• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

চাঁদপুরে ইলিশের দাম চড়া, অনলাইনে বিক্রিতে প্রতারণা


জেলা প্রতিনিধি, চাঁদপুর আগস্ট ১৪, ২০২৪, ০৬:৫৬ পিএম
চাঁদপুরে ইলিশের দাম চড়া, অনলাইনে বিক্রিতে প্রতারণা

চাঁদপুর: চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ আসে। এরপর এই মাছ পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। চাঁদপুরের এই ঐতিহ্যবাহী মাছঘাটে অন্য মাছের তুলনায় সাধারণত ইলিশের পরিমাণই বেশি থাকে। এসব ইলিশ দক্ষিণাঞ্চলের, ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী ও সন্দীপ থেকে আসে। তবে এবার তুলনামূলক কম, ভরা মৌসুমেও মাছঘাটে পদ্মা-মেঘনার ইলিশের দেখা নেই বললেই চলে। অল্পসংখ্যক নদীর ইলিশ এলেও সেগুলোর দাম চড়া। ফলে আসল রূপালি ইলিশের স্বাদ নিতে পাড়ছেন না ক্রেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। সেই তুলনায় চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের আমদানি একেবারই কম। খুচরা বিক্রেতারা বসে আছেন ইলিশ নিয়ে। 

বুধবার (১৪ আগস্ট) প্রায় ১০০ মণ মাছ আমদানি হয়েছে। এই ঘাটে ৩০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৩৬-৩৮ হাজার টাকা, ৫০০ গ্রামের ওপর থেকে ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৬০ হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ প্রায় ৭৫ হাজার টাকা ও ১২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৮০ লাখ টাকায় পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে গত সপ্তাহে দাম কিছুটা কম ছিল। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কম ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে জেলায় মাছের চাহিদা ছিল ৬৮ হাজার ৪৬৬ টন। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার টন। একই অর্থবছরে শুধুমাত্র ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ হাজার ৩২৬ টন।

দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা বলেন, চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশ অনেক কম, দামও বেশি। ফেসবুকে ইলিশ বিক্রির নামে পেজের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ইলিশ ক্রেতাদের মিথ্যা তথ্য, তাজা ইলিশের ছবি দেওয়া, বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে ইলিশ ও ইলিশের ডিম বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। অনেকে হয়রানির শিকারও হচ্ছেন। এসব ফেজে ইলিশের দাম কম বলে প্রচার করলেও ঘাটে এসে মাছের চড়া দাম দেখে ক্রয় না করে অনেককে খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা গেছে।

বুধবার সকাল (১৪ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর মাছ ঘাটে ঘুরে দেখা যায়, মাছঘাটে ইলিশের সরবরাহ কম। ইলিশের ভরা মৌসুমে যেখানে আড়তদার, শ্রমিক ও ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত থাকতো। সেখানে এখন আড়তগুলোতে নীরবতা এবং কিছু খুচরা বিক্রেতা ইলিশ নিয়ে বসে আছেন।

ঢাকা থেকে আসা ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, অনলাইনে লোভনীয় অফার দেখলাম, চাঁদপুরের মাছঘাটে ইলিশের দাম কম। এ জন্য তাদের দেওয়া নম্বরে ফোন করলাম, কিন্ত তারা ফোন রিসিভ করে নাই। তাই মাছঘাটে আসলাম। কিন্তু এসে দেখি মাছের দাম অনেক বেশি।

আরেক ক্রেতা জাহান পপি বলেন, আমি ঢাকা থেকে আসছি ইলিশ ক্রয় করতে। কিন্তু এখানে আমাদের স্থানীয় বাজারের চেয়ে ইলিশের দাম অনেক বেশি।

কুমিল্লা থেকে আসা ক্রেতা মো. শেখ সাদি বলেন, শুনেছি এখানে মাছের দাম অনেক কম। তাই মাছ কিনতে আসছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি মাছের দাম অনেক বেশি। এজন্য খালি হাতে চলে যাচ্ছি।

চাঁদপুর মাছঘাটের ইলিশ বিক্রেতা নূরে আলম বলেন, এটা ইলিশের বাজার। এখানে প্রতিদিনই মাছ আসে। একটা প্রতারক চক্র অনলাইনে দেখায়, মাছের দাম অনেক কমে গেছে। তারা মানুষের কাছ থেকে মাছের টাকা নেয়। কিন্তু মাছ দেয় না। এখানে চাহিদা অনুযায়ী কেজিপ্রতি মাছের দাম কমে আবার বাড়ে।

আরেক আড়তদার নজরুল ইসলাম বলেন, চাঁদপুরের লোকাল ইলিশ নেই বললেই চলে। এর কারণ হচ্ছে, নদীতে পানি কম থাকায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মাছের দাম অনেক বেশি, ক্রেতাও অনেক বেশি। আজকের বাজারে ১ কেজি ওজনের দাম ১৭০০ থেকে সাড়ে ১৭ শ টাকা। কিন্তু এ সময়ে মাছের প্রতিকেজি ১২০০ টাকা থাকার কথা ছিল।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, গত এক সপ্তাহের তুলনায় ইলিশের সরবরাহ কম। সাগর ও নদী থেকে মাছ কম আসছে। প্রতিকেজিতে এক-দুইশ টাকা বেড়েছে।

চাঁদপুর সদর মৎস্য কর্মকর্তা তানজিমুল ইসলাম বলেন, চাঁদপুরের ইলিশে ঘাটে আড়ত এবং  জেলে বেশি। আড়ৎগুলোতে তাই কী পরিমাণ ইলিশ সরবরাহ করা হয় তা নির্ণয় করা যায় না। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ইলিশ একটু কম ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় সতর্কতা হিসেবে বলেন, অনলাইনে যেসব ফেসবুক পেজ জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সদস্যদের, সেগুলোর তালিকা করে নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা বহির্ভূত অন্যান্য অনলাইন পেজ থেকে সংশ্লিষ্টদের ইলিশ ক্রয়ের বিষয়ে প্রতারণা হতে সতর্ক থাকতে হবে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের ও পুলিশের আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। কেউ প্রতারিত হলে থানায় অভিযোগ করতে হবে। 

এমএস

Wordbridge School
Link copied!