• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই, ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

কর্মক্ষেত্র থেকে পালিয়েছেন শরীয়তপুরের ডিসি


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২০, ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম
কর্মক্ষেত্র থেকে পালিয়েছেন শরীয়তপুরের ডিসি

শরীয়তপুর: শরীতপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

ভিডিওটিতে তার সঙ্গে এক নারীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। আর এই ঘটনার পর প্রশাসনে বইছে সমালোচনার ঝড়। এই ঘটনা জানার পর পরই নিজের ব্যবহার করা সরকারী গাড়ি এবং সরকারী মোবাইল ফোন রেখে কর্মক্ষেত্র শরীয়তপুর থেকে পালিয়েছেন তিনি। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথেও যোগাযোগ রাখছেননা এই কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মোবাইল ফোনে একটা কল আসে। এরপর তিনি নিজে ব্যবহার করা মোবাইল ফোন এবং সরকারি গাড়ি শরীয়তপুরে রেখে সেখান থেকে সটকে পড়েন। এরপর থেকে তিনি নিজ জেলার কোনো কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ রাখছেন না।

জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আসলাম হোসেন বলেন, স্যার বৃহস্পতিবার একটু ঝামেলা হয়েছে এজন্য ঢাকায় যেতে হবে এমনটি জানিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যান। এরপর থেকে স্যারের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আওয়ামী আস্থাভাজন মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ২৭ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। চাকরি জীবনে ২০১১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দীর্ঘ ৯ বছর কাজ করেছেন। এর মাঝ খানে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ২ বছর ৩ মাস গাজীপুরের সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন।

গত আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর ২২ সেপ্টেম্বর শাস্তিমূলক বদলী হিসেবে তাকে নিউরো ডেভলপমেন্ট প্রতিবন্ধী ট্রাস্ট এর পরিচালক হিসেবে বদলী করে অর্ন্তবর্তী সরকার। এরপর ঢাকার মিরপুরের একজন বিএনপি নেতাকে ম্যানেজ করে শাস্তিমূলক বদলীর মাত্র ১ মাস ১২ দিন পর একই বছরের ৩ নভেম্বর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পদ বাগিয়ে নেন।

এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে প্রবাসী একজন সাংবাদিক তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ছবি ও টেলিগ্রামে ভিডিওটি পোস্ট করেন।

ফেসবুক ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘শরিয়তপুরের ডিসি মো. আশরাফ উদ্দিন। একজন জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যক্তি। উনি এই ছবিগুলো নিজেই খুশি মনে তুলেছেন। ভিডিও করেছেন। ছবির ওনাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। এখন বিয়ে না করে হু/ম/কি দিচ্ছেন। ওনার কোলে তোলার গল্পের খানিকটা কমেন্টের টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া আছে।’

এছাড়াও টেলিগ্রামে পোস্ট করা ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন শার্টের বোতাম খুলে বুক খোলা অবস্থায় লাল-হলুদ রঙের জামা ও স্যালোয়ার পড়া এক নারীকে কোলে নিয়ে চুম্বন করছেন। এছাড়াও ভিডিটিওর মাঝেখানে রয়েছে মোবাইলের ভিডিও কলে থাকা অবস্থায় ওই নারীকে তার বিশেষ গোপনাঙ্গ প্রদর্শন করছেন জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন।

এ ঘটনায় চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, এই ঘটনা চরম বিব্রতকর। এতে প্রশাসন ক্যাডার এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরও ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

এত যাচাই বাছাই করে কি বিবেচনা করে ডিসি ফিটলিস্টে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল? আওয়ামী আমলে ব্যাপক সুবিধাপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা কিভাবে এই আমলে ডিসি ফিটলিস্টে আসলেন এবং ডিসি হিসেবে পদায়িত হলেন?

ক্ষুদ্ধ মাঠ প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিসির কাছ থেকে এ ধরনের কাজ কেউ প্রত্যাশা করেনা। ডিসি ফিটলিস্ট প্রণয়ণ এবং পদায়নের ক্ষেত্রে আরো স্বচ্ছতা থাকা উচিত। ডিসির এই ঘটনা নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া এবং জনপ্রশাসনের দক্ষতাকে বিতর্কের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেনা বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি সম্ভব হয়নি।

এআর

Wordbridge School
Link copied!