• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

সরকার দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: লুৎফে সিদ্দিকী


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৯, ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম
সরকার দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: লুৎফে সিদ্দিকী

ঢাকা: সরকার দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।

রোববার (২৯ জুন) সকাল ১১টায় আগারগাঁও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডা ভবন মিলনায়তনে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং শিল্পসচিব মো. ওবায়দুর রহমান।

এছাড়াও অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা Pedro Jr. Bellen। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং আইএলও, বাংলাদেশের কারিগরি বিশেষজ্ঞ নবীন কর্ন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসএমই ফাউন্ডেশন প্রায় ২০ লক্ষাধিক উদ্যোক্তাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সেবা প্রদান করেছে, যাদের মধ্যে আড়াই লক্ষাধিক সরাসরি সুবিধাভোগী উদ্যোক্তা এবং ৫৫% নারী-উদ্যোক্তা। 

এসএমই ক্লাস্টার, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত, সারাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং নারী-উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে সহজ শর্তে এসএমই ফাউন্ডেশন ২০০৯ সালে ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ১০ কোটি টাকা প্রায় ১১ হাজার উদ্যোক্তার মাঝে বিতরণ করেছে যাদের অন্তত ২৫% নারী-উদ্যোক্তা।  

এসএমই ফাউন্ডেশন সারা দেশে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করছে, উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে, উদ্যোক্তাদের ব্যবসাকে প্রযুক্তি ও আইসিটি-বান্ধব করে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে, উদ্যোক্তাদের পণ্যের বিক্রয় ও বাজারজাতকরণ, প্রচার প্রসারে কাজ করছে, উদ্যোক্তাদেরকে নীতিগত সহায়তা প্রদান করছে, বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সাথে অ্যাডভোকেসি করছে। 

তবে ফাউন্ডেশনের আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার কারণে সকল চাহিদা শতভাগ পুরণ করা সম্ভব হচ্ছেনা, সারাদেশে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা যাচ্ছেনা। ঢাকার বাইরে ফাউন্ডেশনের কোনো শাখা না থাকায় পল্লী অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের সেবা আওতার বাইরে থাকছেন। এমতাবস্থায়, এসএমই ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের সদয় মনোযোগ ও সহায়তা দরকার। 

তিনি আরো বলেন, এসএমই খাতকে কার্যকরভাবে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। নীতিমালা সহজীকরণ ও উদ্যোক্তাবান্ধব করা, উদ্যোক্তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, সহজ অর্থায়নের ব্যবস্থা করা গেলে তবেই এ খাতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব।

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বরাবরই দেশের এসএমই খাত তথা উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আন্তর্জাতিক মহলেও আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা-বান্ধব হিসেবে সমধিক পরিচিত। 

আমি মনে করি, আমাদের যুবসমাজ যদি তাদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে এসএমই উদ্যোক্তা হতে পারে তার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, আমরা যদি সত্যিই একটি উদ্ভাবনী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনীতি চাই, তাহলে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে হবে। সেক্ষেত্রে এসএমই খাতকে শক্তিশালী করা সময়ের দাবি। 

এজন্য এসএমই ও বিনিয়োগ, এই দুই খাতকেই আমি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে দেখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবসের আজকের এই আয়োজন আমাদের মধ্যে একটি নতুন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি করবে, যেখান থেকে আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি।

শিল্পসচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়, এসএমই খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। আমরা চাই এসএমই ফাউন্ডেশনের জন্য স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে উঠুক, যেখানে থাকবে পণ্য প্রদর্শন কেন্দ্র, ইনকিউবেশন স্পেস ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এসএমই খাত দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সরকারকে তা শুধু বললেই হবেনা, কাজেও প্রমাণ করতে হবে। এই খাতকে এগিয়ে নিতে দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার। তাই ক্ষমতায় এলে কোন দল এসএমই খাতের উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেবে, আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলোকে তা স্পষ্ট করার আহবান জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে বিডা মিলনায়তনে এসএমই ফাউন্ডেশন ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দিনব্যাপী নারী-উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীতে ৭০জন নারী-উদ্যোক্তা তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করেন।

জাতিসংঘ বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে ৬০ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান দরকার। প্রতি ১০টি কাজের মধ্যে ৭টি হবে এমএসএমই খাতে। এছাড়া অর্থায়ন এমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। স্বল্পোন্নত দেশের শতকরা ৪১ ভাগ, মধ্য আয়ের দেশগুলোতে ৩০ ভাগ এবং উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ১৫ ভাগ উদ্যোক্তা ঋণ পেতে সমস্যায় পড়েন। বিশ্বের ব্যবসার শতকরা ৯০ ভাগ, কর্মসংস্থানের ৬০-৭০ ভাগ এবং জিডিপিতে ৫০ ভাগ অবদান এমএসএমই খাতের। 

বিশ্বজুড়ে কর্মক্ষম দরিদ্র, নারী, যুবক ও পিছিয়ে পড়ার জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উন্নয়নের মেরুদ- হিসেবে ভূমিকা রাখছে এমএসএমই খাত। তাই এমএসএমই খাতের উন্নয়নে সহায়ক নীতি, সহজ অর্থায়ন, দক্ষতা ও উদ্ভাবনে সহায়তা এবং শ্রম আইন বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে এমএসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্য বাজারজাতকরণ, প্রযুক্তি সহায়তা ও ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন আরো উন্নত করারও সুপারিশ জাতিসংঘের।

এআর

Wordbridge School
Link copied!