গাজীপুর: সম্প্রতি সময়ে শেষ হয়েছে দেশের আলোচিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনের পূর্বে সাবেক মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এর ছয়দানা বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড়ের ভয় ভিত্তি অপেক্ষা প্রকাশ্যে বা গোপনে করে শুধু মাত্র নেতাকর্মীদের আনাগোনা দেখা গেলেও। তবে এবার তার বাসায় শুধু নেতাকর্মী,সমর্থক নয়,এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি। সাবেক এই মেয়ের মা জায়েদা খাতুন মেয়র পদে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই জনতার পদচারণায় উপচে পড়া ঢল নামছে জাহাঙ্গীরের বাসায়।
জানাগেছে,সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম কে মহানগরীর মধ্যে বসবাস করা বিপুল সংখ্যক নানা শ্রেণি পেশার সাধারণ মানুষ ভালবাসেন। তবে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় পদ ও পরে মেয়র পদ থেকে বহিষ্কারের পরে প্রশাসনের হয়রানির ভয়ে তার বাসায় আসতেন না সাধারণ মানুষেরা। এখন তার মা মেয়র হওয়ায় সেই ভয় সাধারণ মানুষের কেটে গেছে। এজন্য তাই দৈনিক অসংখ্য নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরা নব নিরবাচিত মেয়র ও জাহাঙ্গীর আলমকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসছেন।
সোমবার (২৯ মে) সকালে জাহাঙ্গীরের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, কেউ অনেক আবেক ও অনুভূতি জানানোর জন্য বাসায় ছুটে আসছেন। আবার কেউ নব নির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুনকে শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন। এ সময়ে কোনাবাড়ী কাশিমপুর এলাকা থেকে আসা রফিকুল ইসলাম নামে এক সমর্থক জানান, তিনি রাতে ঘুমাতে পারছিলেন না। কখন জাহাঙ্গীরের বাসায় আসবেন এই চিন্তায়। তিনি বলেন, তিনি সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীকে অনেক শ্রদ্ধা করেন এবং ভালবাসেন। তাই তিনি তার সংগ্রামী যুদ্ধে তার মা মেয়র বিজয়ী হওয়ায় অভিনন্দন জানাতে এসেছেন।
এ ব্যাপারে সাবেক মেয়র মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি যখন ষড়যন্ত্রের শিকার হন। তখন সাধারণ মানুষ যারা আমাকে ভালবাসেন। তারা অনেকই প্রশাসন ও প্রতিপক্ষ নেতাকর্মীদের দ্বারা হয়রানির ভয়ে আমার বাসায় আসতে সাহস পেতেন না। এখন আমার মা মেয়র পদে বিজয়ী হওয়ায় সবাই বাসায় আসতে শুরু করেছেন।
নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন বলেন, আমি এবং আমার ছেলের সঙ্গে দেখা করতে কেউ এখন আর ভয় পাবেন না। যে কোন সাধারণ মানুষ তার প্রয়োজনে বাসায় আসতে পারবেন।
উল্লেখ,গত বৃহস্পতিবার (২৫মে) সকাল ৮টায় শুরু হয় গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বিরতিহীনভাবে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হয়। কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় ভোট।
ভোটগ্রহণের শুরু থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের পঞ্চম তলার কন্ট্রোল রুম থেকে নির্বাচন মনিটরিং করা হয়। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া না গেলেও ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে ঢুকে পড়ায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। নির্বাচন কমিশন থেকে সিসি ক্যামেরায় দেখে খবর দেয়া হলে তাদের আটক করা হয়।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন প্রার্থী আছেন। এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
মোট কেন্দ্র: ৪৮০প্রাপ্ত কেন্দ্র: ৪৮০ মেয়র পদে আজমত উল্লাহ খান নৌকা প্রতিকে ২,৭১,০৭৭ ভোট পেয়েছেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ২,৮৮,০০৭ ভোট পেয়েছেন। মোট ১৬৯৩০ ভোট বেশি ভোট পেয়ে ঘড়ি মার্কা প্রতিকে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন।
গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডে এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৭ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৮ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার আছে ১৮ জন। ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ ভোটার এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।
সোনালীনিউজ/এমএস/এসআই
আপনার মতামত লিখুন :