কুমিল্লা: কনকনে ঠান্ডায় প্রকৃতি যেন আবারও সেজেছে নতুন সাজে। কুয়াশার চাদরে মুড়িয়ে নিয়েছে নিজেকে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে হলুদ গালিচা। শীতের প্রকৃতি যেন হলুদ অলঙ্কার পরে আছে। হলুদ সরিষার শরীরজুড়ে থাকা ভোরের শিশির কণা, সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তার মতো ঝিকমিকে গড়িয়ে পড়ে।
কুয়াশা ও ঝলমলে রোদে খেলা করতে থাকে মাঠভর্তি হলুদ সরিষা ফুল। যেদিকে চোখ যায় সরিষা ফুলের সৌন্দর্যে মন জুড়ায়। মৌ মাছিরাও উড়ে উড়ে মধূ আহরণে ব্যস্ত। রং-বেরঙের প্রজাপতিরা ভিড় জমায় এ ফুল থেকে ও- ফুলে।
কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ (প্রথম থেকে মধ্য নভেম্বর) পর্যন্ত সরিষা বীজের বপন সময়। বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের প্রায় ৬০ ভাগ আসে সরিষার তেল থেকে এবং এটিই আমাদের ভোজ্যতেলের প্রধান ফসল। সরিষা ফুল একদিকে যেমন ভাজ্যতেলের চাহিদা মেটাচ্ছে অন্যদিকে মধুচাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছে শত শত কৃষক।
ব্রাক্ষনবাড়ীয়া সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের চাষী আবদুল মতিন বলেন, আমরা পূর্বপুরুষ থেকে সরিষার চাষ করে আসতেছি। কিন্তু সয়াবিনের চাহিদা থাকায় বর্তমানে সরিষার চাষ অনেকটাই কমে গেছে।
আরেক কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, এবার প্রতি কানি জমিতে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে তেমন সহযোগতা পাইনি। যদি পোকামাকড় আক্রমণ কম থাকে তাহলে প্রতি কানিতে ৫ হাজার টাকা লাভ হবে আশা করি।
সরিষা ক্ষেতে মৌচাষের উদ্যোগী চাষী নরুল হক বলেন, জমির পাশেই বাক্স বসিয়ে মৌচাষ করেছি। একদিকে যেমন মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে অন্যদিকে মধু চাষের পাশাপাশি সরিষার উৎপাদনও বাড়ছে। এতে সরিষা ও মৌচাষ উভয়েই লাভবান হতে পারবো।
স্থানীয়রা বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তাদের পরিবার ও সঙ্গীদের নিয়ে আসেন আর সরিষা ক্ষেতের সৌন্দর্য উপভোগ করেন । বিশেষ করে বিকেলে সরিষা ফুলের নজরকারা দৃশ্য দেখতে মানুষ বেশী আসেন।
ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সরিষা মাঠ জুড়ে ভিড় করছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ, শিশুসহ প্রকৃতি প্রেমীরা। কেউ সরিষা মাঠ ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউবা আবার মুঠোফোনে তুলছেন সেলফি।
ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী তাসমিন ফাবিহা জানান, শীতকালীন ছুটিতে বন্ধু বান্ধব নিয়ে ছুটি কাটাতে কিছুদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে এসেছি। আর সরিষার ফুলের এমন নান্দনিক সৌন্দর্য একমাত্র গ্রামেই পাওয়া যায়। সরিষা ফুলের সৌন্দর্য ঘুরে দেখছি।
নাগরিক জীবনে হাঁপিয়ে উঠলে আপন সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন হলুদের রাজ্য থেকে। সরিষার মিষ্টি গন্ধ আপনাকে মুগ্ধ করে দিবে। আর সেই সাথে বোনাস হিসাবে থাকছে প্রচুর পরিমানে অক্সিজেন।
ধীরে ধীরে বেলা ফুড়িয়ে আসে, পড়ন্ত বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাসে দুল খেতে থাকে হলুদ পরীরা। ফিরে আসতে শুরু করে শিশির কণা, ঝেঁকে বসে হলুদ সরিষার সমস্ত শরীরে।
সোনালীনিউজ/এম







































