লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে গত ৩দিন থেকেই হঠাৎ করেই জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। টিনের চালে কুয়াশা ফোটা পড়ার শব্দ কানে বাজছে। ১৫-২০ মিটার দূরের গাড়ির বাতিও কুয়াশায় ঝাপসা দেখাচ্ছে। পৌষের শেষে হাড় কাঁপানো হিমেল বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো জেঁকে বসা পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।
কথায় বলে ‘মাঘ মাসে বাঘ কাঁপে’। তবে এবার বোধ হয় পৌষেই বাঘ কাঁপতে শুরু করেছে। বাঘ কাঁপা মাঘ আসতে এখনো বাকি ১০ দিন। কয়দিন ধরে শীত অনুভূত হলেও এর প্রভাব ছিল মূলত রাতে। দিন থেকেছে রৌদ্রকরোজ্জ্বল। ফলে শীতটা সেভাবে টের পাওয়া যায়নি। কিন্তু গত শুক্রবার সকালে থেকে সূর্যের মুখ দেখিনি কেউ। রাত থেকে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। কুয়াশা ও মেঘের কারণে রোদের দেখা মিলছে না। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। মূলত উত্তর দিক থেকে আসা বাতাসে শীতে কাঁপছে সারা দেশ। ঠান্ডায় জুবুথুবু হয়ে পড়েছেন কর্মমুখী সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার রামগতি, কমলনগর, রায়পুর, রামগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হিমেল বাতাসের সাথে চলছে কুয়াশার দাপট। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে কষ্ট করে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। বিপাকে পরেছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া লোকজন। রাতে শীতের তীব্রতার কারণে উন্মুক্ত স্থানে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতার ছোঁয়া নিচ্ছেন জনসাধারণ।
গুগল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে লক্ষ্মীপুরে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। আজ রোববার সকাল থেকে একটু বেড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়ার। সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। ঠাণ্ডা বাতাসের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে সাধারন মানুষ। ঠাণ্ডায় ঝড়োসড়ো হয়ে পড়ছেন পথের ধারে থাকা ছিন্নমূল মানুষগুলো। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষরা শীতে কাতর হয়ে পড়েছে। তাই শীত নিবড়নের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে তারা যাচ্ছেন ফুটপাতের দোকান গুলোতে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে।
এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত নিবারণের জন্য বাড়ছে গরম কাপড়ের চাহিদা। ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া লোকজন জেলা এবং উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন হাট বাজারের পুরনো কাপড়ের দোকানে ভিড় করছেন শীতের পোশাক কিনতে। ক্রেতারা দোকান ঘুরে দরদাম করে পুরনো এসব শীত বস্ত্র কিনছেন। সকল বয়সী ও সব শ্রেণি-পেশার ক্রেতাদেরই দেখা যাচ্ছে পুরানো কাপড়ের দোকানে। শহরের এক ব্যবসায়ী বলেন, নভেম্বর মাসে তাদের কেনাবেচা শুরু হয়েছে, তেমন কেনাবেচা হয়নি। গত তিনদিন ধরে শীত বেঁড়ে যাওয়ায় কেনাবেচা বাড়ছে। আর কেনাবেচা চলবে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত।
গত শুক্রবার, শনিবার ও আজ রোববার সকাল থেকে সূর্যের দেখা মেলেনি। শীতে থেমে থাকেনি স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। হতদরিদ্র ও নিম্নআয়ের লোকজন শীতবস্ত্রের অভাবে এবং শীতের দাপটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পাড়া-মহল্লা ও রাস্তাঘাটের লোকজন আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ফসলের বীজতলা ঠিকমতো পরিচর্যা করা যাচ্ছে না। দরিদ্র ও নিম্নআয়ের লোকজন খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। গরম কাপড়ের অভাবে অনেক দরিদ্র ও নিম্নআয়ের লোকজন বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় কাজেও যোগ দিতে পারছেন না তারা। কাজ করতে না পারায় তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
লাহারকান্দি গ্রামের দিনমজুর নুরু সোনালীনিউজকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা অনেকটাই বেড়েছে। বাতাসের কারণে হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় চলাচল করা যাচ্ছে না। পেটের তাগিদে শীতের মধ্যে আমাদের প্রতিদিন কাজের জন্য বের হতে হয়।
অটোরিকশা চালক ফারুক হোসেন সোনালীনিউজকে বলেন, ঠান্ডায় অনেক লোকজন বাড়ি থেকে না বের না হওয়ায় যাত্রী খুব কম। পেটের দায়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। তবে যে হারে ঠান্ডা বাতাস তাতে সবার চলাচল করতে খুব সমস্যা হচ্ছে।
এমএস







































