• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

রংপুরে নৌকা বাইচ, শান্ত ঘাঘটে প্রাণের উচ্ছ্বাস


একেএম সুমন, রংপুর  সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩, ০২:৪৪ পিএম
রংপুরে নৌকা বাইচ, শান্ত ঘাঘটে প্রাণের উচ্ছ্বাস

রংপুর: ভাটিয়ালি আর ভাওয়াইয়ার সুরে নদীর বুকে বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দের ছন্দে উত্তাল নদীর দুপাড়। মাঝিদের সুরে মেতে উঠছেন উৎসুক জনতা। থেমে থেমে হৈ-হুল্লোড় আর হাততালি। লাখ লোকের সমাগমে পূর্ণ ঘাঘট নদীর দুই তীর। যেন নৌকা বাইচ উৎসব ঘিরে শান্ত ঘাঘটে ফিরেছে প্রাণের উচ্ছ্বাস।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এমনই আনন্দঘন পরিবেশে রংপুর নগরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের হোসেন নগরে ঘাঘটপাড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। হোসেন নগর যুব সমাজ এই উৎসবের আয়োজন করে।

বেলা ২ টায় নৌকা বাইচ উৎসব শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যায়। ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচ উৎসবে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহসহ আশপাশের জেলা থেকে আগত মাঝি মাল্লাদের ১৬টি নৌকা অংশ নেয়।

এদিন নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে জমে উঠে মেলা। এতে হাজারো মানুষের সমাগম হয়। তবে রঙ বে-রঙে সাজানো দৃষ্টিনন্দন নৌকা আর মাঝি-মাল্লাদের সুর নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। আগামীতে আরো বড় পরিসরে নৌকা বাইচ উৎসবের দাবি জানিয়েছে দর্শনার্থীসহ স্থানীয়রা।

এর আগে বেলা ১২টা থেকে ঘাঘটের দুইপাড়ে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুর নগরী ছাড়াও আশপাশের উপজেলা এবং অন্যান্য জেলা থেকে আসতে থাকেন বিভিন্ন বয়সী মানুষজন। বিকেলের আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে ঘাঘটের দুই তীর। নদীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা সড়ক সেতুতেও ছিল মানুষের ঢল।

সর্বনাশা ঘাঘটপাড়ের দুঃখ ভুলে খনিকের আনন্দে ফুটে ওঠে নদীমাতৃক বাংলার অন্যতম ঐতিহ্য নৌকা বাইচের মনোরম দৃশ্য।  প্রতিযোগীরা বৈঠারছলাৎ ছলাৎ তালে তালে কণ্ঠে তোলে গান। সেতুর ওপরসহ নদীর দুপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকরা মাঝি-মাল্লাদের উৎসাহিত করতে কখনো হাত উঁচিয়ে নয়তো করতালিতে জানায় অভিবাদন।

নৌকাবাইচ দেখতে দুপুর থেকে নদীর পাড়ে ভিড় করতে থাকা শিশু-কিশোর ও নারী-পুরুষরা প্রতি বছর নৌকা বাইচ উৎসবের আয়োজনের পাশাপাশি ঘাঘটের ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান।

আয়োজকরা বলছেন, আগে নদীকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নদী না বাঁচলে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ হারিয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে নদী কেন্দ্রীক ঐতিহ্য, পেশা, জীবন ও প্রকৃতি। দ্রুত তিস্তা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, আখিরা, করতোয়া ও শ্যামাসুন্দরীসহ সকল নদ-নদী ও খালের খনন, শাসন ও সঠিক পরিচর্চা দাবি জানিয়েছেন তারা।

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে তৃতীয়বারের মতো হোসেন নগর যুব সমাজ এই নৌকা বাইচের আয়োজন করেন। আয়োজক কমিটির সভাপতি আবু সাঈদ মোহাম্মদ মাসুদ রানা জানান, ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছর ঘাঘটে নৌকা বাইচ হয়ে আসছে। এবার বড় পরিসরে আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নদীতে খুব বেশি পানি না থাকায় সাড়া মেলেনি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এতে স্থানীয় ছাড়াও বাহিরের তিন জেলার মাঝি-মাল্লাদের নিয়ে ১৬টি নৌকা বাইচ দল অংশ নেন।

তিনি আরও জানান, উৎসবে প্রথম স্থান অর্জনকারী বালাসি তুফান নৌকাবাইচ দলকে একটি মোটরসাইকেল, দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনার তরী নৌকাবাইচ দলকে একটি ফ্রিজ এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী দলকে একটি এলইডি টেলিভিশন উপহার দেওয়া হয়। এছাড়াও চতুর্থ স্থানে থাকা দলকে একটি স্মার্ট ফোন দেওয়া হয়েছে।

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ খেলার বেশি বেশি আয়োজন করা প্রয়োজন। এতে মানুষের মন ভালো থাকবে। আমরা আগামীতে আরও বড় পরিসরে এই প্রতিযোগিতা করব। গতবছরের মতো এবছরও সিটি করপোরেশন থেকে এই আয়োজনে পৃষ্টপোষকতা করা হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি, নদীকে বাঁচানোর সঙ্গে নদীকেন্দ্রিক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হোক।

স্থানীয় সংগঠক ফরহাদুজ্জামান ফারুক বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডটি আগে তামপাট ইউনিয়ন ছিল। এটি বর্তমানে সিটির বর্ধিত এলাকা। এই ওয়ার্ডসহ আশপাশের ওয়ার্ডগুলোতে বিনোদনের তেমন কোনো জায়গা নেই। প্রতি বছর নৌকা বাইচ  বিনোদনপ্রেমীদের মনের খোরাক যোগায়। হাজারো মানুষের ভিড়ে এমন ঐহিত্যবাহী উৎসব দেখতে পেয়ে আমরা সকলে আনন্দিত।

কালের পরিক্রমায় হারাতে বসা গ্রামীন এই খেলাকে পুনর্জীবিত করতে পৃষ্ঠপোষকতা করা গেলে আরও বড় আকারে আয়োজন করা যাবে বলেও জানান স্থানীয় আয়োজকরা।

এমএস

Wordbridge School
Link copied!