ঢাকা: রক্ষক যদি ভক্ষক হয় বিচার পাবে কোথায়? নিষ্পত্তি হওয়া অভিযোগে পুনরায় চিঠি ইস্যু করে হয়রানি, অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে অর্থ দাবির অভিযোগ উঠেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে।
‘তোমার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চেয়ারম্যান (আইডিআরএ) বলেছে, তোমার বিষয়টি চেয়ারম্যান নিজে দেখছে, মন্ত্রণালয় হতে দেখছে, এটা আমার হাতে নাই, উপরে চলে গেছে, তুমি এখানে (আইডিআরএ) আসলে শুধু আমার সাথে দেখা করবা। অন্য কারো সাথে দেখা করবা না বলে প্রগ্রেসিভ লাইফ এর ভারপ্রাপ্ত সিইওকে ভয় দেখান কামরুল হাসান।
জানা যায়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দিনকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বানিয়ে দিব বলে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য (লাইফ) প্রগ্রেসিভ লাইফের সাবেক এক মাঠ নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন যিনি কামরুল হাসানের ঘনিষ্ঠ ও পূর্ব পরিচিত। তার মাধ্যমে জহির উদ্দিনকে ডেকে পাঠান।
হুমায়ুনের সামনে কামরুল হাসান ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘তোমার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চেয়ারম্যান (আইডিআরএ) বলেছে, তোমার বিষয়টি চেয়ারম্যান নিজে দেখছে, মন্ত্রণালয় হতে দেখছে, এটা আমার হাতে নাই, উপরে চলে গেছে’ তালুকদারের (সাবেক সিইও হোমল্যান্ড লাইফ) সাথে আমি ন্যাশনাল লাইফে চাকরি করেছিলাম, তালুকদার তোমাকে ইন্স্যুরেন্স খাত থেকে বের করে দিতে বলেছে। তোমার অনেক শত্রু, তুমি এখানে (আইডিআরএ) আসলে শুধু আমার সাথে দেখা করবা। অন্য কারো সাথে দেখা করবা না। হুমায়ূন তোমাকে ভাল ও দক্ষ বলেছে, তাই তোমাকে আমি তার মাধ্যমে ডেকেছি। তুমি আমাকে প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা করে দিবা। আমি তোমাকে এমডি করে দিব।
জহির উদ্দিন বলেন, ‘কামরুল হাসানকে প্রথমবারের মত দেখার কারণে আমি তাকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তাকে প্রথম দেখাতে মনে হয়েছিল, তিনি কোনো বিচক্ষণ ব্যক্তি নন। তখন আমি বিনয়ের সাথে বললাম, "আমি সততার সাথে আইন, বিধি ও পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্ত ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অজিৎ চন্দ্র অইচ (সদ্য বিদায়ী সিইও) এর নির্দেশে গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে কাজ করেছি। আমি নিরলসভাবে কাজ করছি বলে যড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি তো সিইও নই। আমাকে কেন কর্তৃপক্ষ এভাবে হয়রানি করবে, কাজ করলে আলোচনা/সমালোচনা হতে পারে, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সরেজমিন তদন্ত হয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে।’
ভুক্তভোগী আরো জানান, ‘কামরুল হাসান তার অফিস কক্ষে বলেন, চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করা নোট আমি ধরে রেখেছি, ছিঁড়ে ফেলব। এটা বলার পর তিনি তার ব্যক্তিগত সহকারীকে নথি তার কক্ষে আনতে বলেন এবং তার নিকট রাখেন, আমাকে এবং হুমায়ুনকে দেখান এবং বলতে থাকেন যে, আমার স্ত্রী ও মেয়ে বাহিরে থাকে তাদের টাকা পাঠাতে হয়। আমি খুব কম টাকা বেতন পাই তাই আমার চলে না। গাড়ির ২০০ লিটার জ্বালানি সরকার দেয়, তাতে চলে না, গুলশান যেতে আসতে শেষ হয়ে যায়। প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা এবং আমাকে নিয়ে বীমা দাবী পরিশোধে মিটিং করে প্রতিটি মিটিং-এ ২ লাখ করে সম্মানী দিবা।’
এছাড়া আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে যাতে পত্র জারি না হয়, এজন্য অদৃশ্য বোঝাপোড়া করতে হুমায়ুনকে বলেন। তখন হুমায়ুন বলেন, ‘সে আপনার কাছে এসেছে, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ও যড়যন্ত্র হচ্ছে, আপনাকে খুশী করবে। আপনি আর চিঠি দিবেন না, সে কোম্পানির চাকরি করে, তার চাকরির ক্ষতি হবে। আমাকে অন্য কোন কোম্পানিতে অথবা নতুন কোম্পানিতে এবং জহির সাহেবকে প্রগ্রেসিভে এমডি করে দিলে আপনার টাকার অভাব হবে না।’ আমি (জহির) বলি আমার এমডি হবার প্রয়োজন নেই। আমাকে অন্য কোম্পানিতে একটা ব্যবস্থা করে দিলে হবে। আমি জানি তিনি পারবেন না। তারপরও তাকে বড় করে বললাম।
