জামায়াতের কাছে ২২০ আসনের দাবি, ইসলামি ঐক্যের কঠিন সমীকরণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামপন্থি রাজনীতিতে চলছে নীরব কিন্তু জটিল সমীকরণ। লক্ষ্য একটাই-ইসলামি দলগুলোর সব ভোট এক বাক্সে আনা। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে কেন্দ্র করে আটটি দল আসন সমঝোতার পথে অনেক দূর এগোলেও শেষ মুহূর্তের হিসাব এখনো মেলেনি।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে-আসন সমঝোতার প্রশ্নে সবচেয়ে বড় চাপটি পড়েছে জামায়াতের ওপরই।

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সমমনা ইসলামি দলগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে উদ্যোগ নেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সর্বোচ্চ ছাড়ের মানসিকতা নিয়ে শুরু হওয়া এই উদ্যোগে গত ১৬ মাসে আটটি দল অনেক কাছাকাছি এসেছে। পাঁচ দফা আন্দোলনের পাশাপাশি অভিন্ন প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে তারা।

তবে সমঝোতার টেবিলে হিসাব বদলাচ্ছে শরিকদের দাবি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। শুরুতেই জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও এখন শরিক দলগুলো মিলিয়ে দাবি করছে প্রায় ২২০টি আসন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১২০টি আসনে আগ্রহ দেখিয়েছে। খেলাফত মজলিস চেয়েছে ৩০টি আসন। খেলাফত আন্দোলন চাইছে ২০টি আসন। অন্য কয়েকটি দলও কমপক্ষে ১০টি করে আসনের দাবি তুলেছে। এই অবস্থায় জামায়াতের সামনে বড় প্রশ্ন-শেষ পর্যন্ত নিজেদের হাতে কতটি আসন থাকবে।

জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বশীলদের ভাষ্য অনুযায়ী, সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই হবে আসন বণ্টনের একমাত্র মানদণ্ড। যাকে যেখানে দিলে বিজয় নিশ্চিত হবে, তাকেই প্রার্থী করা হবে-দলীয় পরিচয় সেখানে মুখ্য নয়। এই নীতির ভিত্তিতেই ইসলামপন্থিদের সব ভোট এক বাক্সে আনার চেষ্টা চলছে।

শরিক দলগুলোর নেতারাও একই সুরে কথা বলছেন। তাদের মতে, আটটি দল এখন কার্যত এক দলের মতোই কাজ করছে। আসন চূড়ান্তের আগে কোনো দাবিকেই চূড়ান্ত বলা যাচ্ছে না। কয়েকটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন নিয়েও আলোচনা চলছে, যা সমঝোতার প্রক্রিয়াকে আরও সংবেদনশীল করে তুলেছে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রতিটি দল নিজ নিজ মাঠ জরিপের ভিত্তিতে সম্ভাব্য বিজয়ী আসনের তালিকা প্রস্তুত করেছে। বৃহত্তর ইসলামি ঐক্যের স্বার্থে সবাই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা প্রকাশ করলেও বাস্তব সমঝোতায় গিয়ে সেই ছাড়ের সীমা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

মনোনয়ন জমার সময়সীমা ঘনিয়ে আসছে। দু-এক দিনের মধ্যেই লিয়াজোঁ কমিটি চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ইসলামপন্থি রাজনীতির এই ঐক্য পরীক্ষায় শেষ পর্যন্ত কে কতটা ছাড় দিচ্ছে, তারই ওপর নির্ভর করছে এক বাক্সে ভোটের স্বপ্ন কতটা বাস্তব রূপ পায়।

এসএইচ