রাজনীতিতে নির্বাচনী হাওয়া

বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ৪ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি

  • বিশেষ প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১, ০৯:৪৮ পিএম

ঢাকা: এখনও বাকি প্রায় আড়াই বছর। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২০২৩ সালের শেষের দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো।

ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পুরো ভোটগ্রহণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ইসি। আর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ বছরই কেনা হচ্ছে আরো প্রায় ৩৫ হাজার ইভিএম মেশিন। সব মিলিয়ে দেশের রাজনীতিতে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন: ঘর গোছানোর পাশাপাশি শরিক বাড়ানোর চিন্তা আ.লীগের

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আবারো কারসাজির নির্বাচনের শঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এতে জাতি হিসেবে চরম সংকটের দিকে ধাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন না হলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথও রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক দুর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে তুলতে হবে। নইলে সুষ্ঠু নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত দাবি আদায় করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে রাজনীতির মাঠে তুলনামুলক কোণঠাসা বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন টার্গেট করে ভেতরে ভেতরে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। নিয়েছে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ। প্রথমেই তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন গুছিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ রয়েছে। এরপর সুনির্দিষ্টভাবে চারটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে এক দফা দাবিতে ‘নতুন রূপে’ আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: নেতৃত্বের সংকট বিএনপিতে

এবারের আন্দোলনকে ‘বাঁচা-মরার’ লড়াই হিসেবে বিবেচনায় নিয়েই ঢাকার রাজপথ দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। 

সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে দলটির হাইকমান্ড।

একইসঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির হাত ধরে জামায়াতই ক্ষমতায় আসবে-আওয়ামী লীগ যেন এমন প্রচার চালাতে না পারে এমন পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। এ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্ট, বাম, ইসলামী দলসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করা হয়েছে। 

বিএনপি দলীয় সূত্র জানায়, দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে ডান-বাম সব রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে এক প্ল্যাটফরমে একত্র করতে চায় দলটি।
এ ব্যাপারে দলের পক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। অভিন্ন দাবিতে প্রথমে দলগতভাবে আদর্শভিত্তিক যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি এবং পরে একমঞ্চ থেকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি।

আরও পড়ুন: আদর্শিক দ্বন্দ্বে ধুঁকছে রাজনীতি

এরই মধ্যে ২০ দলকে কার্যত ‘নিষ্ক্রিয়’ করে রাখার কৌশল চলছে, যাতে বৃহত্তর ঐক্যজোটের পথে অন্যতম বাধা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে ধীরে ধীরে জোটের বাইরে ঠেলে দেওয়া যায়।

সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ‘সখ্য’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশে-বিদেশে ‘ব্র্যান্ডিং’ করে লাভবান হয়েছে। এবার জামায়াত ইস্যু থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসতে এবং বিদেশিদের সামনে নিজেদের নতুন অবস্থান পরিষ্কার করতে চায়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাতে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। জোটবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই বর্তমান দুঃসময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। খুন-খারাবি, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারের মাত্রা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা থাকতে পারে না।

তার মতে, কেউ এসে আমাদের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবে না। গণতন্ত্র, মানুষ ও দেশ বাঁচাতে দেশের তরুণ সমাজ উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এদেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয় না। 

দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ও আগামী নির্বাচন নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সংগঠনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০১৪ সালের একতরফা ও ২০১৮ সালে মধ্যরাতের নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আবারো কারসাজির নির্বাচনের শঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জাতি হিসেবে চরম সংকটের দিকে ধাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন না হলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথও রুদ্ধ হয়ে যাবে। এটি কারো জন্য মঙ্গলজনক হবে না।

এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে আমরা আশা করব, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে দেশকে সংকটের হাত থেকে রক্ষা করবে। একই সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বে সংকট রয়েছে। তারা এ সংকটের উত্তরণ ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক ও দায়বদ্ধ দলে পরিণত হবে। বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় না।

সোনালীনিউজ/আইএ