আলোচনার এক পর্যায়ে কামরুল হাসান বলেন, হুমায়ুনের কোম্পানির নিকট পি.এফ ফান্ডসহ অন্যান্য পাওনা আছে, তার পাওনা দাও না কেন? আমি চিঠি ইস্যু করে দিচ্ছি, তুমি তার চেকটা আমাকে দিবা।
জহির উদ্দিন জানান, ‘সর্বশেষ গত ১১ জুন কামরুল হাসান আমাকে তার কক্ষে ডেকে পাঠান এবং আমি বাধ্য হয়ে যাই। তিনি (কামরুল) বলেন, ঈদের জন্য তুমি আমাকে ১ লাখ টাকা দিবা। তুমি তো কথা শুনো না, লাইন মত চল না, বেলাল ও সোহরাওয়ার্দী তোমার পরিচালক বজলুর রশিদ ও মিজান সাহেবের সাথে আমাকে মিটিং করতে বলেছে, তুমি টাকা না দিলে আমি তাদের সাথে কথা বলে তোমাকে কোম্পানি থেকে বের করব। তারা পাঁচ লাখ দিবে। তোমার কাছে ১ লাখ চেয়েছি, দিলে তাদের সাথে কথা বলব না।
জহির উদ্দিন বলেন, সেখান থেকে আমি নিরবে চলে আসি, তবে তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাহী পরিচালক (আইন) যুগ্নসচিবকে অবহিত করি এবং অসুস্থ হয়ে পড়ি। কোথা থেকে এবং কিভাবে টাকা দেব। তিনি বলেন, আমার পিতা অসুস্থ এবং জীবন মৃত্যু সন্ধিক্ষণে, তবে বিনয়ের সাথে কখনো উপেক্ষা করা অথবা মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে কখনো আমি অফিসে নাই, মেয়ে অসুস্থ, নোয়াখালী ইত্যাদি বলে সময় ক্ষেপণ করতে থাকি। এর পর আমি তার সাথে দেখা করি নাই।
এছাড়াও আইডিআরএ’র এই কর্মকর্তার (কামরুল হাসান) বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে যার ডকুমেন্টস সোনালী নিউজের কাছে আছে।
উল্লেখ, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সরেজমিন তদন্ত করে সত্যতা খুঁজে না পাওয়ার পরও কেন পেশাগত সুনাম নষ্ট এবং শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করছে, এসব হয়রানি থেকে প্রতিকার চেয়েছেন জহির উদ্দিন। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সর্বসম্মতিক্রমে মো. জহির উদ্দিনকে সর্বশেষ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি প্রদান করে। এর আগে তিনি এসইভিপি (সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট) পদ মর্যাদায় কোম্পানি সচিব হেড অব এইচ.আর, লিগ্যাল এবং উন্নয়ন প্রশাসন বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। উপযুক্ত পদসমূহ পরিচালনা পর্ষদ সর্বসম্মতিক্রমে প্রদান করে। কোম্পানি সচিব আইনের বিধান মতে একটি সংবিধিবদ্ধ পদ, কোন পদবী না। সবশেষ মুখ্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অজিৎ চন্দ্র অইচ বিদায় নেওয়ার পরে কোম্পানির বোর্ড জহির উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত সিইও নিয়োগ দেয়। তারপরও আইডিআরএ’র সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসানের অন্যায়, বে-আইনি আবদার, দাবি এবং দাবিকৃত অর্থ দিতে না পারায় নিষ্পত্তিকৃত একই বিষয়ে অব্যাহত ভাবে অন্যায় অত্যাচার করছে। যা বন্ধ করতে আইডিআরএসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে আইনানুগ হস্তক্ষেপ কামনা করেন জহির উদ্দিন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান সোনালী নিউজকে বলেন, কোম্পানিটি বিভিন্ন সমস্যায় রুগ্ন হয়ে পড়েছে। গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন চিঠি ইস্যু করে বিষয়গুলো সমাধানের জন্য কাজ করছি। তবে তাদের চেয়ারম্যান বিদেশে থাকে, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সিইও তার মনমত সব কাজ করছে। তার বিরুদ্ধে আমরা তদন্ত কমিটি করেছি যেগুলোর রিপোর্ট আসতে শুরু করেছে।
প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা দিলে এমডি বানিয়ে দিব এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সোনালী নিউজকে বলেন, অর্থ চাওয়ার বিষয়টি হতে পারে না। আমরা গ্রাহকের স্বার্থে কাজ করি। আমাদের বোর্ডের সিদ্ধান্তে সব কাজ সম্পন্ন হয়। কাজ করতে গেলে যে কেউ অভিযোগের শিকার হতে পারে তবে এর কোন ভিত্তি নেই।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। আর এমন কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।আর যে কোন কাজ আমার পর্যন্ত আসার আগে যদি কেউ অবৈধ লেনদেন করে সেখানে আমার কিছু করার নেই, যতক্ষণ না কেউ অভিযোগ করে। যদি কোন বিষয়ে অভিযোগ আসে তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।
সোনালীনিউজ/এএইচ/আইএ







































