শরীয়তপুর: জাজিরায় পদ্মা সেতু এলাকায় দীর্ঘ পদ্মা সেতুর প্রকল্পের রক্ষা বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ধস দেখা দিয়েছে। এ যেন পদ্মা তার ভয়াল রুপে আছড়ে পড়েছে শরীয়তপুর জাজিরার বুক জুড়ে। শান্তিতে বসবাস নয় কেবল ওই কান্না, আতঙ্ক আর সর্বস্ব হারানোর যন্ত্রণায় কাতর নদীপাড়ের হাজারো বাসিন্দা।
হঠাৎ শুরু হওয়া ভাঙ্গনে পদ্মা সেতুর প্রকল্প রক্ষা বাধের আড়াই'শ মিটার অংশ নিমিষেই গিলে নেয় অন্ধকার জলের অতল গহ্বরে। এ যেন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, যেন পদ্মা নিজেই প্রতিশোধ নিতে নেমেছে।
ভাঙন ঠেকানো না পারলে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে রাস্তাঘাট, হাট বাজারসহ শতাধিক বসত বাড়ি। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের। আর ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় মাঝিরঘাট থেকে পূর্ব নাওডোবা পর্যন্ত নির্মিত হয় প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ রক্ষা বাঁধ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এই প্রকল্পের ব্যয় ১১০ কোটি টাকা। কিন্তু বছর না ঘুরতেই ধসের শুরু হয়।
গত বছরের নভেম্বরেই নাওডোবা এলাকায় ১০০ মিটার বাঁধ ধসে যায়, যার পুন:নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যয় করে আরো ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এবার সেই সংস্কার করা এলাকাসহ আরো একটি স্থান একদিনেই ধসে গেছে নদীতে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর পূর্ব পাশের নদীর গভীরতা বাড়ায় পুরো বাঁধ এখন চরম ঝুঁকির মুখে।
মাঝিঘাট বাজারে প্রায় ২০০ দোকান। সবই এখন ভাঙনের মুখে। ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, দোকানে দুই দিন আগেই নতুন মাল এনেছি ঈদের বিক্রির জন্য। এখন সব শেষ। দোকানটা নদীতে চলে গেলে কি করব? আমাদের ঈদ শুধু শেষ নয়, পুরো জীবনটাই ধ্বংসাত্বক জীবনে পরিণত হবে।
জাজিরার মাঝিরঘাট এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, গতকাল ঈদের জন্য ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরেছি। কিন্তু এবার কোনো ঈদ হলো না। ভোরে ঘুম ভেঙ্গে উঠে দেখি নদীতে আমাদের ঘর গিলে নিচ্ছে। ঈদের নামাজ পড়া তো দূরের কথা, এত ব্যস্ত ছিলাম এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাব জানিনা।
ভাঙ্গনের শিকার হওয়ার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের দিনেও আমার কোন ঈদ ছিল না। আমার বাড়ি ঘর সব পদ্মা নদীতে ভাইঙ্গা লইয়া যাইতেছে। ঘরবাড়ি সরাইয়া সারতে পারছি না। অতি তাড়াতাড়ি এই জায়গায় যদি বস্তা না ফেলা হয় তাহলে পুরো এলাকা নদী গর্ভে চলে যাবে।
পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা বাদশা শেখ বলেন, কয়েক বছর ধরে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পদ্মা কাছে চলে এসেছে। ভাঙনের ফলে রক্ষা বাদে দুটি স্থানে অন্তত আড়াই'শ মিটার বাঁধ ধসে গেছে। আমরা চাই নদীতে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধের পাশাপাশি শক্ত একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক।
মাঝির ঘাট বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, আমাদের এই বাজারে ২০০ দোকান আছে। পাকা ঘর, বিল্ডিং করা। আমাদের এগুলো সব ধ্বংস হয়ে যাবে। সরকারের কাছে দাবি, আমাদের জীবন যাপনের জন্য হলেও দ্রুত ভাঙন ঠেকানো হোক।
বিশেষজ্ঞ সচেতন মহল বলেছেন, বারবার মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও পরিকল্পনার অভাব ও অনিয়মের কারণে পদ্মা পাড়ে কোনো স্থায়ী সমাধান আসছে না। রক্ষা বাঁধ নির্মাণের উদ্দেশ্যই ছিল নদী ভাঙন রোধ এখন সেই বাঁধই যেন এক একটি মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
এদিকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আতঙ্কে কাঁপতে থাকা মানুষগুলোর প্রশ্ন এখন আমাদের কি হবে ঈদের দিন যখন পুরো দেশ আনন্দে মেতে উঠেছে তখন শরীয়তপুরের জাজিরার মানুষ গৃহহীন আশ্রয় খুঁজছেন অন্য কোথাও।
এটা কেবল একটি বাঁধ ধস নয়, বরং সরকারের অবহেলা পরিকল্পনার ব্যর্থতা এবং প্রকৃতির প্রতিশোধের এক নির্মম প্রতিচ্ছবি। পদ্মা এবার শুধু ঘর নয়, কেড়ে নিচ্ছে ঈদের আনন্দ, মানুষের স্বপ্ন এবং জীবনের নিরাপত্তা।
এদিকে ধসে পড়া বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর দ্রুত বাঁধটির ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী চন্দ্র বণিকের। আমরা খবর পেয়ে ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেছি অতি দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এআর







































