• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়েকে বিয়ে দেওয়াই মা-বাবার ঘৃণ্য পেশা!


সিলেট ব্যুরো মার্চ ৬, ২০২১, ০২:১৮ পিএম
মেয়েকে বিয়ে দেওয়াই মা-বাবার ঘৃণ্য পেশা!

সিলেট : বিয়ের নামে প্রতারণা। অতঃপর মামলা করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়। এ যেন নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট চুনাহাটি গ্রামের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রফিকুর আর এম এ মুনিম দম্পতির। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে অতঃপর বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মামলার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পরিবারটির বিরুদ্ধে। তাদের এমন ভয়ংকর প্রতারণার শিকার হয়েছেন চিকিৎসক ও প্রবাসী যুবক।

টাকা লোভী রফিকুর দম্পতির আমেরিকান কন্যা মৌসুমীর প্রতারণায় পড়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর দক্ষিণভাগ গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছের ছেলে জাকের আহমদ। আদালতের নির্দেশে অভিযোগ তদন্তক্রমে সত্যতা পেয়ে মামলা রুজু করেছে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ।

জাকের আহমদের মামলায় চুনাহাটি গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রফিকুর, তার স্ত্রী ইমামা বেগম চৌধুরী ও মেয়ে মৌসুমীকে আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৫ জানুয়ারি মৌসুমীর সঙ্গে ২১ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্যক্রমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে মেয়েকে কুমারী দেখিয়ে তার সঙ্গে বিয়ে দেন রফিকুর দম্পতি। বিয়ের ১৩ দিন পর মেয়েকে নিয়ে ২৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান মুনিম দম্পতি।

গত বছরের ২১ নভেম্বর মৌসুমী হঠাৎ জাকেরকে ফোন দিয়ে বলেন, তোমাকে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে হলে আমার মায়ের অ্যাকাউন্টে ২৫ লাখ টাকা দিতে হবে। এ খবর জানতে পেরে জাকেরকে তার মা বলেন, এতো টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার দরকার নেই। তুমি সাইপ্রাস ছিলে পুনরায় সাইপ্রাস চলে যাও।

এরপর ২৫ নভেম্বর আবারো মৌসুমী বাবা-মার পরামর্শে ফোন দিয়ে বলেন, তুমি আমার জন্য সিলেটের উপশহরে বাসা ভাড়া করবে। দেশে গেলে ওই বাসায় উঠব। তোমার বাবা-মার সাথে থাকব না।

জাকের স্ত্রীকে বলেন, মা-বাবার সঙ্গে থাকলে তোমার কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মৌসুমীর মা ফোন নিয়ে বলেন, আমার মেয়ের কথা না শুনলে তোমার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখা হবে না।

এসব কথাবার্তা মৌসুমীর গ্রামের বাড়ি জৈন্তাপুরে গিয়ে স্বজনদের জানান জাকের। ওই সময় স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারেন মৌসুমীর আরেক বিয়ে হয়েছিল।

২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর ফরিদ আহমদ নামে এক চিকিৎসকের সঙ্গে মৌসুমীকে বিয়ে দিয়েছিলেন তার বাবা-মা। এ তথ্য তার কাছে গোপন রাখা হয়। ওই চিকিৎসকের ঔরসজাত একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে। ২০১৫ সালের ৩ এপ্রিল সন্তান জন্ম দেন মৌসুমী।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হতে মৌসুমীর প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন জাকের। ওই চিকিৎসক পরিবারও মৌসুমীর প্রতারণার ফাঁদে আর্থিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হন। ঘটনার সত্যতা জানতে পেরে জাকেরও হতবাক হন।

আদালতে করা অভিযোগের সঙ্গে মৌসুমীর পূর্ববর্তী নিকাহনামা, প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে পারিবারিক আদালতে মামলার (৩৯/২০১৮) কপি, আরজি, জবাব, সোলেনামা ও রায় ডিক্রীর ছায়ালিপি, মৌসুমীর বর্তমান বিয়ের ছবি ও পরবর্তী বিয়ের নিকাহনামা ফিরিস্তি দিয়ে দাখিল করেন জাকের।

এ ব্যাপারে এসএমপির বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মুহাম্মদ মাইনুল জাকির বলেন, আদালতের নির্দেশে তদন্তে সত্যতা পেয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে।

ভোক্তভোগী জাকের আহমদ বলেন, মৌসুমী ও তার বাবা-মায়ের প্রতারণার ফাঁদে আমার মতো আর কেউ যেন শিকার না হয়, এ জন্য তিনি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। তার বিশ্বাস ভঙ্গ করে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাৎ এবং প্রথম বিয়ে গোপন করায় মৌসুমী ও তার পরিবারের প্রতি ধিক্কার জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!