ছবি: প্রতিনিধি
মিরসরাই (চট্টগ্রাম): ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক রুটসহ মিরসরাই উপজেলার প্রায় সব আঞ্চলিক রুটে ভাড়া নৈরাজ্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন যাত্রীরা। ভাড়া নৈরাজ্যের ফলে বেড়েছে যাত্রী হয়রাণি। বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী যানবাহনে ভাড়া নিয়ে অষন্তোষের কারণে ঘটছে হাতাহাতি, বাকবিতন্ডা, অশালীন ব্যবহার। ভাড়া তালিকা না থাকায় ইচ্ছেমত ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া চালকদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনো, লক্করঝক্কর গাড়ি ব্যবহার, অদক্ষ চালক, লাইসেন্সবিহীন চালক, সহকারী দিয়ে গাড়ি চালনোর কারণে যাত্রীরা যানবাহনে উঠলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এদিকে ট্রাফিক আইন না মানা, হাইড্রোলিক হর্ণের যথেচ্ছা ব্যবহার, চাঁদাবাজি, টোকেন বাণিজ্য যেন পরিবহন সেক্টরের পরিচিত ও সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মিরসরাইয়ে ভাড়ায় চালিত যাত্রী পরিবহনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাস, হিউম্যান হলার, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা। এসব পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেওয়া, এক রুটের সাথে অন্য রুটের ভাড়ার গরমিল, ভাড়ার তালিকা না থাকা, শৃঙ্খলা না মানা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, মনগড়া ভাড়া নেওয়া, পূর্বের ভাড়ার ৬০% ভাড়া বেশি নেওয়ার পরও বেশি যাত্রী নেওয়া, যাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে এসব পরিবহনের চালক ও সহকারীদের বিরুদ্ধে।
মিরসরাইয়ের বেশ কয়েকটি রুটে সরেজমিনে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে। জোরারগঞ্জ-বারইয়ারহাট রুটে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া প্রথমে ৮ টাকা, পরবর্তীতে করেরহাট-বারইয়ারহাট রুটের সাথে পাল্লা দিয়ে ৮ টাকা থেকে ১৩ টাকা সেখানে ১৫ টাকা নেওয়া হতো, পরবর্তীতে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সীমিত পরিসরে যানবাহন চালু হলে ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ হয়। অথচ মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট-করেরহাট রুটে ১৫ টাকা পূর্বের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এর কারণ সিএনজি অটোরিকশাতে কোনভাবেই সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব নয় এবং মানা হচ্ছে না।

জোরারগঞ্জ-বারইয়ারহাট রুটে ৩ জন যাত্রী নেওয়ার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সেটা মানা হচ্ছে না। অপরদিকে জোরারগঞ্জ-আবুরহাট রুটে ২০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা এবং টেকেরহাট পর্যন্ত ৪০ টাকার ভাড়া ৭০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। করেরহাট-নয়টিলা মাজার, করেরহাট-পশ্চিম জোয়ার, করেরহাট-শুভপুর পর্যন্ত পূর্বের নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে।
ঠাকুরদীঘি-ঝুলনপোল রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রী শামীম অভিযোগ করে বলেন, ঠাকুরদীঘি-ঝুলনপোল রুটে ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে যেটা কয়েকটি রুটে চলাচল করা সিএনজি ভাড়ার সাথে তুলনা করলে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
হিউম্যান হলারের যাত্রী নুরুল আজিম বলেন, গাড়ি ভাড়া পূর্বের তুলনায় ৬০% বাড়িয়ে দিলেও যাত্রী কিন্তু বেশি নিচ্ছে এবং কোন মূল্য তালিকা নেই, তাছাড়া যাত্রীদের সাথে অহেতুক বাড়াবাড়ি করে। যেখানে ৩ জন নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ৫ জন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের নিয়মিত যাত্রী ইফতেখার উদ্দিন জানান, ভাড়াতো বেড়েছে ঠিক কর্মক্ষেত্রে বেতনতো আগের মতোই রয়ে গেছে। বাড়তি ভাড়া এখন যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরেকটা বিষয় যেহেতু বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে সেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মানলে ভাড়া বেশি দিলেও মনে শান্তি লাগতো।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ঈমন হোসেন। তিনি বলেন, খুব বেশি দরকার না হলে বের হইনা। যদিও উপায়ান্ত না পেয়ে বের হই ভাড়া নৈরাজ্যে হতাশ হই বারবার। ১০০ টাকার একটা ওষুধ আমার স্থানীয় বাজারে না পেয়ে অন্য বাজার থেকে কেনার জন্য চাইলে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ওষুধের সমান দাম।
মিরসরাইয়ের সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল হক রিপন বলেন, যাত্রী, শ্রমিক নেতা, উপদেষ্টা, রাজনৈতিক নেতাসহ সকলের সাথে আলাপ ও সমঝোতা করে আমাদের সংগঠন নিয়ন্ত্রিত রুটসমূহে (৫ জন যাত্রী) বাড়তি ভাড়া না নিয়ে আগের নিয়মে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে কোন চালকের বিরুদ্ধে যদি অনিয়মের অভিযোগ আসে তবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে বারইয়াহাট-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী উত্তরা বাসের বিরুদ্ধে অনিয়ম আর অভিযোগের শেষ নেই। বারইয়ারহাট-বড় দারোগাহাট রুটে চলাচলকারী হিউম্যান হলারের চালক-সহকারীদের বিরুদ্ধেও দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার পরও বেশি যাত্রী নেওয়া, মূল্য তালিকা না টাঙানো ও অহেতুক বাড়াবাড়ির অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বারইয়ারহাট-বড় দারোগাহাট হিউম্যান হলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, আমাদের নির্দেশনা হলো পিছনে ৩ জন করে ৬ জন এবং সামনে ১ জন যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করবে। সেক্ষেত্রে যদি কেউ অনিয়ম করে অথবা বাড়তি যাত্রী বা বাড়তি ভাড়া নিয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়া যায় তবে সে গাড়ির চালক ও সহকারীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফিরোজ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ







































