• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কামান্নায় একদিনে ২৭ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা


ঝিনাইদহ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৫, ২০১৬, ০৫:০৮ পিএম
কামান্নায় একদিনে ২৭ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা

ঝিনাইদহ : ঐতিহাসিক ২৬ নভেম্বর। একাত্তরের এই দিনে ঝিনাইদহের শৈলকুপার কামান্না গ্রামে পাক হানাদার বাহিনী অতর্কিত আক্রমণে শহীদ হন ২৭ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা হলেন- মোমিন, কাদের, শহিদুল, সলেমান, রাজ্জাক, ওয়াহেদ, রিয়াদ, আলমগীর, মতালেব, আলী হোসেন, শরিফুল, আনিচুর, আলিমুজ্জামান, তাজুল, মনিরুজ্জামান, নাসিম, রাজ্জাক-২, কওছার, মালেক, আজিজ, আকবর, সেলিম, হোসেন, রাশেদ, গোলজার, অধীর ও গৌর। দেশ স্বাধীনের পর থেকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনটিকে কামান্না দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। প্রতিবছর গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় দিনটিকে স্মরণ করে সর্বস্তরের মানুষ। শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শৈলকুপাবাসী।

উপজেলা সদর হতে ১৬ কিলোমিটার দূরে অজোপাড়া গাঁ ‘কামান্না’। অবস্থানগত সুবিধার কারণে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গ্রামটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ঘাটি গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ নভেম্বর রাতে ৪২ জনের একদল চৌকস রণকৌশলী মুক্তিপাগল যোদ্ধা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক অবস্থান নেন কামান্নার মাধবচন্দ্রের পরিত্যাক্ত বাড়িতে। কামান্নায় অবস্থান করা ৪২ মুক্তিযোদ্ধার অধিকাংশ বাড়ি পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর থানা এলাকায় বাকিদের শৈলকুপায়। শৈলকুপার আলমগীর ও শ্রীপুরের আবু বকর ছিলেন তাদের দল নায়ক। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর গোপন থাকে না। স্থানীয় রাজাকারদের তৎপরতায় খবরটি পৌঁছে যায় ঝিনাইদহ ও মাগুরার হানাদার ক্যাম্পে। হানাদাররা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ নভেম্বর রাতের শেষ প্রহরে চারিদিক থেকে ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঘিরে ফেলে কামান্নার অস্থায়ী মুক্তিযোদ্ধা ঘাটিটি। সময় না দিয়ে হঠাৎ করেই সার্চ লাইট নিক্ষেপ করে বৃষ্টির মত গুলি চালানো শুরু করে। আকস্মিক আক্রমণে ঘুমন্ত মুক্তিযোদ্ধারা হকচকিয়ে যান। এক পর্যায়ে নিজেদের সামলে নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।  হানাদারদের ভারি অস্ত্রের কাছে সামান্য কিছু স্টেনগান- মেশিনগান নিয়েও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যান ২৭ নভেম্বর ভোর রাত পর্যন্ত। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের আর শেষ রক্ষা হয়নি। এদিন সম্মুখ সমরে শহীদ হন ২৭ বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের লাশের উপর পৈশাচিক উন্মাদনা করতে করতে এলাকা ছাড়ে হানাদাররা। যাওয়ার সময় গ্রামটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।

ওইদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বৃদ্ধা ছামেনা বেগমের কাছে জানা যায়, তিনি একটি গর্তের ভেতর রবিশেট, জাহাঙ্গীরসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে রেখে উপরে খড় বিছিয়ে লুকিয়ে রাখেন। পাকসেনারা চলে গেলে নদী পার করে নিরাপদে আলফাপুরের দিকে চলে যেতে সাহায্য করেন। যুদ্ধে আহত এক মুক্তিযোদ্ধাকে পানি খাওয়াতে গেলে বৃদ্ধ রঙ্গ বিবি ও ফণিভূষন কুন্ডু নামের দুই গ্রামবাসীও নরখাদকদের হত্যার শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও হানাদারদের রাতভর বিক্ষিপ্ত এলোপাতারি গুলিতে কয়েকজন গ্রামবাসী গুরুতর আহত হন। পরদিন সকালে আশ-পাশের গ্রামগুলো থেকে হাজার হাজার জনতা এসে ভীড় জমায় কামান্নার অস্থায়ী মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটিতে, যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ২৭ বীর মুক্তিযোদ্ধার নিথর দেহগুলো। গ্রামবাসী সেসব মৃতদেহ এক স্থানে জড়ো করে। কিন্তু হানাদারদের পাল্টা আক্রমণের ভয়ে তরিঘরি করে কামান্নার হাই স্কুলের খেলার মাঠের উত্তর পাশে কুমার নদের ধারে ৬ জন করে দুটি ও ৫ জন করে ৩টি গণকবরে ২৭ বীর সন্তানকে কবর দেন।

স্বাধীনতার ৩৮ বছরের মাথায় মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবরগুলো ঘেঁষে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেছে গ্রামবাসী। মিনারের গয়ে লেখা আছে ২৭ শহীদের নাম।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!