• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ

বাহকে বাহকে বিয়ে বন্ধই প্রতিরোধের উপায়


নিউজ ডেস্ক মে ৮, ২০২২, ০১:০১ পিএম
বাহকে বাহকে বিয়ে বন্ধই প্রতিরোধের উপায়

ঢাকা : বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস রোববার (৮ মে)। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়।

থ্যালাসেমিয়া হলো একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এসব রোগী ছোট বয়স থেকেই রক্তস্বল্পতায় ভোগে। এদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা যেহেতু তাদের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত তৈরি করতে পারে না, তাই অন্যের রক্ত ট্রান্সফিউশন নিয়ে তাদের জীবন চালাতে হয়।

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১৪ জনে একজনের থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে, আর ৭০ হাজারের বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর ছয় হাজার শিশু বিভিন্ন রকমের থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার সাত শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন করে সাত হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা প্রতি মাসে এক থেকে দুই ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। চিকিৎসা না করা হলে এ রোগীরা রক্তশূন্যতায় মারা যায়।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব। এ লক্ষ্যে ‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস’ পালন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জিনবাহিত রোগ, যা বাহকের মাধ্যমে ছড়ায়। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলে তা জিনগত কারণে সন্তানদের মধ্যে বিস্তার ঘটাতে পারে। এ জন্য পুরুষ বা মহিলা যে কেউ এ রোগের বাহক কি-না তা বিবাহপূর্ব পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা জরুরি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতা জনিত দুরারোগ্য ব্যাধি। এ রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশে এই রোগের জিনবাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। বাহকে-বাহকে বিয়ে হলে দম্পতির সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়েরা তাদের বিবাহের পূর্বে এই রোগের জিনবাহক কিনা তা জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

বাণীতে তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি থ্যালাসেমিয়া এবং বাহকে-বাহকে বিয়ে প্রতিরোধের জন্য দেশের বাড়িতে বাড়িতে, মহল্লায় মহল্লায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সরকারের পাশাপাশি সব পেশাজীবী ব্যক্তি ও সংগঠন,  স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, গণমাধ্যম, অভিভাবকসহ সচেতন নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রতি বছর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নিচ্ছে ৭-১০ হাজার শিশু : দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই বলে জানায় বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৬০ হাজারের মতো থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু-কিশোর রয়েছে।

বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (বিআরএফ) ২০১৭ সালে প্রকাশিত ‘থ্যালাসেমিয়া ইন সাউথ এশিয়া : ক্লিনিক্যাল লেশনস লার্ন্ট ফ্রম বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১০-১২ শতাংশ মানুষ এ রোগের বাহক; অর্থাৎ প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি মানুষ তাদের অজান্তে এ রোগের বাহক। একই গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে কমপক্ষে ৬০-৭০ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু-কিশোর রয়েছে। শুধু অসচেতনতার কারণে রোগটি নিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৭-১০ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। সে হিসাবে দেশে প্রতি ১৪ জনে একজনের থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে।

বেশি রোগী চট্টগ্রাম, বরিশাল, নোয়াখালী, খুলনায় : ডা. কাজী মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম জানান, এই উপমহাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের কিছু অঞ্চল আছে। যেমনÑ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ডে এই রোগ বেশি। আর বাংলাদেশের ভেতর থ্যালাসেমিয়া রোগীর কিছু অঞ্চল আছে। যেমনÑ কুমিল্লা ও নোয়াখালী মিলে একটা বেল্ট, উত্তরবঙ্গ একটি বেল্ট। এই দুই বেল্টে থ্যালাসেমিয়া রোগী বেশি।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে রোগী বেশি চট্টগ্রাম, বরিশাল, নোয়াখালী, খুলনায়।

বাহকে বাহকে বিয়ে বন্ধই প্রতিরোধের উপায় : ডা. কাজী মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, সমাজের মধ্যে জানাতে হবে যে এই রোগটা উত্তরাধিকারসূত্রে পাই। বাবা-মায়ের কাছে থেকে সন্তানের মধ্যে আসে। দুজনই এই রোগের বাহক হলে সন্তান এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাবা-মা জানেই না তারা বাহক। দুজনই বাহক হওয়ার কারণে সন্তান রোগী হয়ে জন্মাচ্ছে। এমনকি নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হলেও এই রোগের আশঙ্কা থাকে। কাজেই বিয়ের আগে যদি তাদের স্ক্রিনিং করে শনাক্ত করা যায় তাহলে ঠেকানো সম্ভব। বাহক বাহক বিয়ে প্রতিরোধ করতে হবেÑ তৃণমূলে এমন সচেতনতা তৈরি করাই একমাত্র উপায়।

এই চিকিৎসক বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা খুব জরুরি। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে দুজন বাহকের মধ্যে বিয়ে এড়াতে পারলে থ্যালাসেমিয়ার হার কমানো সম্ভব। আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে নিরুৎসাহিত করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে সন্তান গর্ভে আসার পর চিকিৎসকের পরামর্শে বিশেষ উপায়ে গর্ভস্থ শিশুর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করা যায়।

উপসর্গ ও চিকিৎসা : চিকিৎসকরা জানান, থ্যালাসেমিয়ার উপসর্গগুলো মূলত রক্তস্বল্পতাজনিত উপসর্গ। যেমন ক্লান্তি, অবসাদ, শ্বাসকষ্ট, ফ্যাকাশে ত্বক ইত্যাদি। রক্ত অধিক হারে ভেঙে যায় বলে জন্ডিস হয়ে ত্বক হলুদ হয়ে যায়। প্রস্রাবও হলুদ হতে পারে। প্লীহা বড় হয়ে যায়। যকৃৎও বড় হয়ে যেতে পারে। অস্থির ঘনত্ব কমে যেতে পারে। নাকের হাড় দেবে যায়, মুখের গড়নে পরিবর্তন আসে। শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। দিনে দিনে জটিলতা বাড়তে থাকে।

ডা. কাজী মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসারও আছে প্রতিক্রিয়া। এসব রোগীকে ঘন ঘন রক্ত দিতে হয় বলে শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এই বাড়তি আয়রন জমা হয় হৃদ্যন্ত্র, যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয়ে। অতিরিক্ত আয়রন জমায় অঙ্গগুলো বিকল হতে শুরু করে। তাছাড়া বারবার রক্ত পরিসঞ্চালনের কারণে রোগীর রক্তবাহিত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। থ্যালাসেমিয়া শনাক্তে রক্তের হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস পরীক্ষা করা হয়। রক্তের রুটিন পরীক্ষা (সিবিসি) থেকে থ্যালাসেমিয়া সন্দেহ করা যেতে পারে। এছাড়া ডিএনএ পরীক্ষা করেও এই রোগ ধরা যায়।

এই চিকিৎসক জানান, রক্ত পরিসঞ্চালনই থ্যালাসেমিয়ার মূল চিকিৎসা। শরীরে আয়রন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ওষুধ দিয়ে তা কমাতে হয়। প্লীহা বড় হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার করে তা কেটে ফেলতে হয়। এতে রক্ত গ্রহণের হার কিছুটা কমে আসে। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হলো এ রোগের স্থায়ী চিকিৎসা। তবে তা খুবই জটিল ও ব্যয়বহুল।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!