ঢাকায় ছাড় বাইরে কঠোর

জোড়ালো হচ্ছে বিরোধী আন্দোলন

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২২, ০১:৪৪ পিএম

ঢাকা : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে সরকারের ওপর নানামুখী চাপ যেন ততই বাড়ছে। সরকারবিরোধী জোড়ালো আন্দোলনের জন্য বৃহত্তর প্ল্যাটফরম গড়ে তুলতে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে বিএনপি।

জামায়াত ছাড়াই লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যদিয়েই এ সরকারকে হটানো যাবে বলে মনে করে দলটি। তবে হরতালের মতো কোনো কঠোর কর্মসূচি না দিলেও সরকারের আচরণের ওপরই নির্ভর করবে তাদের শেষ পর্যন্ত সে ধরনের কর্মসূচি দিতে হয় কিনা।

দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, চলমান দুঃশাসন থেকে রেহাই পাবার জন্য বিরোধী দলগুলোকে জনগণের পক্ষে একটা কার্যকর ঐক্য দেখতে চায় মানুষ। তাই আমরা যৌথভাবেই নিজ নিজ জায়গা থেকে কঠোর আন্দোলন শুরু করবো। রাজনৈতিক দলগুলো একজোট হয়ে কাজ করলে আমরা অবশ্যই এই দুঃশাসনকে পরাজিত করে জনগণের বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হবো।

আরও পড়ুন : আওয়ামী লীগের সামনে দুই চ্যালেঞ্জ

২০২৩ সালের শেষ নাগাদ বা ২০২৪ সালের প্রথমার্ধ্বে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে হিসেবে প্রায় দেড় বছর বাকি আছে নির্বাচনের। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, এ অবস্থানে অনড় বিএনপি।

তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার মাস খানেক আগ থেকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোরেশোরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর অংশ হিসেবে প্রায় ১২০টির বেশি আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি।

আরও পড়ুন : বাদ পড়ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দোটানায় সরকার

জামায়াতের সর্বোচ্চ ফোরাম নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য জানান, আগামী নির্বাচনে জামায়াত একা নির্বাচন করার প্রস্তুতি হিসেবেই প্রার্থী ঘোষণা করছে। জামায়াত নির্বাচনমুখী দল তাই আগে থেকেই প্রার্থীদের মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন।

কারণ বিএনপি যেসব রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করেছে তারমধ্যে ৫টি দল ইতিমধ্যে সাত দলীয় নতুন রাজনৈতিক জোট নামে গণতন্ত্র মঞ্চে যোগ দিয়েছে। তাই বিএনপির বৃহত্তর সর্বদলীয় ঐক্য নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তবে বিএনপি এই ঐক্য নিয়ে খুবই আশাবাদী।

দলটি বলছে, যে ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে তারা সবাই সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে বিএনপির সাথে ঐক্যমত হয়েছে। আর তাদের সাথে আলোচনায় বিএনপি অত্যন্ত সন্তুষ্ট। কারণ সব রাজনৈতিক দলই বলেছে যে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। বিএনপিরও এটা মূল দাবি। তাই ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে না দলটি।

আরও পড়ুন : বিএনপির বড় উইকেট পড়ে গেছে

গত ২৪ মে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে বিএনপি। এ পর্যন্ত ২২টি দলের সঙ্গে তাদের সংলাপ হয়েছে।

দলগুলো হচ্ছে- মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আসম আবদুর রবের জেএসডি, মোস্তফা মোহসিন মন্টুর গণফোরাম এবং জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে যাদের সঙ্গে দলটি এ পর্যন্ত সংলাপ করেছে সেগুলো হলো-লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ইসলামী ঐক্যজোট, কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), মুসলিম লীগ, জাতীয় দল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ডেমোক্রেটিক দল (ডিএল), সাম্যবাদী দল, পিপলস লীগ, ন্যাপ-ভাসানী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ইসলামিক পার্টি এবং বাংলাদেশ ন্যাপ।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এ সরকার বিরোধী আন্দোলনের ব্যাপারে বিএনপির মধ্যে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এটাকে আমরা আরো জোরদার করবো এবং আন্দোলনকে আরো সমন্বিত করবো।

আমরা মনে করি, আন্দোলনের মধ্যদিয়ে গণআন্দোলন ও গণসংগ্রামের মধ্যদিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, তদারকির সরকার, অবাধ গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে হবে। সে কারণেই আমরা আলাপ-আলোচনা করে আন্দোলনে ঐক্যমত হয়েছি।

