• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

দুর্গাপূজার বাজার মাতাচ্ছে ঈশ্বরদীর বেনারসি কাতান


ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
দুর্গাপূজার বাজার মাতাচ্ছে ঈশ্বরদীর বেনারসি কাতান

পাবনা: দুর্গাপূজা সামনে রেখে কর্মব্যস্ত সময় পার করছে পাবনার ঈশ্বরদীর বেনারসি পল্লীর তাঁতি ও ব্যবসায়ীরা। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ এই বেনারসি পল্লীর শাড়ি দেশ ও বিদেশে সমাদৃত। দেশি হ্যান্ডলুম প্রযুক্তিতে দক্ষ কারিগরের নিপুণ হাতে তৈরি হয় প্রতিটি শাড়ি।

ঈশ্বরদী পৌর এলাকার ফতেমোহাম্মদপুরে দীর্ঘকাল থেকে বেনারসির তাঁত শিল্প চলে আসছে। কারিগররা হাতে তৈরি বেনারসি শাড়ি, জরি ও পুথির শাড়ি তৈরি করে থাকেন। এই শাড়ির চাহিদা রয়েছে সারা দেশে। পূজা, ঈদ, বিয়ে বা বিশেষ অনুষ্ঠানে বেনারসি শাড়ির বিকল্প নেই অনেক নারীর কাছে।

শাড়ি কিনতে আসা গ্রাহকরা জানান, নতুন মডেলের শাড়ি বাজারে এসেছে। গতবারের তুলনায় এবার শাড়ির দাম কিছুটা বেশি হলেও উৎসবের কারণে তা গ্রহণযোগ্য। সুস্মিতা রায়, মালতি কর্মকার, পূজা রায়, মালতি রানী ও লক্ষ্মী চক্রবর্তী জানান, উৎসবের মরশুমে বেনারসি শাড়ি কেনাই প্রাথমিক পছন্দ।

পঞ্চাশোর্ধ্ব বেনারসি শ্রমিক আবেদ আলী খান বলেন, ‘এটা বাপ-দাদার পেশা। অন্য কোনো কাজ কখনো শিখিনি। এই পেশাতেই বেঁচে আছি। আগে যেমন কাজ ছিল, এখন তেমন নেই। কিছু মানুষ এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছি। বেনারসি শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।’

ফারুক বেনারসি বলেন, ‘ঈশ্বরদীতে কয়েকশত বেনারসি শাড়ি তৈরির তাঁত ছিল। বর্তমানে শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে, কাঁচামালের দাম বেড়েছে। তাঁত বন্ধ হওয়ায় অনেকেই পেশা বদল করেছেন। এখন যারা আছে, তারা অনেক কষ্টে শিল্পটি ধরে রেখেছেন।’

জাবেদ বেনারসি জানান, “তাঁতের সংখ্যা আগের তুলনায় কম। উৎপাদনের দিক থেকে অবস্থান ভালো। শ্রমিক ও কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। ঈশ্বরদীর তৈরি বেনারসি কাতান রাজধানী ঢাকাসহ ভারতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পুজো উপলক্ষে ধনী, মধ্যবিত্ত ও গরিবদের জন্য নতুন মডেলের শাড়ি তৈরি করেছি।”

ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর তাঁত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওকিল বলেন, “দেশি বেনারসি শাড়ির জন্য পল্লীটি সুনাম পেয়েছে। তবে বিদেশি বাজারে আমাদের শাড়ি সঠিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না। ভারতের শপিংমলে আমাদের হাতে তৈরি শাড়ি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আবার ভারতের মেশিনে তৈরি কমদামের মানহীন শাড়িকে বেনারসি বলে ক্রেতাকে বিক্রি করছে। এটি বাজার নষ্ট করছে। সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করি।”

ঈশ্বরদীর স্থায়ী বাসিন্দা ও সাবেক কাউন্সিলর কামাল আশরাফী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এই এলাকার প্রায় সব বাড়িতেই বেনারসি তাঁত ছিল। শাড়ি তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকরা পেশা বদল করছেন। নতুন কারিগর খুব কম আসছেন। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা ছাড়া এই শিল্প হারিয়ে যেতে পারে।’

শিল্পীরা দিনরাত কষ্টে বেনারসি শাড়ি বুনে যাচ্ছেন। শারদীয় দুর্গাপূজো উপলক্ষে রাজধানী ও ভারতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করছেন। তারা আশা করছেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও ক্রেতাদের সচেতন মনোভাবের মাধ্যমে এই শতবর্ষী বেনারসি শিল্প টিকে থাকবে।

এসএইচ
 

Wordbridge School
Link copied!