• ঢাকা
  • সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

বিএনপির ঐক্যের প্রয়োজনে এমপি পদ চাইবো না: বাবলু


ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জুন ১৯, ২০২৫, ১০:১৭ পিএম
বিএনপির ঐক্যের প্রয়োজনে এমপি পদ চাইবো না: বাবলু

পাবনা: ঈশ্বরদীতে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে সন্ধ্যায় ঈশ্বরদী শহরে সাবেক মেয়র মোখলেছুর রহমান বাবলু নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু। 

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি পাবনা-৪ ( ঈশ্বরদী আটঘরিয়া) আসনে বিএনপি’র বিজয় সুসংহত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে আমি ও আমার অপর দুই ভাইসহ ৯ জনকে ফাঁসির দন্ডাদেশ, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৩ জনকে ১০ বছরের সাজা দেওয়ায় আমরা ৪৭ জন সহযোদ্ধা নেতাকর্মী কারাগারে বন্দী থাকার কারণে ঈশ্বরদীবাসীর পাশে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছরের অধিক সময় থাকতে পারি নাই। 

গত ১১ই ফেব্রুয়ারি মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে বেকসুর খালাস পেয়ে আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। কারামুক্ত হয়ে ঈশ্বরদীর মাটিতে যখন পদার্পণ করে জনগণের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ওইদিন আমরা সকলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম ঈশ্বরদীকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে রাজনৈতিক পরিকল্পনাগুলোকে সার্বজনীন করার জন্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে আমি, হাবিব ভাই ও পিন্টু কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে কাজ করে যাবো। ঈশ্বরদীর শান্তি শৃঙ্খলায় সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকবো। 

আমি বিশ্বাস করি ঐক্যই আমাদের বড় শক্তি। রাজনীতিতে মতভেদ থাকবে, মনোমালিন্য থাকবে, থাকবে যুক্তিতর্ক ও নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা।  সেদিন আমরা ৩ জন হাতে হাত ধরে যে ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছিলাম তা দেখে ঈশ্বরদীর মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিলেন, আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়েছিলেন। প্রায় তিন যুগ পর এবার হয়তো তাদের হারানো সংসদীয় পাবনা -৪ ( ঈশ্বরদী আটঘরিয়া) আসন ফিরে পাবো।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু অতি সম্প্রতি অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের অনাকাঙ্খিত কর্মকান্ড বা আচরণ ঈশ্বরদীর মানুষকে ভাবিত করেছে, হতাশ করেছে। যা এখনই পরিসমাপ্তি জরুরী। আশা করি আমাদের ধৈর্য্য ও সহনশীল আচরণের মাধ্যমে গত ১১ ফেব্রুয়ারী তারিখে গণসংবর্ধনায় দেওয়া আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা পাবে। 

গত ঈদুল আজহার পূর্বে হাইকমান্ড থেকে হাবিব ভাই ও পিন্টুসহ আমাকে ঢাকায় ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনার পর আমি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বলেছিলাম, আমার আর দলের কাছে চাওয়া পাওয়ার কিছু নাই। 

দল এবং ঈশ্বরদীর মানুষ তিন বার প্রায় ১৮ বছর আমাকে ঈশ্বরদী পৌরসভার দায়িত্ব পালন করার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে অঙ্গীকার করেছি দলের বৃহত্তর স্বার্থে আমি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতা চাইবো না। এমনকি দল যদি মনে করে আমাকে পৌরসভা নির্বাচনেও প্রার্থীতা ত্যাগ করতে হবে সেখানেও আমার কোনো আপত্তি নাই।

সেই বৈঠকে আমি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বলেছি, বিগত নির্বাচনগুলোতে যে সমস্ত কারণে ফলাফল আমরা ঘরে তুলতে পারিনি। সেইসব বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করে আসন্ন নির্বাচনে দলের মধ্যে বিভাজন দূর করে আমরা আমাদের 'মা জননী' দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পাবনা - ৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া)  আসনটি উপহার দিতে চাই।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আজমল হোসেন ডাবলু, উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি ভাষা প্রামানিক, বিএনপি নেতা তুহিন চৌধুরী, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি প্রয়াত নেফাউর রহমান রাজুর সহধর্মিনী খাদিজা আক্তার নিপা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালযের সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান পলাশ, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি রেজাউল করিম শাহিন, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম নয়ন, যুবদল নেতা মিজানুর রহমানসহ বিএনপি, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য, পাবনার ঈশ্বরদীতে গত ১১ ই ফেব্রুয়ারি ঈশ্বরদী পুরাতন বাস টার্মিনালে শেখ হাসিনা হত্যা চেষ্টা মিথ্যা মামলার খালাস প্রাপ্ত নেতাকর্মীদের গণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাবিব-বাবলু-পিন্টু, ঈশ্বরদী বাসীর বন্ধু এই স্লোগানেই উত্তাল ছিলো সেদিন ঈশ্বরদী শহর। উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেন দীর্ঘদিন পর সেদিন প্রাণ ফিরে পেয়েছিলো।

গত ১১ই ফেব্রুয়ারী ঈশ্বরদী পুরাতন বাস টার্মিনালের শেখ হাসিনা হত্যা চেষ্টার মিথ্যা মামলায় খালাস প্রাপ্ত নেতাকর্মীদের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিন ওই মামলায় সাজা ভোগের পর খালাসপ্রাপ্ত হয়ে এবছরের ১০ই ফেব্রুয়ারি মামলায় মুক্তি পান পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু সহ আরও তিন জন। 

আর একদিন পরেই গত ১১ই ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু, আক্তারুজ্জামান আক্তার, ভিপি শাহীন, মাহাবুবুর রহমান পলাশ, নুরে আলম মোস্তফা শ্যামল সহ বাকি নেতাকর্মীরা।

ওই দিন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের নেতৃত্বে ঈশ্বরদীর সর্বস্তরের বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজশাহী ও পাবনা জেলা কারাগার থেকে কারামুক্ত নেতাকর্মীদের রিসিভ করে ঈশ্বরদী পুরাতন বাস টার্মিনালে এনে গণ সংবর্ধনা প্রদান করেন। 

ওই দিনই মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাবিবুর রহমান হাবিব, মকলেছুর রহমান বাবলু ও জাকারিয়া পিন্টু মঞ্চে দাড়িয়ে  আগামী দিনের রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এরই মধ্যে ঈশ্বরদী জুড়ে হাবিব-পিন্টুর ঐক্যবদ্ধতা ভাঙনের গুঞ্জন  শুরু হতে থাকে। গত ১৫ জুন উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের চররূপপুর ফটু মার্কেট এলাকায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু আ.লীগকে পুনর্বাসন, সন্ত্রাসীদের সাথে আতাত, চাঁদাবাজি, কমিটি বানিজ্যসহ একাধিক অভিযোগ তোলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে। আর বিএনপি চেয়ার্পারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, অন্যায় ভাবে কাউকে দোষারোপ করার আগে তার সত্যতা কতটুকু, তা যাচাই-বাছাই করা উচিত।

ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুর এমন বক্তব্যের পর থেকেই ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির রাজনীতির মাঠে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে ও তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করতে পাবনা জেলায় বিএনপির ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই।

এআর

Wordbridge School
Link copied!