করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

সীমান্তে কঠোর হচ্ছে সরকার

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২১, ১১:২২ পিএম

ঢাকা : বর্তমানে করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলা। কারণ প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনার ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে যাওয়ার সীমান্তের সাত জেলা নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। ফলে এসব জেলায় লকডাউনের মতো সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আগেই দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি এসব জেলায় লকডাউন কীভাবে পুরোপুরি কার্যকর করা যায়, সেটা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশনা আসছে শিগগির।

এদিকে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধ) মেয়াদ আরো ১০ দিন বাড়ল। ৬ জুন মধ্যরাত থেকে ১৬ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে রোববার (৬ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা ৬ জুন মধ্যরাত থেকে ১৬ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। এবারের বিধিনিষেধে কয়েকটি বিষয় নতুন যা যুক্ত হলো তার মধ্যে রয়েছে-সব পর্যটনস্থল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, ওয়ালিমা, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। খাবারের দোকান ও হোটেল রস্তোরাঁগুলো সকাল ছয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খাদ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করতে পারবে এবং আসনসংখ্যার অর্ধেক সেবাগ্রহীকে সেবা দিতে পারবে। অর্থাৎ হোটেলে বসে খাওয়া যাবে। এর আগে সময় বেধে দেওয়া ছিল না। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করতে হবে। বহন করা যাবে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী।

বিআরটিএ’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে বর্তমান ভাড়ার অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ ভাড়া আদায় করা যাবে। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় মেনে চলতে হবে।

রেলওয়ে সরকারি নির্দেশনা অনুসারে, ট্রেনের মোট আসনের অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে ট্রেন পরিচালনা করবে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকরা সংশ্লিষ্ট কারিগরি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে নিজ নিজ এলাকার সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।

অন্যদিকে চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার। পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। তবে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ এবং ট্রেন চলাচল ঈদ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরে ২৪ মে থেকে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়।

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত ও করোনার সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকায় ২৪ মে রাত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে, যা এখনো চলছে।

এরপর গত ৩১ মে ঝুঁকিপূর্ণ সাত জেলাকে লকডাউনের আওতায় আনতে সুপারিশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটি। ওই সাত জেলা হলো- রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর।

এ ছাড়া নোয়াখালী ও কক্সবাজারের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। এর মধ্যে সাতক্ষীরা ও নোয়াখালী জেলায় পুরোপুরি এবং নওগাঁ ও কক্সবাজারের পাঁচ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না আক্রান্ত-মৃত্যুর হার।

এমন অবস্থায় দেশে চলমান ‘লকডাউন’ আরো ১০ দিন বাড়াল সরকার। এর মধ্যে আজ সোমবার মন্ত্রিসভা থেকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বিধিনিষেধ আরো কঠোর করার সিদ্ধান্ত আসাতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ভারতীয় করোনা ভাইরাসের ধরন ছড়িয়ে যাওয়ার সীমান্তবর্তী সাত জেলার বিষয় উদ্বিগ্ন সরকার। সেসব জেলায় কীভাবে লকডাউন আরো কার্যকর করা যায়, সেটা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশনা আসতে পারে।

এদিকে টানা পাঁচ সপ্তাহ মৃত্যু নিম্নমুখী থাকার পর রোববার শেষ হওয়া সপ্তাহ থেকে মৃত্যুতেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় মৃত্যু বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভাগ হিসাবে মৃত্যু বেড়েছে রাজশাহীতে। আগের সপ্তাহের তুলনায় রাজশাহীতে মৃত্যু বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। খুলনা বিভাগে প্রায় ৪২ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে। আর ঢাকা বিভাগে মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ।

লকডাউনের বিষয়ে মেয়র ও স্থানীয় এমপিরা, জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জনরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি বলেছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনের প্রস্তাব স্থানীয় পর্যায় থেকে এসেছিল। আমরা তাদের প্রস্তাবে সায় দিয়েছি। অন্যদেরও আমরা বলে দিয়েছি, যেখানে জরুরি প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার সেটা তারা নিতে পারবেন।

অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় চলতি মাস গত মাসের মতো স্বস্তিকর যাবে না বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল দুপুরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে আমাদের পজিটিভ রেট বেড়ে গেছে। যদিও ৯২ ভাগ মানুষ সুস্থ হয়ে যাচ্ছে, সে জন্য আমরা আনন্দিত। সংক্রমণের দিক থেকে আমরা সাত থেকে আট শতাংশ নিচে নেমে এসেছিলাম। সেটি ক্রমাগত বেড়ে গেছে। গত এক মাসের চিত্র লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আমরা ওই পর্যায়ে নেই যেখানে বলতে পারি আমরা স্টেবল। আমাদের ট্রান্সমিশন আনস্টেবল হয়ে গেছে।

২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত যে চিত্র দেখতে পাই, এপ্রিলের ভয়াবহতা আমরা ট্যাকেল করতে পেরেছি। জুন মাস যখন শুরু হয়েছে, মাত্র ছয় দিন। এর মধ্যে আমরা আট হাজারের বেশি করোনায় আক্রান্ত মানুষকে শনাক্ত করেছি। এই মাসটি গত মাসের মতো স্বস্তিকর যাবে বলে মনে হচ্ছে না।

রোবেদ আমিন বলেন, আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ে যেসব হাসপাতালগুলো আছে, সেখানে সেবা দেওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লো ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাই। হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলার আগে আমার নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সাপ্লাই নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ এটি হলো জীবন রক্ষাকারী।

যারা মুমূর্ষু অবস্থায় চলে যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই লো ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। যে কারণে একটি মেডিকেল টিম সেন্ট্রাল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান করছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, জরুরি রোগী ছাড়া যেন কাউকে ভর্তি নেওয়া না হয়। প্রয়োজনে পুরো হাসপাতাল করোনা সেবায় ব্যবহার করা হবে। প্রান্তিক অন্য এলাকায়গুলোতেও তা-ই বলা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই