পাদক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শামীম আহমেদ বলেন, এখন তো শুনতেছি মাদক মানেই কালীগঞ্জের নাম, শহর থেকেও নাকি মাদক খেতে সেখানে ছুটে যায় বিভিন্ন লোকজন, এছাড়াও সদরের তিস্তা টোল প্লাজাতেও নেই আগের মতো পুলিশের গাড়ি চেকিং এর ব্যবস্থা, যারা কদিন আগেও চলতে পারেনি তারাও এখন প্রাইভেট কারের মালিক। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, প্রদীপের নীচে অন্ধকার ক্ষমতার পিছে চাটুকারের কারনে এখন কিছু লোক অবৈধ উপার্জনের জন্য কার ও মাইক্রোবাসের মালিক হয়ে মাদক পারাপার করছেন সে বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারী কম থাকায় কেউ কেউ হিরহির করে আঙ্গুল ফুলে কলার গাছ হচ্ছেন। 

এ বিষয়ে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদায়ন) আবিদা সুলতানা সাংবাদিকদের জানান, মাদকের সাথে সম্পৃক্ত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে। প্রতিদিনেই আমাদের পুলিশ অফিসাররা বিভিন্ন রুটে অভিযান পরিচালনা করছেন। আশা করি কেউ ছাড় পাবে না। 

সোনালীনিউজ/এসএ/এসআই