সাংগঠনিক সফর শুরু শিগগিরই

অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে কাজ শুরু করেছে আ.লীগ

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১, ০৩:৫৯ পিএম

ঢাকা : আগামী সংসদ নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার দুদিনের মাথায়ই স্থানীয় ও তৃণমূল পর্যায়ে নিজেদের মধ্যে থাকা বিরোধ ও দ্বন্দ্ব নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

এছাড়া করোনার কারণে বন্ধ থাকা সাংগঠনিক কর্মকান্ডে গতি আনতে কেন্দ্রীয় নেতারা সফর শুরু করেছেন।

এর মধ্যে মাদারীপুর আওয়ামী লীগে কেন্দ্রীয় দুই নেতা সভাপতিম-লীর সদস্য শাজাহান খান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য।

গত বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সামনেই দুই নেতা একে অন্যের বিরুদ্ধে কথা বলেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এ সময় দলীয় সভাপতি দুজনকেই ধমক দিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন। শুধু মাদারীপুরেই নয়, দলীয় সভাপতি

তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত যেখানে যেখানে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল রয়েছে সেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং দ্রুত এগুলো মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন।

শাজাহান খান ও বাহাউদ্দিন নাছিমকে সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেছেন, একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে না পারলে তিনি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন। জেলার নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকেরও নির্দেশ দেন সভাপতি।

তারা আরও জানান, এছাড়া বৈঠক থেকে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ও সরকারের বিরুদ্ধে অনলাইনে নানা গুজব ও অপপ্রচার চলতে পারে এমন আশঙ্কা করে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। গত বছর অক্টোবরে নির্বাহী সংসদের সভায় সাংগঠনিক সফরের জন্য গঠিত আটটি টিমের কাজ দ্রুত শুরু করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগদলীয় সূত্র জানিয়েছে,নির্বাহী সংসদের সভার এক দিন পর থেকেই তৎপরতা শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মাদারীপুরে শাজাহান খান ও বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে নমনীয় সুর তৈরি হয়েছে। দুই নেতাই আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি হয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে চান তারা। কয়েক দিনের মধ্যেই জেলার নেতারা ঢাকায় বৈঠক করবেন।

গত শুক্রবার শাজাহান খান বৈঠকের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলে বাহাউদ্দিন নাছিম তাতে সায় দেন। মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বৈঠকের উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন শাজাহান খান।

অন্যদিকে একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন বাহাউদ্দিন নাছিম।

এ বিষয়ে শাজাহান খান বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছেন সবাইকে নিয়ে বৈঠক করতে, আমি করব। আমি বৃহস্পতিবার বৈঠকের পরই মাদারীপুর নিজ এলাকায় গিয়েছি। সেখানে জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। এখন আসলেই বিরোধের সময় নেই। দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে নেত্রী (শেখ হাসিনা) সবাইকে নিয়ে কাজ করতে বলেছেন আমাকে। সবাইকে ডেকে কথা বলতে বলেছেন।

আমি বলেছি, আপনি যখন নির্দেশ দিয়েছেন ইনশাআল্লাহ আমি সেটা করব। জেলার নেতাকর্মীরাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে চান।’

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গত রোববার মাদারীপুরে এক অনুষ্ঠানে ঐক্যের কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘ঐক্যই আমাদের শক্তি।’ পরে তিনি বলেন, ‘নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই আমরা পালন করব। সবাই মিলেমিশে কাজ করলে দেশ আরও সামনে এগিয়ে যাবে। আমি চাই দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা যেন তার প্রাপ্য সম্মানটুকু পায়। তাদের পরিবার ত্যাগী নেতাদের মৃত্যুর পর যেন মূল্যায়ন পায়।’

করোনার কারণে প্রায় এক বছর পর গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হয়। সভায় দলের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘মাদারীপুর অনেকজন কেন্দ্রীয় নেতার জেলা। এখানেই কোন্দল বেশি।’

বৈঠক সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার নির্বাহী সংসদের সভায় শাজাহান খান ও বাহাউদ্দিন নাছিম নিজেদের মধ্যে তর্কে জড়ান। জেলার আরেক নেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপও তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে মিলেমিশে সাংগঠনিক কাজ করার নির্দেশ দেন।

শাজাহান খান, বাহাউদ্দিন নাছিম ও ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এই জেলার আরও চারজন নেতা রয়েছেন।

জানা গেছে, মাদারীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলে দুই নেতার কথায়। জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় সবাই আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে রয়েছেন।

অন্যদিকে সাবেক জাসদ বা জাসদ আওয়ামী লীগপন্থি নেতারা রয়েছেন শাজাহান খানের সঙ্গে। এলাকায় গেলে বাহাউদ্দিন নাছিম পুরানবাজারে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বসেন। সেখানে দলের সব সহযোগী সংগঠনেরও অফিস।

অন্যদিকে শাজাহান খান তার নিজের বাড়ির সামনে নিজের পরিবহনের একটি অফিসে বসেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো কর্মসূচিতেও শাজাহান খানকে দেখা যায় না।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফরের বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন ও সম্মেলনকে সামনে রেখে আমরা গত বছর থেকেই কাজ শুরু করেছি। আমাদের লক্ষ্য তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘দলের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। রয়েছে প্রতিযোগিতা। আমরা সবসময় কাজ করছি। জেলা ও উপজেলা সম্মেলনের কাজ শুরু করেছি। করোনার মধ্যে দলীয় কাজ না করলেও তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীরা মানুষের সেবা দিয়েছে। সমুদ্রের জল যেমন কখনো শুকাবে না তেমনি আওয়ামী লীগের কাজও চলতে থাকবে। দলীয় সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা মাঠে আছি।’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার রোধে এক লাখ অনলাইন অ্যাকটিভিস্টের সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ শুরু করছে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটি। এ লক্ষ্যে সারা দেশে অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করছে তারা।

গত শনিবার এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অন্তর্গত থানাসমূহের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদকদের নিয়ে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) কাউন্সিল মিলনায়তনে ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালা আয়োজন করা হয়।

এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।

সোনালীনিউজ/এমটিআই