ঢাকা : দেশের আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ঢাকা), দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং কুইন্স ইউনিভার্সিটি।
গত বৃহস্পতিবার ইউজিসির পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ) ড. মো. সুলতান মাহমুদ ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সতর্কতা জারি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে কেউ অননুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়/ক্যাম্পাসে বা অননুমোদিত প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে এবং পরবর্তী সময়ে কোনো আইনগত সমস্যা সৃষ্টি হলে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা হলে তার দায় ইউজিসি নেবে না বলেও উল্লেখ করা হয়।
ইউজিসি বলেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্জিত ডিগ্রির মূল সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরকারী হবেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রপতি তথা আচার্য কর্র্তৃক নিয়োগকৃত ভাইস-চ্যান্সেলর এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য রয়েছেন ৭৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কমিশনের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এ সংক্রান্ত বিষয়ে সময়ে সময়ে তালিকা হালনাগাদ করা হয়। এ অবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শুধু সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ক্যাম্পাসে এবং অনুমোদিত প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার জন্য ইউজিসির ওয়েবসাইট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে তথ্য সংগ্রহপূর্বক ভর্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তারকা (*) চিহ্নসহ কমিশনের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন হালনাগাদ তথ্য আপলোড বা প্রদর্শন করা হয়।
এরপরও কেউ কোনো অননুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাস, অননুমোদিত প্রোগ্রামে বা অনুমোদিত প্রোগ্রামে কমিশন নির্ধারিত আসন সংখ্যার বিপরীতে অতিরিক্ত আসনে ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে এবং পরবর্তী সময়ে কোনো আইনগত সমস্যা সৃষ্টি হলে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষিত অথবা প্রোগ্রাম বাতিল হলে বা অনুমোদিত আসন সংখ্যার অধিক আসনে ভর্তি হয়ে সনদ বাতিল হলে তার দায়দায়িত্ব ইউজিসির ওপর বর্তাবে না।
অবৈধ ক্যাম্পাস ও অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে ইউজিসির মূল্যায়ন হলো
১. ইবাইস ইউনিভার্সিটি : সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রমের আর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ক্যাম্পাস ও ঠিকানা এবং চ্যান্সেলর তথা রাষ্ট্রপতি কর্র্তৃক নিয়োগকৃত ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই তথা বৈধ কোনো কর্র্তৃপক্ষ নেই। এছাড়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং আদালতে মামলা রয়েছে। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ইবাইস ইউনিভার্সিটির অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা ও এর ফলাফল এবং প্রদত্ত অ্যাকাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।
২. আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি : বিশ্ববিদ্যালয়টির সাময়িক অনুমতিপত্র মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী কার্যক্রমের আর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদিত কোনো ক্যাম্পাস ও ঠিকানা এবং চ্যান্সেলর তথা রাষ্ট্রপতি কর্র্তৃক নিয়োগকৃত ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই, তথা বৈধ কোনো কর্র্তৃপক্ষ নেই। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা ও তার ফলাফল এবং প্রদত্ত অ্যাকাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।
৩. দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা : বিশ্ববিদ্যালয়টির সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রমের আর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চ্যান্সেলর তথা রাষ্ট্রপতি কর্র্তৃক নিয়োগকৃত ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই তথা বৈধ কোনো কর্র্তৃপক্ষ নেই। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা ও এর ফলাফল এবং প্রদত্ত অ্যাকাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।
৪. ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ : নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাসহ সব কার্যক্রম স্থানান্তরে ব্যর্থ হওয়ায় কমিশন কর্তৃক পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রয়েছে এবং তা এখনো বহাল রয়েছে। তবে ওই তারিখের আগে চলমান কোর্সে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে।
৫. সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ঢাকা) : বিশ্ববিদ্যালয়টির সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে রাষ্ট্রপতি বা চ্যান্সেলর কর্র্তৃক নিয়োগকৃত ভাইস চ্যান্সেলর নেই। ট্রেজারার নিয়োগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্র্তৃক মনোনীত অডিট ফার্ম দিয়ে অডিট করা হয়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন সংক্রান্ত জটিলতা, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও মামলা চলমান রয়েছে। এ কারণে কমিশন কর্র্তৃক পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রয়েছে এবং তা এখনো বহাল আছে। তবে এ তারিখের আগে চলমান কোর্সে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে।
৬. সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ : এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক, অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক বিষয়েও তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে।
৭. দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় : আদালতের আদেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর সব আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করা হয়েছে।
৮. কুইন্স ইউনিভার্সিটি : ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর সরকার কর্র্তৃক বন্ধ করা হয়। পরবর্তী সময়ে বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন শর্তসাপেক্ষে এক বছরের জন্য প্রত্যাহার করা হয়েছিল। শর্তটি হলোÑ এক বছরের মধ্যে কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্পিত শিক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত সব শর্ত পূরণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ যদি সব শর্ত পূরণ করতে সক্ষম না হয়, তবে শিক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত এ সাময়িক অনুমতি তাৎক্ষণিক বাতিল হবে। শর্তানুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কুইন্স ইউনিভার্সিটি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে সমর্থ হয়নি।
এমটিআই







































