• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

খড় শুকাতে ভরসা বাঁশকুঠা


আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি মে ২৯, ২০২২, ০৪:৫০ পিএম
খড় শুকাতে ভরসা বাঁশকুঠা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ছোঁয়ায় দিন দিন যেন এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এখন জমি আবাদে নিড়ানি ,সেচ, ইঞ্জিনচালিত শ্যালো মেশিন ও বৈদ্যুতিক পাম্প, ড্রাম সিডার (বীজ বপন যন্ত্র), জমি প্রস্তুতে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার, ধান কাটার কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন, পাওয়ার থ্রেসার (পায়ে চালিত মাড়াই যন্ত্র), গ্রেডিং মেশিনসহ সব কিছুতেই চলছে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। নতুন নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারে কৃষকের কমেছে শ্রম ও খরচ। সেইসাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের কয়েকগুণ ফসল উৎপাদনও।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার কৃষকরা ধান আবাদে ওইসব সুবিধা নিয়মিত পাচ্ছে। এ উপজেলায় চলতি মৌসুমের বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু ধান কাটার পর কৃষকরা খড় শুকাতে এখনো পুরনো পদ্ধতিতেই রয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতির ছোঁয়ায় কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসলেই খড় শুকাতে কৃষকরা ভরসা করছে বাঁশের কুঠা আর আচরার উপর। এই বাঁশের কুঠ আর আচরা দিয়ে ইরি-বোরো মৌসুমে তাদের কাটা ধানের খড় রোদে শুকাচ্ছেন। খড় শুকাতে একজন কৃষককে কাঠফাটা রোদে হাতে বাঁশের কুঠা আর আচরা নিয়ে সকাল থেকে বিকাল পযর্ন্ত মাঠে কাজ করতে হয়। স্থানীয় কৃষকরা জানায় ১ বিঘা জমির ধানের খড় শুকাতে ২ জন শ্রমিক লাগে। রোদ থাকলে ১ দিনের মধ্যেই খড় শুকানোর কাজ শেষ হয়।

ধান বা লতাগুল্মের শুকনো অংশকে খড় বলে। ধান কিংবা এ ধরণের খাদ্যশস্য মাড়াই করার পর অবশিষ্ট অংশ শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। ধানের খড় বহুবিধ কাজে ব্যবহার হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে এর কদর ও রয়েছে বেশী। তাই কৃষকরা এখন ধানের খড়ের প্রতি খুবই যত্নশীল হয়েছেন।

উচ্চ ফলনশীল ধানের ক্ষেত্রে প্রতি একক জমি থেকে সমপরিমাণে ধান ও খড় পাওয়া যায়। দেশি ধানের ক্ষেত্রে খড়ের পরিমাণ বেশি (৬০-৭০ শতাংশ)। ধানের কান্ড ও পাতা মিলিয়েই খড়। দেশি ধানের খড় উচ্চ ফলনশীল ধানের খড় অপেক্ষা লম্বা হয়। তবে আজকাল নিচু এলাকায় ধান চাষের জন্য যেসব উন্নত জাতের ধান চাষ চালু হয়েছে সেই সব জাতের খড়ও লম্বা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পৌর শহরের তারাগন,দেবগ্রাম, নারায়নপুরসহ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকায় বোরো ধান কাটছে কৃষকরা। কৃষকরা প্রাণভরে ধান কেটে মাড়াই কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। সেই সাথে কৃষানীরা ও বসে নেই , তারাও মনের আনন্দে ধান শুকিয়ে গোলাই তুলার কাজে সাহায্য করছেন। পাশাপাশি বসে নেই ধানের খড় শুকাতে। বাঁশের একটি কুঠা আর আচরা নিয়ে কাঠ ফাটা রোদে খড় শুনাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

পৌর এলাকার তারাগনের কৃষক মো. আলম খা বলেন, এ মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারে বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়। ধানও হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে কাটা হয়। এ পদ্ধতিতে তাদের পরিশ্রম অনেকাংশে কমে গেলেও খড় নিয়ে তাদের কষ্টের যেন শেষ নেই। শ্রমিকের মজুরি অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় রোদে শুকিয়ে খড় বিক্রিতে ও তাদের অনেক লোকসান দিতে হচ্ছে।

কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, রোধ বৃষ্টি ভিজে দিন রাত পরিশ্রম করে ৮ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করা হয়। ইতিমধ্যে ৫ বিঘা জমির ধান হারভেস্টার মেশিনে কাটা হয়েছে। ১ বিঘা জমির ধানের খড় শুকাতে রোদ থাকলে ২ জন শ্রমিকের সারা দিন কাজ করতে হয়। এজন্য একজন শ্রমিককে দিতে হয় ৭শ টাকা মজুরি। এ কাজ রোদে অনেক কষ্ট হওয়ায় শ্রমিক পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই পরিবারের লোকজন নিয়ে বাঁশের কুঠা আর আচরা দিয়ে খড় শুকানোর কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন কষ্ট করে খড় শুকাতে পারলে বিক্রিতে ধান চাষের অনেক খরচ তুলা যায়।

কৃষক মো: মজিদ মিয়া বলেন, খড় শুকানো পরিশ্রমের কাজ হলেও বিক্রিতে ভালো দর পাওয়া যায়। তাই অনেক কষ্ট করে খড় শুকানোর কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, গত মৌসুমে রোদ না থাকায় পচে অনেক খড় নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এবার রোদ থাকায় দ্রুত খড় শুকানো হয়েছে বলে জানায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ধানের খড় বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। কৃষকরা ধানের খড়ের প্রতি খুবই যত্নশীল । অনেকে খড় বিক্রি করেই ধান চাষের খরচ তুলছেন। তাছাড়া গবাদি পশুর খাবার, ঘর ছাউনি, জাজিম ইত্যাদি তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান খড়। পাশাপাশি জৈবজ্বালানি হিসেবেও খড়ের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। তিনি আরো বলেন বহুকাল ধরে কৃষিকাজে, বিশেষ করে বৃষ্টিনির্ভর জমিতে, জমির আর্দ্রতা ধরে রেখে বীজের অঙ্কুরোদগম নিশ্চিত করার জন্য খড়ের ব্যবহার চলে আসছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!