• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষ বিনিয়োগকারী গড়তে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির স্বীকৃতি দেবে বিএসইসি


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৮, ২০২১, ০১:৫৭ পিএম
দক্ষ বিনিয়োগকারী গড়তে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির স্বীকৃতি দেবে বিএসইসি

ফাইল ফটো

ঢাকা: শেয়ারবাজার বিষয়ে শিক্ষা বিস্তার সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটস (বিআইসিএম)। একইসঙ্গে সরকারে নির্দেশে ও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম)। এতদিন শেয়ারবাজার বিষয়ে দক্ষ বিনিয়োগকারী গড়ে তুলতে বিআইসিএম ও বিএএসএম প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করে আসছে। পাশাপাশি সার্টিফিকেট ও ডিগ্রি প্রদান করেছে প্রতিষ্ঠান দুটি। এবার সেই ডিগ্রি স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। 

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ারবাজারে শিক্ষিত বিনিয়োগকারী ও দক্ষ জনবল বাড়বে। একই সঙ্গে এ শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হবেন অনেকে। মূলত বিনিয়োগকারীসহ শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সবার সঠিক বিনিয়োগ শিক্ষা দরকার। আর সেই জ্ঞান প্রদান করে থাকে বিআইসিএম ও বিএএসএম। বিএসইসির এ সিদ্ধান্তে বিনিয়োগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যারা শিক্ষা নিচ্ছেন এবং যারা শিক্ষা দিচ্ছে-উভয় পক্ষ স্বীকৃতি পাবে। বিশেষ করে এ বিনিয়োগ শিক্ষা ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর প্রতিষ্ঠান দুটি আরো সক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ শিক্ষায় সহায়ক হবে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিএসইসির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিআইসিএম ও বিএএসএম থেকে আয়োজিত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন, মাস্টার্স ও সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম সংক্রান্ত ডিগ্রি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত রোববার বিএসইসির সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ও বিএএসএমের মহাপরিচালক বরাবার পাঠানো হয়েছে।
 
এ ছাড়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি, অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের সভাপতি এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতিকে এ বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে সব মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউস, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি কোম্পানিগুলোকে জানাতে বলা হয়েছে।
 
বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, একটি দক্ষ, স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক ও সমৃদ্ধ শেয়ারবাজার গঠনের লক্ষ্যে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেশাগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসইসির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিআইসিএম ও বিএএসএম’এ বিভিন্ন পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন, মাস্টার্স ও সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিআইসিএম ও বিএএসএম থেকে করা ডিগ্রি এবং ডিগ্রিধারীদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের চাকরি বিধি অনুযায়ী অগ্রাধিকার প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, আগামীতে এ বিনিয়োগ শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে বিএসইসি। বিশেষ করে কিছু কিছু পেশার জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। বিশেষ করে রেজিস্টার্ড ট্রেডার ও অথরাইজড রিপ্রেজেনটেটিভের জন্য এ লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হবে।

জানতে চাইলে বিআইসিএম’র নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার বলেন, এটা আমাদের জন্য অধিক সম্মানের বিষয়। ২০১০ সাল থেকে বিআইসিএম বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আয়োজন করে সার্টিফিকেট দিচ্ছে। আর ২০১৫ সাল থেকে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্সটি চালু করা হয়েছে। সুতরাং বিআইসিএম থেকে যারা শিক্ষা নিচ্ছেন এবং যারা শিক্ষা দিচ্ছেন-এ দুই পক্ষেরই দাবি ছিল এ ধরনের শিক্ষার একটি স্বীকৃতি পাওয়া। অবশেষে তা পূরণ হয়েছে। এজন্য কমিশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কমিশনের এ সিদ্ধান্ত বিআইসিএমের জন্য উৎসাহজনক। এতে করে শেয়ারবাজারে শিক্ষিত বিনিয়োগকারী ও দক্ষ জনবল বাড়বে। কমিশনের এ সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে পদায়ন, পদোন্নতি ও ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা রাখবে।
 
বিএএসএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, এটা বিএসইসির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এতে করে বিএএসএম স্বীকৃতি পেল। আর যারা এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন, তারা স্বীকৃতি পাবেন। এতে উভয়ই লাভবান হবেন। আমাদের দেশে এডুকেশন ছাড়াই লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে পরীক্ষায় পাস করার পর লাইসেন্স দেওয়া হয়। যারা প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগ শিক্ষাসংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন কেবল তারা এ লাইসেন্স পাবেন। আগামীতে বিনিয়োগ শিক্ষা গ্রহণ ও লাইসেন্সপ্রাপ্তি বাধ্যবাধকতা করা হতে পারে।

এদিকে বিএমবিএ’র সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, এটা কমিশনের একটা ইতিবাচক উদ্যোগ। কারণ শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য  প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জরুরি। এ শিক্ষা না থাকলে সঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। আর প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকলে সেই কাজ বাস্তবে প্রয়োগ করা অনেক সহজ হয়। কমিশনের উদে‌্যাগ যথাযথ। এর ফলে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বিনিয়োগ শিক্ষার জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া পেশাগত দায়িত্ববোধ বাড়বে ও আইনি কাঠামো সম্পর্কে ভালো ধারণা হবে, যা সার্বিকভাবে শেয়ারবাজার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সোনালীনিউজ/এমএইচ

Wordbridge School
Link copied!