• ঢাকা
  • রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১

৫ বছরের শিশু ইয়াসিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রিফা-হাকিম দম্পতির


মো: মিঠু সরকার, পূর্বধলা  মে ২৩, ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম
৫ বছরের শিশু ইয়াসিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রিফা-হাকিম দম্পতির

ছবি : প্রতিনিধি

নেত্রকোণা: দিন যত যাচ্ছে হতাশা ততই গ্রাস করছে আব্দুল হাকিম ও রিফা দম্পত্তির জীবনে। কেননা অভাবের সংসারে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে ও মানুষের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করেই দু’মুটো ভাত জুটে কপালে। তারই মধ্যে পরিবারে লোক সংখ্যা ৫ জন। বড় দুই ছেলেও বাবার সাথে কাজ করে চেষ্টা করে কিছুটা সাবলীল ভাবে চলতে। শুধু যে ইনকামের টাকা দিয়ে ভাত-রুটির ব্যবস্থা করলেই চলবে তা নয়। যত চিন্তা সব পরিবারের ছোট্ট ছেলে ইয়াসিনকে (৫) নিয়ে।

সুন্দর মায়াবী চেহারার শিশু ইয়াসিন। বয়স ৫ বছর বয়স। এ বয়সে একাই হাঁটা-চলা করার কথা থাকলেও এক সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় একটি পা। সেই থেকে আর স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারে না সে। বাবা-মার অনেক স্বপ্ন ছিল তাদের আদরের ছোট্ট ইয়াসিনকে নিয়ে। একদিন বড় হয়ে আলোকিত করবে সমাজ, বাবা-মার অভাব গুছিয়ে ফুটাবে তৃপ্তির হাসি। কিন্তু তা আর হলো না।

বলছি নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের শালদিঘা গ্রামের ইয়াছিনের কথা। শালদিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকের ছাত্র সে। বছর খানিক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে এক নির্মম জীবন অতিবাহিত করছে। মা-বাবা হুইল চেয়ারে বসিয়ে রোজ স্কুলে দিয়ে আসে। যদি বাবা-মা কোনো কাজে ব্যস্ত থাকে সেদিন আর স্কুলে যাওয়া হয় না। এমনই করে আশার আলো নিভে যাচ্ছে শিশু ইয়াসিনের।

ইয়াসিনের বাবা আব্দুল হাকিম বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছি। স্কুলে ভর্তি করেছি, লেখাপড়া করে আমাদের মুখে হাসি ফুটাবে। কিন্তু হঠাৎ এক দুর্ঘটনা আমার সব আশা শেষ করে দিল। আমি গরিব মানুষ রিক্সা-ভ্যান চালিয়ে খাই। যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা করেছি। এখন আমি অসহায় হয়ে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।

ইয়াসিনের মা রিফা বলেন, আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক আশা ছিল। গত রমজানে হোন্ডারের (মোটরসাইকেল) সাথে এক্সিডেন্ট করে পা হারায় আমার ছেলে। সেই থেকে অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা করিয়ে এই আসছি। সরকারি ভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছি। কিন্ত অভারের সংসারে আমরা আর পারছি না। যদি কেউ আমার ছেলের জন্য একটা পা লাগানোর ব্যবস্থা করতো তাহলে সে আবারো হাঁটতে পারতো। একা একা স্কুলে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারতো।

শালদিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মুসলিম উদ্দিন বলেন, ইয়াসিন আমাদের বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকের ছাত্র। মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টে তার একটি পা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। তারপরও তার বাবা-মা কোলে করে স্কুলে নিয়ে আসে। অন্য বাচ্চারা যেখানে স্বাভাবিক ভাবে খেলাধূলা করে সেখানে ইয়াসিন এক পা নেই। তার দিকে তাকালে খুব মায়া লাগে, চোখে পানি এসে যায়। আমি আশা রাখি সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বিত্তবানদের সহযোগিতায় আবারো হাঁটাচলা করতে পারবে ইয়াছিন।

এছাড়াও প্রতিবেশীরা জানান, আব্দুল হাকিমের পরিবারে এক হতাশা নেমে আসে শিশু ইয়াসিনের দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। অভাবের সংসারে তারা সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করছে ইয়াসিনকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তার জন্য ব্যয় হবে লাখ লাখ টাকা। সকলে সহযোগিতা করলে হয়তো আবারো হাঁটতে পারবে সে।

এমএস/এসআই

Wordbridge School
Link copied!