তাড়াশ: কীটনাশক ব্যবহার না করে ক্ষতিকারক পোকা মাকড়ের কবল থেকে রোপা আমন ফসল রক্ষায় শস্য ভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আলোক ফাঁদ। বিশেষ করে এখন ফসলের ক্ষতি করে এমন কারেন্ট পোকা, মাজরা পোকা, গান্ধি পোকা ও চুঙ্গি পোকাসহ বাদামী ঘাস ফড়িং দমনে জমিতে আলোক ফাঁদ বা পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার বেড়েছে।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার গোন্তা-কাঁটাগাড়ি আঞ্চলিক সড়কের তালম ইউনিয়নের গোন্তা এলাকায় এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তালম, বারুহাঁস, নওগাঁ, তাড়াশ সদর, মাধাইনগর, দেশিগ্রাম ও তাড়াশ পৌর এলাকায় চলতি বছর প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আব্দুল গুটি, কাটারী ভোগ, ব্রি-৯০, ব্রি- ৪৯, ব্রি-৫১, ব্রি-৫৮, ব্রি-৩৪ ও ব্রি-৩৬ জাতের রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে।
এ দিকে স্থানীয় তালম ইউনিয়নের পাড়িল গ্রামের আব্দুল মমিন, দশের আলী, ইউসুফ আলী, গোন্তা গ্রামের নবির উদ্দিন, আরমান সরকার, শরিফুল ইসলাম, মোবারক হোসেনসহ একাধিক কৃষক জানান, বর্তমানে রোপা আমনের কিছু জমিতে রাসায়নিক সার দেয়ার পর থেকেই কিছু বাদামী ঘাসফড়িং বা কারেন্ট পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা ও চুঙ্গি-মাজরাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
এসব পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষকরা কীটনাশকও ব্যবহার করছেন। কিন্তু এর ব্যক্তিক্রম রয়েছে উপজেলার তালম, দেশিগ্রাম ইউনিয়নসহ অনেক এলাকায়। এখানকার কিছু কৃষক কীটনাশক ব্যবহার না করে বা কম করে বিদ্যুত বা ব্যাটারিচালিত আলোর মাধ্যমে রোপা আমনের জমি গুলোতে আলোক ফাঁদ বা ডাল পুতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
মুলতঃ সূর্য ডোবার সাথে সাথে রোপা আমন জমির মাঝ খানে বা পোকা আসে এমন স্থানে শক্ত বাঁশ-কাঠ কিংবা তিনটি লোহা দন্ড দিয়ে কাঠামো বানিয়ে সেখানে একটি পাত্রের মধ্যে পানি ও ডিটারজেন্ট পাউডার মিশানো হয়। পরে লোহা বাঁশ-কাঠের মাথায় একটি বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রাখেন। আর বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রাখার ফলে কিছুক্ষণ পর আলোর সাহায্যে ওই পাত্রে আসতে শুরু করে উপকারি ও অপকারি পোকা। তখন সেখানে থাকা কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কাজ করা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ কৃষি সংশ্লিষ্টরা উপকারি ও অপকারি পোকা নিরুপন করেন।
সেখানে উপকারি পোকা বেশি থাকলে তা ক্ষতিকারক পোকাকে প্রতিহত করতে পারলে সেখানকার রোপা আমন জমিতে আর কীটশানক ব্যবহার করেন না। আর উপকারি পোকা কম থাকলে তা ক্ষতিকারক পোকাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা না থাকলে তখন কৃষি কর্মকর্তাদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কীটনাশক মাত্রানুযায়ী প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। এতে কৃষক যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার না করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি ক্ষতিকারক কীটনাশক থেকে রক্ষা পায় উপকারী পোকা। এটাই আলোক ফাঁদ বা পাচিং পদ্ধতির সুফল।
দেশিগ্রাম ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, জমিতে ডাল পুতে ও আলোক ফাঁদ তৈরি করে তিনি তার জমিতে পোকা দমনে অনেকটাই সফলতা পেয়েছেন। পাশাপাশি একাই গ্রামের আরেক কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আলোক ফাঁদ দিয়ে ক্ষতিকারক পোকা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অল্প পরিমান কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন রোপা আমনের জমিতে। এতে তার কীটনশাক খরচ গত বছরের চেয়ে অর্ধেকেরও কম হয়েছে।
অবশ্য, তাড়াশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তালম ইউনিয়নের ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান সুমন ও নুহু আলম রতন, জানান, রোপা আমনের ফসলি জমিতে পোতা ডাল গুলোর উপরে পাখি বসে ফসলি জমির ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। যার ফলে আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। ফলে কৃষক জমিতে কীটনাশকের খরচে কমিয়ে অধিক ফলন উৎপাদন করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পোকা মাকড় ফসল নষ্ট না করতে পারে তার জন্য কৃষকদের আলোক ফাঁদ বা পাচিং পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষতি কারক পোকা মাকড় নির্ধনে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। যা সুফল পেয়েছি গতবার। পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যয় অনেক কমে এসেছে। যে কারণে আলোক ফাঁদ বা পাচিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :