• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য দেশটা স্বাধীন হয়েছিল’


নিউজ ডেস্ক অক্টোবর ২১, ২০২১, ০৬:১২ পিএম
‘বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য দেশটা স্বাধীন হয়েছিল’

ঢাকা: বাংলাদেশের বেতন স্কেলের মত এত বৈষম্যমূলক বেতন স্কেল পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে নাই। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী, দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারী, প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা, উচ্চতর কর্মকর্তা এইসব নামগুলোইতো বিশাল অপমানজনক। তার উপর আছে বেতনের বিশাল ফারাক। একটা স্তর থেকে অন্য স্তরের বেতনের একটা বড় জাম্প। যত উচ্চ স্তরে যাব এই জাম্পগুলো পরিমানও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। শুধুই বেতনের জাম্প না একই সাথে সুবিধারও জাম্প আছে।অথচ বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য দেশটা স্বাধীন হয়েছিল। বেতন বৈষম্য কেন হবে? 

আরও পড়ুন: অর্ধমাসেই বেতন শেষ, ধার-দেনায় সংসার চলে সরকারি কর্মচারীদের

ফেসবুক থেকে নেয়া।

আরও পড়ুন: নতুন পে স্কেলের দাবিতে সারাদেশে ডাকা মানববন্ধন স্থগিত

বেতন কি কাজের গুরুত্বের উপর এবং পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে হওয়া উচিত না। সিটি কর্পোরেশনের অধীনে যারা ময়লা পরিষ্কার করে তাদের কাজ কি কম গুরুত্বের? ১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে নিউ ইয়র্ক শহরের স্যানিটেশন কর্মীরা ধর্মঘট ডাকে। শহরের মেয়র তাদের দাবিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের সাথে কোন রকম আলোচনায় বসতে অস্বীকার করেন।  স্যানিটেশন কর্মীরা তখন বাধ্য হয়ে ধর্মঘট অব্যাহত রাখে। তাতে শহরের ময়লা আবর্জনার স্তুপের উচ্চতা বাড়তে থাকে। কিন্তু সাংবাদিকরাও মেয়রের পক্ষে যায়। ফলে মেয়র তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। কিন্তু  স্যানিটেশন কর্মীরাও নাছোড় বান্দা। ময়লার স্তুপ যতই বাড়ে শহরে দুর্গন্ধের পরিমানও বাড়তে থাকে। কয়েকদিনের মধ্যেই নিউ  ইয়র্ক শহর হয়ে উঠে পৃথিবীতে সবচেয়ে দুর্গন্ধময় ময়লার ভাগাড়। এক সময় মেয়র তাদের দাবি মানতে বাধ্য হয়। তখন মানুষ বুঝতে পারে  স্যানিটেশন কর্মীদের কাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। 

আরও পড়ুন: স্মরণকালের কঠিন সময়ে স্বল্প আয়ের মানুষজন

কৃষকদের কথা ভাবুন।  তারা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ফসল ফলায় বলে খাবার টেবিলে আমরা খাবার পাই। বিনিময়ে তাদের জীবন মানের কথা ভাবুন। মুদ্দা কথা সমাজের প্রত্যেকটি কর্মের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই চাকুরীতে বেতনের এইরকম আকাশ পাতালের পার্থক্য থাকা উচিত নয়। চাকুরীতে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ইত্যাদিতে বিভাজনও কাম্য নয়। 

আরও পড়ুন: বার্ষিক পরীক্ষা পেছানো নিয়ে যা বলল মাউশি

আমি যখন প্রথম ইতালিতে পড়তে যাই তখন একটা অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা হয়। যেই ইনস্টিটিউটে পড়তাম সেখানকার স্টাফরা ৫ টার মধ্যে সবাই চলে যেত। আর ঠিক তখনি আসতো একদল পরিচ্ছন্ন কর্মী। তারা কাজ শুরুর আগে সবাই সেন্টারের ক্যাফেটেরিয়াতে বসে চা কফি খেত আর একত্রিত হতো। আমি দেখতাম তখন সেন্টারের ডিরেক্টর প্রতিদিন ঠিক এইসময় আসতেন এবং সেই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সাথে এক টেবিলে বসে গল্প করতেন। বিষয়টা আমার কাছে প্রথম প্রথম খুবই অদ্ভুত ঠেকেছিল। কিন্তু একই সাথে আমি বুজতে পারছিলাম এই মানুষগুলো কত ভালো। কত সভ্য। সেন্টারের পরিচালক হয়েও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সাথে একদম বন্ধুর মত বসে একসাথে চা কফি খেতে খেতে আড্ডা। দারুন লাগতো। তাই আমিও প্রতিদিন এইটা দেখার জন্য ওখানে যেতাম। আর আমাদের দেশে? বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের কেউ একজন ভিসি বা অন্য কোন বড় পদ পেয়ে গেলে শিক্ষকদের সাথেই আচরণের কি ফারাক! 

আরও পড়ুন: ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার নম্বর বিন্যাস যেভাবে

ওই পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সবাই গাড়ি চালিয়ে কাজে আসে। অর্থাৎ পদে এবং কাজে পার্থক্য থাকলেও বেতনে তেমন ফারাক নাই। সকলেই তাদের বেতনে ন্যূনতম স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে পারে। আর ওরকম কোন কর্মের নামই তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণী হতে পারে না। আমাদের এখানে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা পর্যন্ত রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। কি লজ্জার। যারা এইসব প্রাথমিক বা বিভাজন বানিয়েছে আমার মতে তারাই হলো আসল তৃতীয় শ্রেণীর মানুষ। আমাদের উচিত এই বৈষম্যগুলো কমিয়ে দেশকে আরো সভ্য ব্যানানোর পথে হাঁটা। এইটা কি খুব বেশি বড় চাওয়া?

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!