সিরাজগঞ্জ: চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন শাখা নদী-নালা, খাল-বিলসহ গ্রামগঞ্জের ফসলী মাঠে অবৈধ চায়না দুয়ারী বা চায়না জাল ব্যবহার করে মাছ শিকারে মহোৎসবে ব্যস্ত অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
এতে দেশিয় মাছ বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়ছে জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য। খুব সহজে বেশি মাছ ধরার এই জাল ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে দেশি প্রজাতির মাছ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন নদীতে প্রায় এক হাজারের মতো চায়না জাল বা চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ ধরা হচ্ছে। শুধু নদীগুলোতেই নয়, খাল ও বিলে একই পন্থায় মাছ ধরা হচ্ছে। মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার ভয়ংকর চায়না দুয়ারী নামক ফাঁদে দেশিয় প্রজাতির সব মাছ ধরা পড়ছে। সহজেই সব ধরনের মাছ ধরার আশায় বিভিন্ন নদী-নালায় অহরহ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন এ জাল।
তাড়াশ মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে চলনবিলের ৯ উপজেলায় বছরে গড়ে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ হাজার মেট্রিক টন বোয়াল, শোল, গোজার, শিং, মাগুড়, টেংরা, পুটি, বাইম, গুচি,বাতাসী, কাকিলা, চাপিলা, টাকি, চিংড়িসহ ১৫-১৮ প্রজাতির মাছ উৎপন্ন হয়। যা এলাকার মানুষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাহিদার প্রেক্ষিতে উচ্চ মূল্যে বিক্রিও হয়ে থাকে। তাতে লাভবান হন চলনবিল অঞ্চলের জেলেরাসহ অনেকে। মুলতঃ গত ২০২১ সাল থেকে চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া ও নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বিশাল জলরাশীতে দেশীয় প্রজাতির মাছ শিকারে অহরহ ব্যবহার হয়ে আসছে সাম্প্রতিক সময়ের ভয়ংকর চায়না দুযারী জাল বা ফাঁদ। যা উদ্ধেগ বাড়াছে মাছ ও জীব বৈচিত্র্য সংশ্লিটদের।
পরিবেশবাদী সংগঠন বাপার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, চলনবিলাঞ্চলের জলাশয়ে সাম্প্রতিক সময়ে হাজার হাজার চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার হয়ে আসছে। যাতে ছেঁকে তোলা হচ্ছে দেশিয় পোনা, মা মাছ ও কাঁকড়া, বাঙ, সাপ, কুচিয়া, কচ্ছপ, শামুকসহ যা সার্বিক পরিবেশের জন্য উপকারী জলজ প্রাণী ও জলজ জীবও বৈচ্যিত্র।
রাজশাহী বিভাগ রাজশাহীর মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, চায়না দুয়ারী কে জাল হিসেবে বর্ণনা করলেও মৎস্য বিশেষজ্ঞরা আসলে এটিকে মাছ শিকারের একটি ভয়ংকর এক ফাঁদ মনে করেন। এই চায়না দুয়ারী জাল বা ফাঁদ বুননে একটি গিট থেকে আরেকটি গিটের দুরত্ব নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের চেয়েও কম হওয়ায় এতে মাছসহ অনান্য জলজ প্রানী ঢুকলে আর বের হতে পারেনা। ফলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের চেয়েও চায়না দুয়ারী জাল মাছ, জলজ প্রাণী ও জলজ জীবও বৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও ভয়ংকরও বটে।
তবে বর্তমান সময়ে মাছ শিকারে চায়না দুয়ারী জাল নিয়ে জেলেরা খুশি হলেও বিশেষজ্ঞরা সর্তক করছেন চায়না দুয়ারী জাল বা ফাঁদ ব্যবহার নিয়ে। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায়না বিলপাড়ের জেলেদের। তাড়াশের মাগুড়াবিনোদ এলাকার জালাল উদ্দিন জানান, এখন চলনবিলে মাছ শিকারে বাঁধা আগের চেয়ে বেশি। কারণ কারেন্ট, বেড়, চায়না দুয়ারীসহ নানা জালে মাছ শিকার নিষিদ্ধ। আর চলনবিলাঞ্চলের মৎস্য বিভাগ মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে এ গুলো ধরে পুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। এটা আমাদের জেলেদের শরীরে সয়ে গেছে। কেননা ইলিশের প্রজনন কালে ওই সকল এলাকায় সরকার জেলেদের প্রনেদনা দিলেও চলনবিল এলাকায় তা দেওয়া হয় না। তাই জীবন-জীবিকার তাগিদেই পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণের তাগিদে আমাদের ক্ষতি মেনেই চায়না দুয়ারীর মত উপকরণ দিয়ে মাছ ধরতে হয়্। এতে কোন জাল নিসিদ্ধ আর কোন জাল বৈধ তা নিয়ে জেলেরা তেমন ভাবেন বলে মনে হয় না।
এ দিকে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশগুল আজাদ জানান, চলনবিল চলনবিল একটি বৃহত এলাকা। মাত্র তাড়াশ উপজেলা অংশের বিলে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর প্রায় ৫৫০ থেকে ৬০০ টি চায়না দুয়ারী জাল আটকের পর তা পুড়িয়ে ধ্বংস করেছেন।
তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘চায়না দুয়ারী বন্ধে মৎস্য আইনে নিয়ম অনুযায়ী যদি কেউ ক্রয়-বিক্রয় করে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও অনাদায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। চায়না দুয়ারি ব্যবহারের ফলে দেশিয় প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। আমরা যদি সবাই সচেতন না হই তাহলে চায়না দুয়ারি ব্যবহার বন্ধ হবে না এবং আমাদেরকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে চায়না দুয়ারি বন্ধে সর্বাত্নক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এছাড়া সব ধরনের নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধেও প্রচারণা চলমান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগ রাজশাহীর মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহেদ আলী জানান, ভয়ংকর চায়না দুয়ারী জাল দেশের নিষিদ্ধ জালের তালিকায় নেই। কিন্তু চায়না দুয়ারী জাল “মেস সাইজ” এর চেয়ে কম। তাই সে হিসেবে এটি নিসিদ্ধ জাল। আমরা চলনবিাঞ্চলের দেশীয় মাছ রক্ষায় বিল এলাকার সকল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের চায়না দুয়ারী জাল ধরে ধংস করার নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি মাছের প্রজনন কালে চলনবিলের জেলেদের প্রনদনা দেবার বিষয়টি সংশ্লিট বিভাগের বিবেচনায় রেখে সংশ্লিট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হবে।
এআর







































