নোয়াখালীর চাটখিলে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে নূরানী হাফিজিয়া মাদরাসার হিফজ বিভাগের ছাত্র আকরাম হোসেন (১২)। শনিবার (২৯ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নোয়াখালী ইউনিয়নের বিষ্ণুরামপুর গ্রামে অবস্থিত মাদরাসায় এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরদিনই জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। আকরামের মৃত্যুর মুহূর্তের সিসিটিভি/ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে শোক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিবার, সহপাঠী ও শিক্ষকদের মাঝে নেমে এসেছে গভীর বিষাদের ছায়া।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ফারুক হোসেনের বড় ছেলে আকরাম ইতোমধ্যে ১৫ পারা হিফজ সম্পন্ন করেছিল। অল্প বয়সেই সে মেধা ও আচরণে শিক্ষকদের মন জয় করেছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্যান্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজে অংশ নেওয়ার সময় শেষ বৈঠকে আকরামের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীরা দ্রুত তাকে ধরে বাইরে নিয়ে আসে এবং শিক্ষক ও মুয়াজ্জিনকে খবর দেয়। আকরামের মামা মাওলানা বোরহান উদ্দীনসহ মাদরাসার শিক্ষকরা ছুটে আসেন। পরে তাকে চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আকরামের ঘনিষ্ঠ সহপাঠী আব্দুল হান্নান বলেন, “সে শুধু বন্ধু ছিল না, ছিল আমাদের হাসির উৎস। তার হঠাৎ চলে যাওয়া আমাদের হৃদয়ে বড় শূন্যতা তৈরি করেছে।”
হাফিজ মাওলানা ইয়াসিন আরাফাত জানান, “আকরাম ছিল অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী ও অধ্যবসায়ী। তার মত শিক্ষার্থী বিরল।”
মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজ মাওলানা মহিউদ্দিন বলেন, “১৬ পারা কোরআন মুখস্থের পথে ছিল সে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো হিফজ শেষ করত। এমন প্রতিভাবান শিশুর মৃত্যু আমাদের শিক্ষাঙ্গনের বড় ক্ষতি।”
নিহতের মামা মাওলানা বোরহান উদ্দীন জানান, দাফনের সময় গ্রামের মানুষসহ স্বজনরা অঝোরে কেঁদেছেন। পরিবারের সদস্যরা এখনো আকরামের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না।
চাটখিল থানার ওসি মোহাম্মদ ফিরোজ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। পরিবার আকরামকে নিজ এলাকায় দাফন করেছে। আমরা বিষয়টি যাচাই করেছি এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।”