• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিভিন্ন স্থানে শিলা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে কৃষকের স্বপ্ন


চাপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৩, ২০২২, ১২:১১ পিএম
বিভিন্ন স্থানে শিলা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে কৃষকের স্বপ্ন

শিলাবৃষ্টি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : তুষারের মতো পড়েছে শিলা। সাথে ছিল বাতাস ও বৃষ্টি । শীতের রাতে এমন ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাচাঁপাইনবাবগঞ্জে। বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এই বিরল ঘটনা ঘটে। 

জানা গেছে, পৌষের এই ব্যাপক বৃষ্টি, ঝড় ও শিলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমের আগাম মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি উপকারী হলেও অতিরিক্ত শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমবিজ্ঞানী ও কৃষি বিভাগ।

এর আগে বুধবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত গোমস্তাপুর উপজেলায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। কয়েক জায়গায় জলাবদ্ধতা ছাড়াও শীত জেঁকে বসেছে।

বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের আকাশ সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন ছিল। দিনব্যাপী সূর্যের দেখা মিলেনি। জেলার সদর উপজেলা, শিবগঞ্জ ও নাচোল উপজেলাতেও হঠাৎ গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে ঝড় বৃষ্টির এই খেলা।

এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা জুলকার নাইনের সাথে। তিনি জানান, বুধবার সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বিকেল ৪টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। সন্ধ্যার আগে হয় মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টিতে গোমস্তাপুরের অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে গোমস্তাপুরেও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। 

শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সাজিদুল হক জানান, বুধবার সন্ধ্যার দিকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু রাত প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে ব্যাপকভাবে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। যা আধা ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলে। আর শীতের সময় দিনব্যাপী মেঘলা আকাশ থাকলেও কেউ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বৃষ্টির আশঙ্কা বা পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়নি। ফলে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বাড়ি থেকে বাইরে বের হওয়াদের।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ী রনি আলী বলেন, জীবনেও এমন শিলাবৃষ্টি দেখিনি। শিবগঞ্জের ছত্রাজিতপুর থেকে রানিহাটি বাজার পর্যন্ত মনে হচ্ছে এক হাঁটু শিলা রাস্তার ওপর পড়ে আছে। এমন দৃশ্য কোনো দিন দেখেনি। রাস্তার পাশের বাড়িগুলোর সামনে কোথাও মাটি দেখা যায় না। আর আগাম জাতের আমের কিছু মুকুল এসেছিল। তার সবকিছুই শেষ। 

আলামিন জুয়েল নাম এক বাসিন্দা বলেন, বৃষ্টির পানিতে ক্ষেতের ফসল তলিয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিলাবৃষ্টিতে। এতে আমের আগাম মুকুল ও ডগার ব্যাপক ক্ষতি হবে। এছাড়া ঝড়ে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে গেছে অনেক জায়গায়। স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব (আম) গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানান, এখনও আমের মুকুল ফুটতে শুরু করেনি। ফলে শিলাবৃষ্টি হলেও তেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টির পর আমগাছে ব্যাপক ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে থাকে। এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে শিলাবৃষ্টিতে আগাম আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যাবে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, শীতের এ সময়ে হালকা বৃষ্টি হলে তা আমসহ বিভিন্ন ফসলের জন্য উপকারী। মশুর, সরিষা, ছোলা, গমের জন্য সামান্য বৃষ্টি আশীর্বাদ। কারণ এই সময়ে একটু পানির প্রয়োজন হয়। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাছাড়া বৃষ্টির পরদিন যদি রোদ না উঠে তাহলে সেই ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!