ঊর্ধ্বমুখী অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা, প্রণোদনায় স্বস্তি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২০, ০৩:১৫ পিএম
ফাইল ফটো

ঢাকা: দেশের অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ২০২০ সাল শুরু হয়। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন হবে এমনটি প্রত্যাশা ছিল সরকারের। কিন্তু মার্চ থেকে শুরু হয় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর অকল্পনীয় ধাক্কায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে অর্থনীতি।

মহামারি করোনা মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সব মিলিয়ে ২১টি প্যাকেজে মোট ১,২১, ৩৫৩ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এরফলে কিছুটা স্বস্তি ফিরে সামগ্রিক অর্থনীতিতে।

বৈশ্বিক এই্ মহামারির কারনে বড় ধরনের ধস নামে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের উৎপাদনে। ভাটা পড়ে আমদানি ও রফতানি এবং রাজস্ব আহরণে। ফলে শেষ পর্যন্ত গেল অর্থবছরের শেষ তিন মাস (এপ্রিল-জুন) এই বিপর্যয়ের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি।

অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। যা ২০০৮ সালের পর জিডিপিতে এত বড় আঘাত আর আসেনি। কিন্তু এবার কোভিড-১৯’র মহামারীতে অর্থনীতির বিপর্যয়ে বিশ্ব প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশও।

এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার কারণে রফতানি পণ্যের অর্ডার বাতিল হয়। এতে রফতানি আয়ে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প উৎপাদন হ্রাসের কারণে ধস নামে রাজস্ব আহরণে।

অপরদিকে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় এ বছর স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের অস্বাভাবিক ব্যয় বেড়েছে। আয় ও ব্যয়ের এই ভারসাম্যহীনতার প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির ওপর; তবে তা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই কম। এই ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ঋণনির্ভর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে অনেক বেশি মাত্রায় ঋণ নিয়েছে সরকার।

করোনায় নতুন করে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসামীর নিচে নেমে গেছে। এই হিসাব সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস)।

শেয়ারবাজারের টানা পতন ঠেকাতে এ বছর নতুন এক পদ্ধতি আরোপ করা হয়। বেঁধে দেওয়া হয় শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম, নতুন এ পদ্ধতির নাম দেওয়া হয় ফ্লোর প্রাইস। গত ১৯ মার্চ থেকে এ ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়।

এরপরে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে শেয়ারবাজারে লেনদেনও বন্ধ হয়ে যায়। ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন লেনদেন বন্ধ ছিল।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধনে একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৮ ডিসেম্বর দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডিএসইর বাজার মূলধন ৪ লাখ ৪১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যদিও ছয় মাস আগে হতাশার কেন্দ্রবিন্দু ছিল দেশের শেয়ারবাজার। গত জুলাই মাসের শুরুতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা

প্রবাসী আয় বৃদ্ধি ও আমদানি কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুত নতুন নতুন উচ্চতা ছুঁয়ে গেছে। করোনার মধ্যে রিজার্ভ ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার থেকে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়।

সরকারের প্রণোদনা ও হুন্ডি বন্ধ হওয়াতে করোনা মহামারিতেও রেমিট্যান্স আসছে আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনে ৮১ কোটি ৪০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে এসেছে ২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯ সালের পুরো সময়ের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। এর আগে এক বছরে বাংলাদেশে এত রেমিট্যান্স আর কখনও আসেনি।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, অক্টোবরে ধাক্কার পর নভেম্বরে ফের প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রফতানি আয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহামারি করোনার কারণে যে ধাক্কা লেগেছে রফতানি খাতে, আগামী মার্চ-এপ্রিল থেকে সেই ধাক্কা কেটে যাবে। শুধু তাই নয়, তৈরি পোশাক রফতানিতে বড় উল্লম্ফন ঘটতে পারে।

অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির পর থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়তে পারে। যারা টিকা পেয়ে যাবেন তাদের কেনাকাটা, ভ্রমণ ও ভোগ ব্যয় বাড়বে। এতে করে আমাদের রফতানি খাত দ্রুত এগিয়ে যাবে। এরই মধ্যে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে রফতানি বাণিজ্য।

মাথাপিছু আয় প্রথমবারের মতো দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২০৭৪ ডলার। গত এক দশকে মাথাপিছু আয় আড়াই গুণ হয়েছে।

মহামারি করোনাকালে যেখানে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশে কোনও প্রবৃদ্ধিই হচ্ছে না, সেখানে বাংলাদেশ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৮ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি আশা করছে। এর আগে টানা তিন মাস লকডাউনের কারণে সব কিছু বন্ধ থাকার পরও গত অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। 

সোনালীনিউজ/এলএ/এমএইচ