• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

৭ নভেম্বরের দিকে তাকিয়ে পোশাক শ্রমিকেরা 


এমএস রুকুন, গাজীপুর নভেম্বর ৬, ২০২৩, ০২:০৬ পিএম
৭ নভেম্বরের দিকে তাকিয়ে পোশাক শ্রমিকেরা 

ফাইল ছবি

গাজীপুর: দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের প্রাণকেন্দ্র গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের শত-শত পোশাক শিল্প কারখানার হাজার-হাজার শ্রমিকেরা এই মূহুর্তে একটি অপেক্ষা ও অধির আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে।"ডেট লাইন ৭ নভেম্বর" কে ঘিরে। 

কেননা এ দিন সরকারের পোশাক শ্রমিকদের জন্য নিয়োজিত মজুরি বোর্ডে গার্মেন্টস শিল্প কারখানার মালিকেরা শ্রমিকদের জন্য তাদের সর্বশেষ বেতন বাড়ানোর আপডেট প্রস্তাব  তথ্য তুলে ধরার কথা রয়েছে।  একই সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের পক্ষে শ্রমিক ফেডারেল নেতারাও তাদের আপডেট বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব মজুরি বোর্ডে  তুলে ধরবেন। আর এ অবস্থা পর্যবেক্ষণে রেখেছে এ শিল্পাঞ্চলের লাখ-লাখ  শ্রমিককেরা। 

আজ সোমবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত  গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের কম পক্ষে ২০ টি পোশাক শিল্প কারখানার গেটে এবং কারখানার ভিতরে বিভিন্ন প্রতিনিধির মধ্যমে  সোনালী নিউজের সঙ্গে কথা হয় আন্দোলনরত শ্রমিক ও সাধারণ পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে।এ সময়ে পোশাক শ্রমিকরা জানিয়েছেন,আমরা আওয়ামী লীগ,বিএনপি,জামাত কোন দলের রাজনীতির উসকানি কথা শোনে আন্দোলন শুরু করি নাই।

 আমাদের দাবি বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আমাদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে আমরা ২৩ হাজার টাকা বেতন দাবি জানিয়েছি। কিন্তু মালিকরা আমাদের দাবির ধারে কাছে না গিয়ে উল্টো শ্রমিকদের উপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে হত্যা ও আহত করেছে। তাই এবার আমরা তাকিয়ে আছি এ পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর মজুরি বোর্ডে মালিকেররা কি ধরনের প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাবের উপর নির্বর করবে আন্দোলন কোন দিকে যাবে। 

এ ছাড়াও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের আরেকটি দাবির বিষয়ে ঘোষণা শোনতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আর এটা হলো গেল ৮ম দিন যাবত অতিবাহিত হওয়া বেতন বৃদ্ধির বিক্ষোভ আন্দোলন চলাকলীন সময়ে হঠকারী পুলিশের গুলিতে  যে দুই জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। তাদের পরিবারকে উপযোক্ত ক্ষতি পূরণ এবং এই হত্যা কান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার স্পষ্ট ঘোষণা। 

গাজীপুরের অন্যতম শিল্প কারখানা গ্রুপ ডিবিএল,গ্রুপের শ্রমিক সোহান মিয়া,পলমল গ্রুপের মিন্টু,রেনেসাঁ,গ্রুপের আতিকুর রহমান,উর্মি, গ্রুপের সজল এবং মেট্টো গ্রুপের সবুজ হোসেন বলেন, আমার মনে হচ্ছে, মালিকেরা বুদ্ধি মান হলে যৌক্তিক ভাবে ৭ নভেম্বর বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব মজুরি বোর্ডে উপস্থাপন করবেন।

 আর যদি রক্ত চোষা হয়। তাহলে অবাস্তব বেতন বাড়ানোর দাবি দিবেন। তারা বলেন, মালিক ও সরকারের উপর এখন নির্বর করছে পোশাক শ্রমিকরা আন্দোলনে যাবে কি না। 

স্বাধীন গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশরেনর কেন্দ্রীয় সভাপতি মো:শাকিল আহমেদ বলেন,আমরা আশাবাদী আগামী কাল যে মজুরি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে অবশ্যই শিল্পের স্বার্থে মালিকেররা বাস্তব সম্ভবত বেতন তুলে ধরবেন। তিনি আরও বলেন,আরেকটা বিষয় গেল কয়েক দিনের শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে যে শ্রমিক নিহত হয়েছে। 

তার জন্য শোক প্রকাশ করছি এবং যারা আহত হয়েছে তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি। তিনি বলেন,এই মহূর্তে এ বিষয়ও বড় হয়েছে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারেও মালিককেরা একটা ঘোষণা দিবেন শ্রমিকরা আশাবাদী।  

