• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কালের সাক্ষী হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ


চাঁদপুর প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১, ০১:২৮ পিএম
কালের সাক্ষী হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ

চাঁদপুর : বাংলায় মুসলমানদের আগমন ও মুসলিম শাসন শুরু শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বহুমাত্রিক পরিবর্তন আনে। স্থানীয় মুসলমানদের সঙ্গে বহিরাগত মুসলমান তথা আরব, পারস্য ও আফগানদের জীবন উপাদানের সমন্বয়ের ফলে সব ক্ষেত্রে ভারতীয় মুসলিম নামে পরিবর্তনের সূচনা হয়।

বিশেষ করে, সে সময় মুসলমানরা ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে কাঠামো পরিকল্পনার সঙ্গে যে নির্মাণশৈলী ফুটিয়ে তুলেছেন, তাতে ভারতীয়দের কোনো পরিচয় ছিল না। তারা প্রাক-ইসলামী যুগে ব্যবহূত রোমান-বাইজেন্টীয় ও পারসিক থেকে এমনভাবে গ্রহণ করেন-যে সারা বিশ্বে এগুলো মুসলিম ইমারতের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। মধ্যযুগে ধর্মীয় স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে মুসলমানদের নির্মিত মসজিদগুলো অন্যতম। এমন একটি অনন্য মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শন হলো চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ।

এটি চাঁদপুর জেলা সদর থেকে ২০ কি.মি পূর্বে হাজীগঞ্জ বাজারে অবস্থিত। বাংলা ১১৭৫ থেকে ১২০০ সালের মধ্যে হজরত মকিমউদ্দিন (রহ.) ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে আরব থেকে এ এলাকায় আগমন করেছিলেন। তিনি সপরিবারে বর্তমান বড় মসজিদের মেহরাবসংলগ্ন স্থান, যেখানে একটু উঁচু ভূমি বিদ্যমান ছিল, সেখানে আস্তানা তৈরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসতি স্থাপন করেন। মূলত এ এলাকায় হাজি মকিমউদ্দিন (রহ.) ইসলামধর্ম প্রচারের মাধ্যমে ইসলামের আবাদ করেন।

তারই বংশের শেষ পুরুষ হজরত মনিরুদ্দিন হাজি ওরফে মনাই হাজির (রহ.) দৌহিত্র আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) বাংলা ১৩২৫ থেকে ১৩৩০ সালের দিকে বড় মসজিদের মেহরাব বা তৎসংলগ্ন স্থানজুড়ে প্রথমে একচালা খড়ের ইবাদতখানা, অতঃপর খড় ও গোলপাতা দিয়ে তৈরি দোচালা মসজিদ নির্মাণ করেন। যা পরবর্তী সময়ে টিনের দোচালা মসজিদ থেকে পাকা মসজিদ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের ১৭ আশ্বিন আহমাদ আলী পাটওয়ারীর (রহ.) ইচ্ছায় মাওলানা আবুল ফারাহ জৈনপুরীর (রহ.) হাতে পাকা মসজিদের ভিত্তিস্থাপন করা হয়।

হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ এ অঞ্চলের অন্যতম মুসলিম নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। মসজিদটি নির্মাণকালে স্থাপত্যশিল্পের যে নির্মাণশৈলী দেওয়া হয়েছে, তা যেন স্থাপত্যশিল্পেরই বিশুদ্ধ ব্যাকরণ। মসজিদের বিভিন্ন অংশে যে কারুকাজ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা কালের সাক্ষ্য বহন করছে। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ তিন অংশে নির্মিত হয়েছে। প্রথম অংশ চার হাজার ৭৮৪ বর্গফুট, মাঝের অংশ ১৩ হাজার ছয় বর্গফুট এবং তৃতীয় অংশে এক হাজার ৬১৫ বর্গফুট।

সর্বমোট ২৮ হাজার ৪০৫ বর্গফুট আয়তনের ওই মসজিদের প্রথম অংশে হজরত মাওলানা আবুল ফারাহ জৈনপুরী (রহ.) মাচার ওপর বসেন, তাঁর পবিত্র হাতে চুন-সুরকির মসলা কেটে কেটে মেহরাবসংলগ্ন দেয়াল ঘুরিয়ে মসজিদের প্রথম অংশের ওপরের দিকে ‘সুরা ইয়াছিন’ ও ‘সুরা জুমআ’ লিপিবদ্ধ করেন। বর্তমান সময়ে সংস্কারকালে তা উঠিয়ে মসজিদের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ওই মসজিদের অনন্য সুন্দর মেহরাবটি কাচের ঝাড়ের টুকরো নিখুঁতভাবে কেটে কেটে মনোরম ফুলের ঝাড়ের মতো আকর্ষণীয় নকশায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। মাঝের অংশটি ৭৭টি আকর্ষণীয় পিলার ও ঝিনুকের মোজাইক দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। তৃতীয় অংশটিতে রয়েছে তিনটি বিশাল গম্বুজসহ আকর্ষণীয় বিশাল সুউচ্চ মিনার। যা মসজিদটিকে আলাদা বিশেষত্ব দান করেছে।

১৯৫৩ সালে ১২৮ ফুট উঁচু এই মিনারটি তৈরি হয়েছিল। সুউচ্চ এই মিনারটিরও আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর তা হলো মসজিদের প্রধান প্রবেশদ্বারের ওপর এত উঁচু মিনারের উপস্থিতি সেকালের নির্মাণ বিষয়টিকে ভাবিয়ে তোলে। মিনারের উঁচু প্ল্যাটফর্মে বহু মুসুল্লি ও পর্যটক উঠে হাজীগঞ্জের চারপাশের দৃশ্য অবলোকন করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!