• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

নতুন দরিদ্রের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.৫৪ শতাংশে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৫, ২০২২, ০৯:১৮ পিএম
নতুন দরিদ্রের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.৫৪ শতাংশে

ফাইল ছবি

ঢাকা: করোনাকালে দেশে তিন কোটির বেশি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছিল। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়াতে এই সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশে ২১ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে বলে বেসরকারী এক জরীপে প্রকাশ করা হয়েছে। 

তারা বলেন, মূল্যস্ফীতি এবং দারিদ্রের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হওয়ায় "নতুন দরিদ্রের" হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.৫৪ শতাংশে। যা মে মাস শেষে ৩ কোটি ৯ লাখে উন্নীত হতে পারে। 

চলমান মুল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো তাদের প্রকৃত আয়, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় খরচের ক্ষেত্রে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে কোভিড-১৯’র ধাক্কা সামলে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানো তাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি নতুন ঝুঁকির সম্মুখীন। তা হলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পুষ্টি ও শিক্ষার যে লক্ষ্য নির্ধারিত। সেটি পূরণ না হওয়ার আশংকা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (বিআইজিডি) গবেণায় এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

এক ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমের সামনে ‘মূল্যস্ফীতি, খাপ খাওয়ানো ও পুনরুদ্ধারের প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক পঞ্চম দফার এ জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন তুলে ধরে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি)’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন।
   
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, মানুষের আয় করোনাপূর্ব সময়ের চেয়ে এখনো ১৫ শতাংশ কম। শহরে এ হার অনেক বেশি, ২৫ শতাংশ। গ্রামে তা ১ শতাংশ। গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের আয় কমেছে অনেক বেশি হারে। দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে শহরের যেখানে আয় কমে যাওয়ার হার ৮, গ্রামে তা ৩ শতাংশ। দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে নারীরা নতুন করে কর্মক্ষেত্রে ঢোকার চেষ্টা করছেন। তবে করোনাকালের কাজ হারানো ৩৬ শতাংশ নারী এখনো কর্মক্ষেত্রে ঢুকতে পারেননি। মূল্যস্ফীতির এই চাপ আরও অনেক নারীদের কাজের খোঁজে বাইরে বের হতে বাধ্য করেছে। জানুয়ারিতে সমীক্ষায় অংশ নেয়া নারীদের ৪০শতাংশ আয়-সংক্রান্ত কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। মে মাসে দেখা গেছে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ শতাংশ।

জরীপে তথ্য বলছে, দৈনিক প্রকৃত মাথাপিছু আয়ের সাম্প্রতিক পতন গ্রামীণ এলাকার (৩%) তুলনায় শহুরে বস্তিতে (৮%) তীব্র হয়েছে। কোভিড-১৯ শহুরে বস্তিতে থাকা পরিবারগুলোর জীবন-জীবিকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলো। আবার গ্রামের তুলনায় শহরে আয়ের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অনেক ধীরে এগিয়েছে। আর এখন মূল্যস্ফীতি সেই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে আরও মন্থর করেছে। 

দাম বেড়ে যাওয়ায়, জরীপে অংশ নেয়া পরিবারগুলো ফেব্রুয়ারি মাস হতে খাদ্যতালিকায় থাকা মূল খাবার যেমন মাছ, মাংস, দুধ এবং ফল খাওয়া হয় খুব কমিয়ে দিয়েছে অথবা, বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলের বস্তিতে খাবারের মান ও পরিমাণ দুটোই বেশ কমেছে। মে মাসে অর্থাভাবে প্রতি পাঁচ পরিবারে একটি পরিবার অন্তত একবেলা খাদ্যগ্রহণ করেনি। দাম বেড়ে যাওয়ায়, জরীপে অংশ নেয়া পরিবারগুলো ফেব্রুয়ারি মাস হতে খাদ্যতালিকায় থাকা মূল খাবার যেমন মাছ, মাংস, দুধ এবং ফল খাওয়া হয় খুব কমিয়ে দিয়েছে অথবা, বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলের বস্তিতে খাবারের মান ও পরিমাণ দুটোই বেশ কমেছে। মে মাসে অর্থাভাবে প্রতি পাঁচ পরিবারে একটি পরিবার অন্তত একবেলা খাদ্যগ্রহণ করেনি। 

এদিকে জরীপে অংশ নেয়া অর্ধেকেরও বেশি পরিবার বিশ্বাস করে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনে সরকারের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও অনুশাসনের অভাব রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই চায়, সরকার সিন্ডিকেট এবং দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনুক। যদিও এদের এক-তৃতীয়াংশের পরামর্শ ছিলো মূল্যহ্রাস করা, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য।

গবেষণার এই পর্যায়ে উদ্বেগজনক কিছু দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা লক্ষ্যনীয়। প্রথমত, বিভিন্ন অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে আয়ের দিক থেকে অভিন্নতা দেখা গেছে। যারা দরিদ্র নয় এবং দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর আয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তুলনায় তীব্রভাবে কমেছে। কিন্তু সেই তুলনায় দারিদ্রতা থেকে পুনরুদ্ধারের গতি বেশ মন্থর, বিশেষত দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য। দ্বিতীয়ত, জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মহামারীর পর থেকে কর্মহীন। পরিশেষে, মে ২০২২’র সরকারী হিসাব অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি এবং দারিদ্রের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হওয়ায় "নতুন দরিদ্রের" হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.৫৪ শতাংশে।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ঠিক কোভিড-১৯’র ধাক্কা সামলানোর সময়টিতে মূল্যস্ফীতি ঘটায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। মহামারীর দুবছর পর, এখনও ১৫ শতাংশ পরিবারের আয় মহামারী-পূর্ব আয়ের সমান হয়নি। বাংলাদেশ এখন একটি নতুন ঝুঁকির সম্মুখীন। তা হলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পুষ্টি ও শিক্ষার যে লক্ষ্য নির্ধারিত, সেটি পূরণ না হওয়ার আশংকা। তিনি বলেন, করোনার পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। কিন্তু কাংক্ষিত কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। নতুন দরিদ্র মানুষের পরিস্থিতির উন্নয়ন হচ্ছে না। দরিদ্র মানুষ টিকে থাকার চেষ্টা করছে স্বশোষণ করে। খাওয়া কমিয়ে, কাজের সময় বাড়িয়ে এ প্রচেষ্টা চলছে।

মূল্যস্ফীতিজনিত বিপরীত ধাক্কা আরও বড় পরিসরে দীর্ঘ সংকট বয়ে আনছে উল্লেখ করে ড. মতিন বলেন, সরকারের উচিৎ এসময়ে অনানুষ্ঠানিক খাত ও দরিদ্রদের জন্য সবদিক ভেবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে ব্যবহার ও উৎপাদন সক্ষমতা উভয়েই বজায় থাকে। আমাদের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ ও লক্ষ্যকে ভুলে না গিয়ে সামাজিক নিরাপত্তাকে নতুনভাবে সাজানোটাও এখন প্রয়োজন।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!