তিনি বলেন,নিহত শ্রমিক পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতি পূরণ এবং যারা আহত হয়েছে তাদেরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা কারখানা মালিকদের দায়িত্ব। এই শ্রমিক নেতা  আরও বলেন,আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অনেকেই পোশাক শ্রমিকদের ইন্ধন দিয়ে পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। আমরা এ ব্যাপারে শ্রমিকদের সচেতন করছি। 

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কমিটির সংগঠক শেখ রুবেল বলেন,আমরা আশাকরি যদি ৭ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গার্মেন্টস মালিকেরা সময় উপযোগী বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দিবেন। তাদের উপর নির্ভর করছে শ্রমিক অসন্তুষ্ট। 
তিনি আরও বলেন,সাধারণ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বেতন বাড়ানোর জন্য স্লোগান দিয়েছে।তারা কোন ভাংচুর জ্বালাও পুড়াও করেনি। যারা করেছে তারা বহিরাগত। তিনি বলেন,আমাদের সংগঠনের কোনো নেতৃবৃন্দ চলমান পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে জড়িত নয়।  

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলনের এ পরিস্থিতিতে জেলার পুলিশ প্রশাসনও অনেক বিপাকে পড়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মো:মাহবুব আলম বলেছেন,  আমরা শোনেছি আগামী কাল ৭ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তাই বলতে চাই,যদি বোর্ড সভা হয়। 

কালকে যেনো কোন পক্ষই এমন কোন দাবি উপস্থাপন করবেন না। যাতে করে আবারও শ্রমিক অসন্তুষ্ট ছড়িয়ে পড়ে যায়। কেননা আমরা বুঝতে পারছি। পোশাক শ্রমিকরা আপনাদের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি আরও বলেন,শ্রমিক অসন্তাষ সৃষ্টির পেছনে শ্রমিকদের ইন্ধন দেওয়ার একটি মহল রয়েছে। আর এ তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ ইন্ধনদাতাদের খুঁজছে।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন,৭ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে মালিকেরা তাদের স্বক্ষমতা অনুযায়ী যৌক্তিক বেতন বাড়ানোর দাবি উপস্থাপন করবেন। তিনি বলেন, শ্রম আইন অনুসারে এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরি ও বাৎসরিক মজুরি বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হচ্ছে। নতুন মজুরি নির্ধারিত হলে সেটিও মানা হবে। 

আমরা জানিয়েছি,আগামী ১ ডিসেম্বর থেকেই নতুন কাঠামোয় মজুরি দেওয়া হবে। ফলে সেই সময়ের আগেই এ ধরনের আন্দোলন, সহিংসতা ও ভাঙচুর অগ্রহণযোগ্য। এগুলো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ ও শিল্পের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা প্রয়োগ করবেন পোশাক মালিকরা।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো: ছিদ্দিকুর রহমান বলেন,শ্রমিকদের বেতন নিয়ে সরকার ওয়েজবোর্ড গঠন করেছে। ওয়েজবোর্ডে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি উভয়পক্ষই আছে।  উভয় পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে ওয়েজবোর্ড একটা মজুরি নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন,আমরা এখনো কোন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। শ্রমিকদের কিছু দিন ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আর কারো গুজবে কান দিয়ে আন্দোলনে নামবেন না। 

এ দিকে নিম্নতম মজুরি বোর্ড সূত্রে জানা গেছে,৭ নভেম্বর সভায় মালিক পক্ষের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা শুরু হবে। আলোচনায় সব পক্ষ একমত হলে বিষয়টি গেজেট আকারে প্রকাশ করার জন্য সরকারি ছাপাখানায় পাঠানো হবে। পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে কোনো পক্ষের আপত্তি থাকলে তা সুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে। পরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হলে চূড়ান্ত গ্যাজেট প্রকাশ করা হবে, যা পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর হবে।

উল্লেখ্য,দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরির নির্ধারণে ৭ নভেম্বর (মঙ্গলবার) মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ সভা হবে। সভায় মালিকপক্ষ শ্রমিকদের নতুন মজুরি প্রস্তাব উপস্থাপন করবে বলে জানা গেছে। এর আগে বোর্ডের চতুর্থ সভায় মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা প্রস্তাব করেছিল; যা পরবর্তীতে শ্রমিক পক্ষের আপত্তি ও শ্রমিক আন্দোলনের কারণে প্রত্যাহার করে নেয় মালিকপক্ষ। তবে নতুন প্রস্তাবে মালিক পক্ষ কত টাকা বাড়াবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি। অপরদিকে ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা মজুরির প্রস্তাবে অনড় শ্রমিক পক্ষ।

এমএস
 

Wordbridge School
Link copied!