দেশবাসীকে আমরা আহ্বান জানাতে চাই, আজকে বিরোধী দলগুলো যে উদ্যোগ নিয়েছে মানুষ তার নিজ নিজ জায়গা থেকে এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়াবেন এবং তারা আন্দোলনের সাথী হবেন।

সাইফুল হক বলেন, শুধুমাত্র সরকার পরিবর্তনের জন্য আমাদের এই আন্দোলন নয়। পুরো রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা, বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, পরিবর্তন, একই সাথে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কারসহ এখানে রাষ্ট্র প্রশাসনের গণতান্ত্রিক যে সংস্কার এবং আমাদের এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যেভাবে নাগরিকদের ওপরে একটা সহিংস ভূমিকায় আবির্ভূত হয় এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে যেভাবে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়-এই জায়গাগুলোর ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন।

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফেরাতে যুগপৎ আন্দোলন করা হবে। বর্তমান সরকারে অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া এবং সম্মিলিতভাবে সরকার বিরোধী আন্দোলন করার ব্যাপারে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদ একমত হয়েছে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর প্ল্যাটফরম গড়ে তুলতে বিএনপি আমাদের সঙ্গে সংলাপ করেছে। এ বিষয়ে পরে আর কোনো কথা হয়নি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর প্ল্যাটফরম গড়ে তুলতে বিএনপি আমাদের সঙ্গে সংলাপ করেছে। আবারো বসার কথা ছিল। কিন্তু এরপরে বিএনপির সঙ্গে আর আমাদের কোনো কথা হয়নি। তবে বিএনপি কথা বলতে চাইলে আমরা কথা বলবো।

বৃহত্তর সর্বদলীয় ঐক্যের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়া ঘনিয়ে এসেছে। আর এখনো সংলাপ চলছে। তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য হবে।

এদিকে, বিএনপি যে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর প্ল্যাটফরম গড়ে তুলতে চাচ্ছে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। আর এই ঐক্য গঠন করলে ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থাকবে কি থাকবে না তা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। কারণ ২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে বৃহত্তর প্ল্যাটফরম করলে সেটা কোনো ঐক্য হবে না বলে মনে করছেন জোটের শীর্ষ নেতারা।

এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা বলেন, সংলাপ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ বিএনপি বলছে, ঐক্য হলে ২০ দলীয় জোট থাকবে না। জোট ভেঙে দেওয়া হবে। এজন্য বিএনপি ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রেখে ঐক্য করবে না কি এই জোট ভেঙে দিয়ে করবে-সেটা বিএনপিকে আরো স্পষ্ট করে বলতে হবে। কারণ জোট ভেঙে দিয়ে ঐক্য করলে সেটা তো কোনো ঐক্য হবে।

২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে ঐক্য করা হবে কি না জানতে চাইলে বেগম সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে ঐক্য গঠন করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। যখন আলোচনা হবে তখন এ বিষয়ে বলা যাবে।

অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের বাইরে বিএনপি যে ৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে তারমধ্যে সবগুলো দলই গণতন্ত্র মঞ্চ নামে সাত দলীয় নতুন জোটে যোগ দিয়েছে।

এই ৫টি দল হলো-মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আসম আবদুর রবের জেএসডি, মোস্তফা মোহসিন মন্টুর গণফোরাম এবং জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন।

গত ৮ আগস্ট নতুন এই মঞ্চ গঠনের পর থেকে বিএনপির সংলাপ আর এগোয়নি। তাই বিএনপির ঐক্য গঠনের সংলাপ প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়েছে কি না তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সাত দলীয় নতুন রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ আত্মপ্রকাশ করেছে। আমরা সেখানে আছি। আর আমরা আমাদের কাজ করছি। তবে বিএনপির আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে আমরা কথা বলবো।

এদিকে আগামীতে কোন জোটের সঙ্গে নির্বাচনে যেতে চায় না জামায়াত। এর অংশ হিসেবে প্রায় ১২০টির বেশি আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি।

জামায়াতের সর্বোচ্চ ফোরাম নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য জানান, আগামী নির্বাচনে জামায়াত একা নির্বাচন করার প্রস্তুতি হিসেবেই প্রার্থী ঘোষণা করছে। জামায়াত নির্বাচনমুখী দল তাই আগে থেকেই প্রার্থীদের মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে।

তিনি বলেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মতো কোনো দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবে না তারা। একক নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে জামায়াত অংশ নেবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে।

এর আগে, রোববার (২৮ আগস্ট) নিজেদের সাংগঠনিক ভার্চুয়াল প্রোগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে প্রায় ২৪ বছরের রাজনৈতিক সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটলো। ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পরই রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি আলোচনা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই