• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

পশুপাখির প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টান্ত তাড়াশের শরীফ খন্দকার


তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩, ০৪:১৭ পিএম
পশুপাখির প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টান্ত তাড়াশের শরীফ খন্দকার

তাড়াশ: পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা ও মমতায় আবদ্ধ সিরাজগঞ্জের তাড়াশের শরীফ খন্দকার। মানবতার কাজে সবার পাশে থাকা এই শ্লোগানকে সামনে নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিলেজ ভিশনের পরিচালকও তিনি।

মূলতঃ শরীফ খন্দকার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তাঁর এক ভাই খন্দকার গাউছূল ইসলাম শাহীন বর্তমানে ইতালী প্রবাসী। আর তিনি যখন প্রবাস থেকে বাড়িতে আসতেন তখন খাবার পর বাড়ির সকল সদস্যের উচ্ছিষ্ট খাদ্য তিনি ফেলে না দিয়ে একটি পাত্রে রেখে কুকুর, বিড়ালকে খাওয়াতেন। আর সেখান থেকেই শরীফ খন্দকারের বোধদয় হয় উচ্ছিষ্ট খাদ্য জীব জন্তুর আহারের একটা অংশ। যা তাদের জীবন বাঁচাতে ও প্রয়োজন।

এরপর ২০০৭ সালে তিনি স্ব-উদ্দ্যোগে প্রবাসী ছোট ভাই খন্দকার গাউছূল ইসলাম শাহীনের আর্থিক অনুদানে প্রতিষ্ঠা করেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিলেজ ভিশন বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন।

সেখানে পথশিশু, প্রতিবন্ধী, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপদগ্রস্থ মানুষ, বৃদ্ধ, অসহায় রোগাক্রান্তদের জন্য নিরোলস ভাবে কাজ করে আসছেন। সম্পুর্ন্ন অ- লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি মানবতার কাজে সবার পাশে থাকছে সব সময়। এরই ধারাবাহিকতায় একদল স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে পশুপাখির প্রতি ভালবাসা ও মমতায় জড়িয়ে তাদের খাবারের ব্যাবস্থা করছেন ভিলেজ ভিশনের পরিচালক শরীফ খন্দকার দিনের পর দিন। আর তাঁর এ কাজে স্ব- প্রণোদিত হয়ে আর্থিক সহযোগীতা করছেন দেশ ও প্রবাসের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ অনেকেই।  

ইতিমধ্যেই ভিলেজ ভিশনের মাধ্যমে এ পর্যন্ত অসুস্থ্য প্রায় ১০টি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সেবা শ্রশুষা করে সে গুলোকে অবমুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় দুই বছর যাবৎ দেড় শতাধিক কুকুর বিড়ালকে খাবার দিয়ে আসছেন। এ ছাড়াও শালিক, কাক, বুলবুলি, ঘুঘু পাখিকে তিনি নিয়মিত খাবার পিরিবেশন করেন। সেই সাথে বিভিন্ন ভাবে কুকুরের গলায় আটকে যাওয়া  বিস্কিটের কৌটা, নানা ভাবে আঘাত প্রাপÍ কুকুর বিড়ালের সেবা ও উদ্ধার কার্যক্রমও তিনি তাঁর স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে করছেন। আর এটাই শেষ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে বজ্রপাতে ব্যাপক প্রানহানির প্রতিরোধ করতে তাড়াশ এলাকাল বিভিন্ন সড়কে প্রায় ২০ হাজার তালবীজ রোপন করেছেন ওই সংগঠনটি। তাছাড়া দেশের অনেক এলাকায় তাড়াশের তালবীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করেছেন।

জানা গেছে, শরীফ খন্দকার এলাকার পথশিশুদের নানা ভাবে সহযোগীতা করেন। পাশাপাশি ২০২০ সালে করোনা কালীন সময়ে ‘আম জনতার হোটেল’ নামে হোটেল খুলে অসহায় দরিদ্র প্রতিবন্ধী সহ সুবিধা বঞ্চিত মানুষের ভার মানের খাবারের ব্যাবস্থা করেন। সেখানে খাবার পর উচ্ছিষ্ট খাদ্য বালতিতে সংগ্রহ করে পৌর শহরের কুকুর বিড়ালকে খাওয়াতে থাকেন।

২০২১ সালে তিনি প্রতি মাসেই একাধিক দিন খাবার তৈরি করে এলাকায় কুকুর, বিড়াল, কাক, শালিক, বুলবুলি, মুরগী, ছাগলকে খাওয়াতে থাকেন শরীফ খন্দকার। এতে করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় তিনি খাবার পাত্র নিয়ে গেলেই সেখানে কুকুর বিড়ালেরা জড়ো হতে থাকে বলে জানান, ওই সংগঠনের সহ সভাপতি মাসুম বিল্লাহ। আর যে দিন খাবারের পরিমাণ বেশী হয় তখন তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা তাঁকে এ কাজে সহযোগীতা করেন। এ ভাবেই পশুপাখির প্রতি ভালবাসায় জড়িয়ে শরীফ খন্দকার তাদের যেন পরিচিত স্বজন হয়ে ওঠেন।

সম্প্রতি পশুপাখিদের প্রতি বিবেক বোধ এবং মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে নিজ পাড়ায় (তাড়াশের টাওয়ার পাড়া) পশুপাখিদের খাবারের জন্য তাঁর বাড়ির সামনে একটি বড় খাবার পাত্র স্থাপন করেন। সেখানে রান্না করা খাবার ও ওই পাড়ার প্রতিবেশীরা ও সকল পরিবারের উচ্ছিষ্ট খাদ্য সেখানে নিয়মিত রাখার জন্য তিনি উদ্ধুদ্ধ করেন। তাঁর এ মানবিক আহব্বানে প্রতিদিনই নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত খাবার পাত্রে সকলেই খাবার রাখতে শুরু করেন। আর সেখানে জমে থাকা খাদ্য পৌর সদরের কুকুর, বিড়াল, কাক, শালিক, বুলবুলি, মুরগী, ছাগল অনায়াসে খেতে পারছে।

এ ব্যাপারে ভিলেজ ভিশনের পরিচালক শরীফ খন্দকার বলেন, তাঁর ইচ্ছা আছে তাড়াশের প্রত্যোক মহল্লায় একটি নিদিষ্ট স্থানে উচ্ছিষ্ট খাদ্য রাখার ব্যবস্থা করা। যাতে ওই খাদ্য খেয়ে অবলা কুকুর বিড়ারের মত পশু পাখি বাঁচতে পারে। এজন্য মহল্লার বিশেষ করে নারীদের বাসার উচ্ছিষ্ট খাদ্য রাখার জন্য অনুপ্রানিত করার জন্য কাজও করছেন।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, সবার উচিত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সকল প্রাণীর প্রতি দয়া ও ভালবাসা দেখানো। আর তাড়াশের সেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিলেজ ভিশনের পরিচালক ও সেচ্ছাসেবীরা  যে ভাবে পশুপাখির প্রতি ভালবাসা ও মমতায় কাজ করছেন। তা দেখে সবারই পশুপাখির প্রতি সদয় হয়ে ভালো কাজ করবে বলে আশা করি।

এমএস

Wordbridge School
Link copied!