• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

পাচারকারীদের ধরতে সবসময় সতর্ক থাকতে হয় পুলিশকে

অভিনব কৌশলে মাদক পাচার


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২, ২০২১, ০৩:৫৮ পিএম
অভিনব কৌশলে মাদক পাচার

ঢাকা : মাদক পাচারে নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। অনেক সময় পাচারকারীদের নতুন ও ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল দেখে হতবাক হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।

সবজি পরিবহনে বিশেষ চেম্বার তৈরি, শুকনো মরিচ, জুতা, ইলিশ মাছ, কচ্ছপ ও নারীদের অন্তর্বাসসহ নানা কিছুর ভেতর ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাচার করে আসছে মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রায়ই স্থল ও জল সীমান্তসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদক জব্দ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ইয়াবাই সবচেয়ে বেশি। আর ইয়াবা পাচারে বাহকদের কৌশলে বিস্মিত সংশ্লিষ্টরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে মাদক ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে এসব মাদক পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, জিআই পাইপ, পানির কলসিতে ইয়াবা তৈরির কেমিক্যাল, মহিলাদের অন্তর্বাস, ছাতা, ইলিশ মাছ ও শুকনো মরিচও রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে রাজধানীতে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল পাচারের পরিমাণ বাড়ছে। বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার এবং মাদক ব্যবসায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করার পরেও এদের নিয়ন্ত্রণে আনা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন কৌশলে মাদক পরিবহন করলেও আমরা এ সব কৌশলের সাথে পাল্লা দিয়ে এদের আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছি। মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের সবার সহযোগিতায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার মন্তব্য করেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদ, তাকি, বশিরহাট, স্বরূপনগর, বাদুরিয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বনগাঁও, পেট্রাপোল, হেলেঞ্চা, ভবানীপুর, রানাঘাট, অমৃতবাজার, বিরামপুর, করিমপুর, নদীয়া, মালদাহ, বালুরঘাট, আওরঙ্গবাদ, নিমতিতাসহ সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় সব এলাকা দিয়ে ১৫টি পয়েন্টে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট এবং দিনাজপুরে মাদক ঢুকছে। আর ভারতের আসাম এবং মেঘালয়ের বাংলাদেশ ঘেঁষা এলাকাগুলোর চারটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনায়।

এছাড়া ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে নওগাঁয় ফেনসিডিল পাচারের নতুন রুটের সন্ধান পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব রুট দিয়ে দেশে হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা আসছে। পরে নানা কৌশলে রাজধানীতে ঢুকছে এসব মাদক।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সঙ্গে মাত্র ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্তের সবচেয়ে সক্রিয় মাদক রুটগুলো গোটা দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কারণ, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ঢুকছে কোটি-কোটি পিস ইয়াবা। ইয়াবার অবাধ প্রবেশে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ ইয়াবা তৈরি হয় মিয়ানমার-চীন সীমান্তের শান এবং কাচিন প্রদেশে।

মিয়ানমারের সাবাইগন, তমব্রু, মুয়াংডুর মতো ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, ধুমধুমিয়া, কক্সবাজার হাইওয়ে, উখিয়া, কাটাপাহাড়, বালুখালি, বান্দরবানের গুনদুম, নাইখ্যংছড়ি, দমদমিয়া, জেলেপাড়ার মতো অর্ধশত স্পট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। আর হাত বদল হয়ে নানা পন্থায় রাজধানীতে আসছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলছেন, ইয়াবার জন্য মিয়ানমারের পছন্দের বাজার ছিল থাইল্যান্ড। কিন্তু আমাদের দেশে এই মাদকের আসক্তের সংখ্যা কল্পনার বাইরে চলে যাওয়ায় ইয়াবার বড় বাজারে পরিণত হয় বাংলাদেশ। এই বাজারের চাহিদা মেটাতে কক্সবাজার-টেকনাফের স্থল সীমান্তবর্তী ৬০-৭০টি স্পট দিয়ে দেশে ইয়াবা ঢুকছে। কক্সবাজার, টেকনাফ সংলগ্ন উপকূলবর্তী সমুদ্রে প্রায় ৩ লাখেরও বেশি ছোট-বড় নৌযান চলাচল করে। এসব নৌযানে করে ইয়াবার চালান আসে।

ডিএমপি সূত্র জানায়, রোববার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা থেকে অভিনব কায়দায় আনা গাঁজার বড় চালানসহ তিনজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. রবিউল হোসেন, মো. দুলাল খান ও মো. লালন খান। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার ও গাঁজা পরিবহনে ব্যবহূত একটি পিকআপ জব্দ করা হয়।

ডেমরা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আজহারুল ইসলাম মুকুল জানান, রবিবার কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী বি-বাড়িয়ার কসবা থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে ঢাকায় এনে বিক্রি করার জন্য যাত্রাবাড়ীর সিটি করপোরেশনের কাঁচামালের আড়তের সামনে অবস্থান করছে মর্মে সংবাদ পায় গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ। এমন সংবাদের ভিত্তিতে উক্ত স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা দেশের সীমান্তবর্তী জেলা বি-বাড়িয়া থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে আসতো। এরপর রাজধানী ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতো। মাতুয়াইল এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর একটি কাভার্ডভ্যান তল্লাশি করে গাড়ির ভেতরে অভিনব কৌশলে তৈরি করা গোপন কক্ষ থেকে ৪৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এ সময় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- রুবেল সরকার (৩৫) ও চালক সুমন মিয়া (২৪)। গাঁজা পরিবহনে ব্যবহূত কাভার্ডভ্যানটি জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে আরেক অভিনব কায়দায় আনা ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা থেকে ইয়াবাসহ ২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. এনামুল হক ও সুমাইয়া আক্তার।

অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ খলিলুর রহমান জানান, ৩১ জানুয়ারি, একটি কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভারের সিটের ভেতরে অভিনব কায়দায় লুকানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ইয়াবাগুলো।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, জব্দকৃত কাভার্ডভ্যানের ভেতরে অভিনব কৌশলে একটি গোপন কক্ষ তৈরি করা হয়, যা গাড়ির ড্যাশবোর্ড থেকে বিশেষ একটি ইলেকট্রিক সুইচের মাধ্যমে অটোমেটিক হাইড্রোলিক দরজা খোলা জোড়া করা যেত। মাদক পরিবহনের জন্য এই গোপন কক্ষটি ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরো বলেন, যেসব মাদক ব্যবসায়ী মাদক পাচারের জন্য বিভিন্ন ধরনের অভিনব কৌশল অবলম্বন করছে আমরা তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কোনো তথ্য পেলেই আমরা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করতে নিয়ে আসছিল।

র‌্যাব-২ এর মিডিয়া কর্মকর্তা এএসপি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত শুক্রবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে সিমান্ত এলাকা থেকে একটি পণ্যবাহী পিকআপে করে ফেনসিডিলের চালান রাজধানীতে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর আদাবর থানার শ্যামলী মাঠ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকের চালনসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে টমেটো, কুল ও পেয়ারা বাক্সের ভেতরে অভিনব কায়দায় লুকিয়ে রাখা ১০০১ বোতল ফেনসিডিল ও পলিথিনে মোড়ানো ১ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১৫ লাখ টাকা।

গ্রেপ্তারকৃতরা র‌্যাবকে জানিয়েছেন, অভিনব কায়দায় নিত্যনতুন কৌশলে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসা ফেনসিডিল ও গাঁজা স্বল্প মূল্যে কিনে বড়লোক হওয়ার জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশি দামে মাদক সরবরাহ করে আসছিলেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!