• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

রংপুরে একবছরে ১১ লাখ ইঁদুর নিধন


রংপুর ব্যুরো অক্টোবর ২২, ২০২২, ১২:৫৭ পিএম
রংপুরে একবছরে ১১ লাখ ইঁদুর নিধন

রংপুর: ইঁদুরের উপদ্রবে প্রতি বছর ক্ষতি হচ্ছে রোপা আমন খেতের। ধানের সঙ্গে বাড়ছে অন্যান্য ফসলেরও ক্ষতি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন রোগ জীবানু ছড়ানোসহ ইঁদুরের কারণে ভূমিধস ও আগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে থাকে। এ পরিস্থিতিতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে ইঁদুর নিধন কার্যক্রম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে এ বছর রংপুর অঞ্চলে ফসল রক্ষায় প্রায় ১১ লাখেরও বেশি ইঁদুর নিধন করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, মোট উৎপাদনের একটি উল্লেখ্যযোগ্য অংশ প্রতিবছরই ইঁদুরের পেটে চলে যাচ্ছে। ইঁদুর নিধন অভিযানের ফলে আমরা আবাদের একটি অংশ ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা করছি। যেহেতু বাঁশের চোঙ্গা ফাঁদ পদ্ধতি একটি পরিবেশ বান্ধবপদ্ধতি। তাই আমরা কৃষকদের বাঁশের চোঙা ফাঁদসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করে ইঁদুর নিধনে উৎসাহিত করছি।

কৃষক থেকে কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টা আর স্থানীয়দের বিভিন্ন কৌশলের ফাঁদে এবার এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় মারা পড়েছে ১১ লাখ ৬০২টি ইঁদুর। এর ফলে রংপুর অঞ্চলে আমনের বিপুল সংখ্যক ফসল রক্ষা পাবে। এতে খুশি আমন চাষিরা। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ইঁদুর নিধনের সংখ্যা ৮৭ হাজার ৭৪টি কম বলছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দাবি, রোপা আমন মৌসুমে রংপুরেই ৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৫২টি ইঁদুর নিধন করা হয়েছে। এই অঞ্চলের পাঁচ জেলার মধ্যে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি ইঁদুর নিধন হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধায় ৫৪ হাজার ৭৪০, কুড়িগ্রামে ১ লাখ ২১ হাজার ৯১৩টি, লালমনিরহাটে ৩৪ হাজার ১৫১টি, নীলফামারীতে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৬টি ইঁদুর নিধন করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগের লোকজন ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করেন।

চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রায় ৬ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রত্যেক বছর আমন মৌসুমে উৎপাদিত ফসলের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ইঁদুরের পেটে চলে যায়। শুধু আমন মৌসুমে মোট উৎপাদনের ছয় শতাংশ ইঁদুরের খাবারে পরিণত হয়। এভাবে প্রতি মৌসুমে গমের মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ, আলুর ৬ শতাংশ, শাক-সবজির ৫ শতাংশ, নারিকেলের ১০ শতাংশ ও আনারসের ১০ শতাংশ ফলন খেয়ে ফেলে ইঁদুর। এছাড়া সেচ নালার ৭-১০ ভাগ পানি ইঁদুরের কারণে নষ্ট হয়ে থাকে। কোন স্থানে এক জোড়া ইঁদুর এক বছরে থাকলেই ৩ হাজারের বেশি বংশবৃদ্ধি করতে পারে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, দেশে প্রতি বছর ইঁদুরের কারণে ১০-১২ লাখ টন খাদ্যশস্য নষ্ট হয়। ইঁদুর প্রতিদিন তার শরীরের ওজনের ১০ গুণ পর্যন্ত খাবার নষ্ট করতে পারে। এছাড়া ইঁদুরের মলমূত্র ও লোম খাদ্যদ্রব্যের সাথে মিশে টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্মরোগ, কৃমিরোগসহ ৩৩ প্রকারের রোগ ছড়ায়। প্লেগ রোগের বাহকও এই ইঁদুর। ইঁদুর মাঠের ও ঘরের ফসল নষ্ট করা ছাড়াও বৈদ্যুতিক তার কেটে অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। এছাড়াও রাস্তাঘাট, বাঁধ, রেললাইনে ইঁদুরের সৃষ্ট গর্তের কারণে বন্যার সময়ে পানিপ্রবাহে রাস্তা, বাঁধ ও রেললাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে।

হাজার হাজার মেট্রিক টন ফসল খেয়ে দাঁপিয়ে বেড়ানো ইঁদুরের কারণেই প্রতিবছর কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। সময়মতো আমন ধানে ভরছে না কৃষকের গোলা। ইঁদুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ সবাই। তবে দিন দিন রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধা জেলায় ইঁদুর নিধনে সচেতনতা বাড়ছে। গেল কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে রোপা আমনের খেতে বাঁশ দিয়ে তৈরি ‘চোঙা ফাঁদ’পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।

সরেজমিনে রংপুরের বেশ ক‘টি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, ধান গাছগুলোর কোথাও কোথাও কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে ইঁদুর। ওই জমিতে ধান গাছগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করে মরে যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা ইঁদুর নিধনে জিংক পাউডার, গ্যাস ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন বিষ ব্যবহার করেন। তবে তেমন সুফল না মেলায় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে বাঁশের সাহায্যে ‘চোঙা ফাঁদ’ তৈরি করেন। রাতে ধান খেতে এ চোঙা ফাঁদ পেতে ইঁদুর নিধনের চেষ্টা করছেন।  

রংপুর সদর উপজেলার পাগলাপীর পানবাজার এলাকার ধানচাষি শাকিল আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আগে গ্রামের কৃষকরা ইঁদুরের যন্ত্রণায় অসহায় হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন আমরা নানাভাবে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ফসল রক্ষার চেষ্টা করছি। এ বছর চোঙা ফাঁদ ব্যবহার করায় ইঁদুরের উপদ্রব অনেক কমেছে।

সিটি করপোরেশনের তালুক রঘু এলাকার বদিউজ্জামান বলেন, ইঁদুরের কারণে প্রতিবছর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছি। তবে ইদানিং ইঁদুর নিধন কার্যক্রম গুরুত্বসহ হওয়ায় কিছুটা ক্ষতি কমে আসছে। এখন আমাদের লোকসানও কম হচ্ছে। আমরা চাই সারাবছর এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক।

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সাল থেকে সরকারি উদ্যোগে দেশে ইঁদুর নিধন অভিযান শুরু হয়। কিন্তু কার্যকরভাবে ইঁদুর নিধন করা সম্ভব না হওয়াতে প্রতি বছর আশানুরূপ ফসল পাচ্ছে না কৃষক। ফলে মোট উৎপাদনের উল্লেখ্যযোগ্য অংশ ইঁদুরের পেটে চলে যাচ্ছে।

সোনালীনিউজ/একেএম/এসআই

Wordbridge School
Link copied!